বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) তৃতীয় আসরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্ব। বোলিং করতে পারবেন না, ব্যাটিং করতে পারবেন না। স্রেফ অধিনায়কত্বের জোরে তিনি দলে। শুধু কি তাই, নিজে থেকেও সরে যাওয়ার উপায় নেই। মালিকপক্ষই যে চায়, তিনি শুধু অধিনায়ক হিসেবেই মাঠে দাঁড়িয়ে থাকুন। তাতেই দল জিতে যাবে।
শেষ পর্যন্ত হলোও তাই। মাশরাফি বিন মর্তুজার চৌকস নেতৃত্বে মঙ্গলবার শ্বাসরূদ্ধকর ফাইনালে বরিশাল বুলসকে তিন উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তবুও এবারের বিপিএলের সেরা একাদশের নেতৃত্বে রাখা হয়নি মাশরাফিকে। পরিবর্তে বরিশাল বুলসের নেতৃত্বে থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বেছে নেয়া হয়েছে অধিনায়ক হিসেবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে অধিনায়ক করা না হলেও মাহমুদুল্লাহর নেতৃত্বে দলে রাখা হয়েছে মাশরাফিকে। টুর্নামেন্টজুড়ে কিন্তু বেশ কয়েকটি ম্যাচে বোলিং এবং ব্যাটিং- কিছুই করতে পারেননি তিনি। দুর্দান্ত নেতৃত্ব এবং একটি ম্যাচে অর্ধশত ছাড়া বলার মত কোন পারফরমেন্সও নেই তার। তবুও তিনি সেরা একাদশে।
ক্রিকেটের বিখ্যাত ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো বাছাই করেছে এবারের বিপিএলের সেরা একাদশ। সেই একাদশেরই নেতা বানানো হলো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। ফাইনালের পরই ক্রিকইনফো এবারের আসরের সেরা একাদশ ঘোষণা করেছে। অধিনায়ক ছাড়াও এই একাদশে বেশ কিছু বিস্ময় উপহার দিয়েছে তারা। দলে রাখা হয়েছে স্পট ফিক্সিংয়ের কারণে নিষেধাজ্ঞার শাস্তি কাটিয়ে ফেরা পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমিরকে। তবে মাত্র ৯ ম্যাচ খেলে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি কেভন কুপারের জায়গা হয়নি এই তালিকায়। এছাড়াও ব্যাটে বলে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করেও অবহেলিত রয়েছেন শ্রীলঙ্কান থিসারা পেরেরা।
স্বাভাবিকভাবেই চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চারজন ক্রিকেটারকে জায়গা করে দেয়া হয়েছে এই একাদশে। মাশরাফির সঙ্গে রয়েছেন এবারের বিপিএলের সেরা প্রাপ্তি তরুণ উদীয়মান পেসার আবু হায়দার রনি। আরও আছেন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করা পাকিস্তানি আসহার জাইদি এবং উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস।
বরিশাল বুলস থেকে সুযোগ পেয়েছেন দু’জন। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে রয়েছেন টুর্নামেন্টের একমাত্র হ্যাটট্রিক করা আল-আমিন হোসেন। এছাড়া দু’জন করে সুযোগ পেয়েছেন চিটাগাং ভাইকিংস এবং রংপুর রাইডার্স থেকেও। চিটাগাংয়ের অধিনায়ক ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালেল সঙ্গে রয়েছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। আর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জহুরুল ইসলাম রংপুরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এছাড়া ঢাকা ডাইনামাইটসের অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা রয়েছেন একাদশে। তবে সিলেট সুপার স্টারসের কোন সদস্যের জায়গা হয়নি এই একাদশে।
ক্রিকইনফোর একাদশে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান এবং চারজন বিশেষজ্ঞ বোলার রয়েছেন এবং ভারসাম্য রক্ষার জন্য দু’জন অলরাউন্ডারকে অন্তর্ভুক্ত করেছে তারা। ওপেনার হিসেবে রাখা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম সেরা জুটি তামিম এবং ইমরুলকে। ব্যাটিং অর্ডারে এরপর থাকবেন কুমার সাঙ্গাকারা (উইকেটরক্ষকও থাকবেন তিনি), জহুরুল ইসলাম অমি এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
এরপর পাকিস্তানি আসহার জাইদির পর নামবেন সাকিব আল হাসান। স্পিন আক্রমনের নেতৃত্ব দিবেন সাকিব। তাকে সঙ্গ দেবেন জাইদি। এছাড়া দলে রয়েছেন চারজন পেসার মাশরাফি, আমির, আল-আমিন এবং রনি।
ক্রিকইনফোর বিপিএল সেরা একাদশ :
তামিম ইকবাল (চিটাগাং ভাইকিংস), ইমরুল কায়েস (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স), কুমার সাঙ্গাকারা (ঢাকা ডাইনামাইটস), জহুরুল ইসলাম (রংপুর রাইডার্স), মাহমুদুল্লাহ (অধিনায়ক, বরিশাল বুলস), আসহার জাইদি (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স), সাকিব আল হাসান (রংপুর রাইডার্স), মাশরাফি বিন মুর্তজা (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স), মোহাম্মদ আমির (চিটাগাং ভাইকিংস), আবু হায়দার রনি (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) এবং আল-আমিন হোসেন (বরিশাল বুলস)।