ঢাকা ০১:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অসুস্থতায় একমাত্র ভরসা ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৪:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২২৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোদ–ঝড়–বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে রাতবিরাতেও চলে তার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা। গ্রামের যে কোনো প্রান্ত থেকে ডাক পেলেই মুহূর্তেই সেখানে ছুটে যান ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা’।

রোগীকে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে তিনি পৌঁছে দেন হাসপাতালে। কখনো কখনো তাদের সুস্থ করে ফের বাড়িতেও পৌঁছে দেন। নিজের মোটরসাইকেলটিকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করে গত পনেরো বছরে কয়েকশো মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি।

জলপাইগুড়ির মাল ব্লকের ক্রান্তি এলাকার স্বনামধন্য এই মানুষটির নাম করিমুল হক। বছরের পর বছর ধরে মুমূর্ষু রোগীদের পরিষেবার জন্য তিনি যেভাবে নিজের কাজ করে চলেছেন তা কোনও সাধারণ মানুষের কাজ নয়। এ কথা গত কয়েক বছরে বেশ ভালভাবেই বুঝে গেছেন জলপাইগুড়িসহ গোটা ডুয়ার্স এলাকার মানুষ।

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে কখনও হয়ত হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসেছেন তিনি, এমন সময় হয়তো ফের কোনো রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাক পড়ল করিমুলবাবুর। খাওয়া ওভাবেই রেখে তিনি ওই রোগীকে নিয়ে ফের রওনা হন হাসপাতালের দিকে।

জানা গেল তার এই মহৎ উদ্যোগের মূল কাহিনী। ১৯৯৫ সালে শুধুমাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে করিমুল নিজের অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। চোখের সামনেই বিনা চিকিৎসায় মরতে দেখেছেন মা জফুরান্নেসাকে। মায়ের এই অকালমৃত্যুর যন্ত্রণার কথা মন থেকে একেবারেই মুছে ফেলতে পারেননি তিনি। তাদের মতো যে সব প্রত্যন্ত এলাকায় কোনো গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স নেই সেখানকার মানুষেরা কি তাহলে এভাবেই অকালমৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে? তখনই তিনি শপথ নিয়েছিলেন চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় কাউকে কখনও মরতে দেবেন না। যেভাবেই হোক অন্তত রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন।

এরপর থেকে যখন যেখানে কোনও অসুস্থ রোগীকে দেখেছেন কখনো সাইকেলে, কখনো বা কোলে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। এভাবেই কিছুদিন চলতে থাকে করিমুলের জীবন। সামাজিক কাজে তার এই উদ্যোগ দেখে অনেকেই রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার জন্য করিমুলকে নিজের মোটরসাইকেল দিয়ে দিতেন ঘণ্টা কয়েকের জন্য। ধীরে ধীরে ধারদেনা করে নিজেই একটি মোটরসাইকেল কিনে নেন তিনি। মোটরসাইকেলের সামনে লিখে দেন বিনামূল্যের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার দেয়ার কথা।

তার এই কাজের কথা ধীরে ধীরে জেলার গণ্ডি ছেড়ে বাইরের জগতেও ছড়িয়ে পড়ে। এরইমধ্যেই রাজ্য ও দেশের অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অবশেষে দীর্ঘ পনেরো বছর পর নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবার ১৯ ফেব্রুয়ারি পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত হন তিনি।

করিমুল হক বলেন, বাবা লালুয়া মহম্মদ বিএলআরও দফতরে সামান্য কাজ করতেন। ছোটবেলায় তারা এতটাই গরিব ছিলেন যে, কাঁচা কাঁঠাল ও কলা সেদ্ধ খেয়েও তাদের দিন কাটাতে হয়েছে।

পড়াশোনার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, অভাবের জন্য বেশিরভাগ সময় মামার বাড়িতে কাটাতে হয়েছে। এক স্কুল থেকে আর এক স্কুল করে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। তারপর আর হয়ে ওঠেনি।

তার মতে, নিজের পরিবেশ ও দেশকে সুস্থ রাখতে ও উজ্জ্বল করতে চাই আমি। আমার সঙ্গে আরও অনেকে যদি এভাবে এগিয়ে এসে কাজ করে তাহলে আমাদের সমাজ আরো অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।‌

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অসুস্থতায় একমাত্র ভরসা ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা

আপডেট টাইম : ১২:২৪:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোদ–ঝড়–বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে রাতবিরাতেও চলে তার অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা। গ্রামের যে কোনো প্রান্ত থেকে ডাক পেলেই মুহূর্তেই সেখানে ছুটে যান ‘অ্যাম্বুলেন্স দাদা’।

রোগীকে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে তিনি পৌঁছে দেন হাসপাতালে। কখনো কখনো তাদের সুস্থ করে ফের বাড়িতেও পৌঁছে দেন। নিজের মোটরসাইকেলটিকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করে গত পনেরো বছরে কয়েকশো মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি।

জলপাইগুড়ির মাল ব্লকের ক্রান্তি এলাকার স্বনামধন্য এই মানুষটির নাম করিমুল হক। বছরের পর বছর ধরে মুমূর্ষু রোগীদের পরিষেবার জন্য তিনি যেভাবে নিজের কাজ করে চলেছেন তা কোনও সাধারণ মানুষের কাজ নয়। এ কথা গত কয়েক বছরে বেশ ভালভাবেই বুঝে গেছেন জলপাইগুড়িসহ গোটা ডুয়ার্স এলাকার মানুষ।

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে কখনও হয়ত হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসেছেন তিনি, এমন সময় হয়তো ফের কোনো রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাক পড়ল করিমুলবাবুর। খাওয়া ওভাবেই রেখে তিনি ওই রোগীকে নিয়ে ফের রওনা হন হাসপাতালের দিকে।

জানা গেল তার এই মহৎ উদ্যোগের মূল কাহিনী। ১৯৯৫ সালে শুধুমাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে করিমুল নিজের অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। চোখের সামনেই বিনা চিকিৎসায় মরতে দেখেছেন মা জফুরান্নেসাকে। মায়ের এই অকালমৃত্যুর যন্ত্রণার কথা মন থেকে একেবারেই মুছে ফেলতে পারেননি তিনি। তাদের মতো যে সব প্রত্যন্ত এলাকায় কোনো গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স নেই সেখানকার মানুষেরা কি তাহলে এভাবেই অকালমৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে? তখনই তিনি শপথ নিয়েছিলেন চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় কাউকে কখনও মরতে দেবেন না। যেভাবেই হোক অন্তত রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন।

এরপর থেকে যখন যেখানে কোনও অসুস্থ রোগীকে দেখেছেন কখনো সাইকেলে, কখনো বা কোলে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। এভাবেই কিছুদিন চলতে থাকে করিমুলের জীবন। সামাজিক কাজে তার এই উদ্যোগ দেখে অনেকেই রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার জন্য করিমুলকে নিজের মোটরসাইকেল দিয়ে দিতেন ঘণ্টা কয়েকের জন্য। ধীরে ধীরে ধারদেনা করে নিজেই একটি মোটরসাইকেল কিনে নেন তিনি। মোটরসাইকেলের সামনে লিখে দেন বিনামূল্যের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার দেয়ার কথা।

তার এই কাজের কথা ধীরে ধীরে জেলার গণ্ডি ছেড়ে বাইরের জগতেও ছড়িয়ে পড়ে। এরইমধ্যেই রাজ্য ও দেশের অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অবশেষে দীর্ঘ পনেরো বছর পর নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবার ১৯ ফেব্রুয়ারি পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত হন তিনি।

করিমুল হক বলেন, বাবা লালুয়া মহম্মদ বিএলআরও দফতরে সামান্য কাজ করতেন। ছোটবেলায় তারা এতটাই গরিব ছিলেন যে, কাঁচা কাঁঠাল ও কলা সেদ্ধ খেয়েও তাদের দিন কাটাতে হয়েছে।

পড়াশোনার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, অভাবের জন্য বেশিরভাগ সময় মামার বাড়িতে কাটাতে হয়েছে। এক স্কুল থেকে আর এক স্কুল করে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। তারপর আর হয়ে ওঠেনি।

তার মতে, নিজের পরিবেশ ও দেশকে সুস্থ রাখতে ও উজ্জ্বল করতে চাই আমি। আমার সঙ্গে আরও অনেকে যদি এভাবে এগিয়ে এসে কাজ করে তাহলে আমাদের সমাজ আরো অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।‌