ঢাকা ০২:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ম্ভাবনাময় সোনাদিয়া দ্বীপ অবহেলিত এক জনপদ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২৩৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নদীর ওপর সেতু। সেতুর দুইপাশে নেই সংযোগ সড়ক। সেতুর ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করে না। এলাকাবাসী সেতুটি ব্যবহার করলেও উঠতে ও নামতে বাঁশের মই ব্যবহার করতে হয়। অথচ পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়া দ্বীপ।

কক্সবাজার থেকে খুবই অল্প দূরত্বে এর অবস্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না বলে আগ্রহ থাকা সত্বেও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই দ্বীপটি অনেকটাই অধরা। যাতায়াতের জন্য ভরসা নৌপথ। যদিও অনেকটা পথ ঘুরে সড়ক পথে যাওয়া যায়, তবে বড় বড় দুটি নদী পার হতে হয়। সড়ক পথে যোগাযোগোর জন্য দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু সেতু দুটি পরিত্যক্ত।

সেতু দুটির একটি সোনাদিয়া ঘটিভাঙ্গা নদীর ওপর ২০১০ সালে নির্মিত হয়। এটি মূলত সোনাদিয়া যাওয়ার দ্বিতীয় সংযোগ সেতু। এর আগে আরেকটি সেতু আছে। সেতুতে ওঠার অবস্থাও খারাপ। প্রতিদিন স্থানীয়রা এ সেতু ব্যবহার করেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন।

এক সময় এ দ্বীপে অতিথি পাখির ব্যাপক সমাগম ছিল। সঙ্গে ছিল দেশীয় পাখির অভয়ারণ্য। দ্বীপকে বলা হতো পাখির রাজ্য। যেখানে সবুজ বনানী আর নীল জলের মিলনমেলায় প্রকৃতি পেত ভিন্নরূপ। অযত্ম-অবহেলায় সে দ্বীপই আজ সব ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

কয়েকদিন আগে বার্ড বাংলাদেশ এর একটি দল সোনাদিয়া দ্বীপে পাখি গণনার উদ্দেশে গিয়েছিল। সেখানে বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির ‘চামচঠুটি চা পাখি’ বা ‘স্পুনবিল’ এর একটি পাখি দেখা গেছে। এছাড়া দুদিন দ্বীপটিতে স্থানীয় এবং অতিথি পাখির কয়েকটি প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ লাল কাঁকড়ার সংখ্যাও পরিবেশগত কারণে অনেক কমে গেছে। দেখা যায়নি সমুদ্র কচ্ছপের।
কক্সবাজার ফিসারি ঘাট থেকে স্পিডবোটে কিছুটা পথ এগুতেই পরিবেশ নষ্টকারি নানা উপকরণ চোখে পড়ে। পরিবেশ অসচেতন একশ্রেণির মানুষের বিবেকহীন কর্মকাণ্ডে প্রতিনিয়ত পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, যা পাখি ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়েছে। সমুদ্রে জোয়ারের সময় যখন পানি নদীর তীর ছাপিয়ে উপরে ওঠে। আবার ভাটার সময় যখন পানি নেমে যায় তখন পানিতে ফেলে দেয়া পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল-ক্যানসহ পরিবেশ ধ্বংসকারী নানা উপকরণ পাশের গাছগুলোতে আটকে থাকতে দেখা গেছে। এ অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে।

বার্ড বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণকারী দলের অন্যতম সদস্য, গবেষক ও বিশিষ্ট পাখি বিশারদ আদনান আজাদ আসিফ তার পর্যবেক্ষণ নোটে বলেছেন, জোয়ারে ভেসে আসার সময় ছোট ছোট পোকামাকড়, জীব, নুড়ি কুড়ি ভেসে আসছে। আবার ভাটায় পানি নেমে যাচ্ছে। তখন পাখির খাবারগুলো বালিতে আটকে যাচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। ‘স্পুনবিল’ আগামী কয়েক বছরের ভেতরে খাদ‌্যের অভাবে এই স্পটে আসবে না। কারণ এখানে কয়েকশ মিটারের ভেতরে ইঞ্জিন চালিত নৌযান ও নোঙর করা বড় বড় ইন্টারন্যাশনাল কার্গো জাহাজ দেখেছি। যার তেল ও বর্জ্য পানিতে মিশে এই ছোট ছোট পোকা ও ছোট প্রাণীগুলো মারা যাবে ও ব্যাপক খাদ‌্যের অভাব দেখা দেবে। সে কারণে এই এলাকায় আমরা ‘স্পুনবিল’ হারাব।

তিনি বলেন, দ্বীপে উপস্থিত পাখিগুলো সারাদিন খাবার খোঁজায় ব্যস্ত সময় পার করলেও গ্রেট ক্রেস্টেড টার্ন টানা চার ঘণ্টা রুস্টিংয়ে ছিল। চরে আমরা চার ঘণ্টা অবস্থানকালে পুরো সময়জুড়েই তারা না খেয়ে রুস্টিং করে। ৮০ শতাংশ এই প্রজাতি তাদের ডানার ভেতরে মাথা গুজে রেখেছিল। মোট চারবার তারা স্থান পরিবর্তন করলেও অ‌্যাক্টিভিটি একই ছিল। আমার দিক থেকে এটি ছিল তাদের অ‌্যাবনরমাল বিহেবিয়ার।

দ্বীপের পরিবেশের বর্ণনা দিতে গিয়ে আদনান আজাদ আসিফ বলেন, সমুদ্রে ফেলা নানা বর্জ্য জোয়ারে ভেসে দ্বীপে জমে হচ্ছে। এসব পাখিদের বিহেবিয়ার নষ্ট করছে। দ্বীপে একটি বড় পোড়া ফোম দেখা গেছে। পানির ফেনাতেও ব্যাপক ময়লা ও তেলতেলে ভাব ছিল। গতবারের তুলনায় মাছ শিকারিদের আনাগোনা ছিল বেশি। বেশকিছু পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ছিল। কেনটিশ প্লোভারের ঝাঁক বেশি ছিল। কিন্তু সমুদ্রে বেশি ঢেউ ওঠার সময় তারা স্থান ত্যাগ করে।

গত বছর জানুয়ারিতে সোনাদ্বীপ ঘুরতে গিয়েছিলেন সালাহউদ্দিন আকবর। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, গত বছর দ্বীপটিতে দুদিন অবস্থান করে বিদেশি কোনো পাখির দেখা পাইনি। ডিম ছাড়তে সমুদ্র থেকে আসা কচ্ছপের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক কমেছে। লাল কাঁকড়ার তো দেখাই মেলেনি। সোনা ফলানো দ্বীপের শত শত একর জমি পতিত পড়ে থাকছে। বন কেটে ফেলে করা হয়েছে চিংড়ি ঘের।
তিনি বলেন, তবুও দীর্ঘ সৈকতের অপার সৌন্দর্য নিয়ে সমুদ্রতীরে জেগে থাকে দ্বীপ। সূর্য ডুবছে প্রকৃতির নিয়মে। ভোরের আলো ফুটে পূব আকাশে উদিত হচ্ছে নতুন সূর্য। অবারিত সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয় নতুন এক একটি দিনের।

সমুদ্র তীরের জেলা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপের অবস্থা এমনই। এখানে আছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আছে অপার সম্ভাবনা। এত সম্ভাবনা থাকার পরেও এখানকার মানুষের সংকটের শেষ নেই। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নজরদারির অভাবে সব সম্ভাবনা হারাতে বসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এ এলাকার উন্নয়নে ও সম্ভাবনা বিকাশে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।

দেশ-বিদেশে নাম ছড়ানো দ্বীপ সোনাদিয়া কীভাবে বদলে যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা নানা অভিযোগ করেছেন। আগের সোনাদিয়ার সঙ্গে এখনকার সোনাদিয়ার তুলনা করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রাইজিংবিডিকে বলেন, এ সংরক্ষিত বনে বিপুল পরিমাণ বন ছিল। বনে বসতো হাজারও পাখি। শীতে অতিথি পাখির দেখা মিলতো প্রচুর পরিমাণে। সেই বন উজাড় হয়ে এখন চিংড়ি ঘেরে পরিণত হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হওয়া সম্ভব হলেও পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে।

সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শচিরাম দাস রাইজিংবিডিকে বলেন, এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় পর্যটকদের আসা-যাওয়ায় সমস্যার অন্ত নেই। মহেশখালী উপজেলা সদর গোরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ কোনোভাবে আসা সম্ভব হলেও, এর পরের অংশে চার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সোনাদিয়া পর্যন্ত পৌঁছানো সবার পক্ষেই দুঃসাধ্য। এইটুকু পথে তিনটি নদী। দুটিতে বড় পাকা ব্রিজ থাকলেও রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। একটি নদীতে আছে নড়বড়ে সাঁকো।

দ্বীপের বর্গাচাষি মশিউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, এখানে সম্ভাবনার শেষ নেই। এখানকার জমি সব ধরনের ফসলের জন্য উপযোগী। অথচ উদ্যোগের অভাবে দ্বীপে বহু জমি পতিত পড়ে থাকছে। এই উর্বর জমিতে কৃষি প্রকল্প নিয়ে সরকার লাভবান হতে পারে। সেইসঙ্গে লাভবান হবেন চাষিরা।
দ্বীপের বিভিন্ন এলাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, এক সময় এখানকার সমুদ্র সৈকতে ঝিনুক, লাল কাঁকড়া, কচ্ছপ ছিল প্রচুর। এখন সেগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। দ্বীপের বাসিন্দারা সেসব এখন আর তেমনটা দেখতে পান না। কচ্ছপের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সমুদ্রে অবমুক্ত দেয়ার লক্ষ্যে দ্বীপের সৈকতে কয়েকটি হ্যাচারি স্থাপিত হলেও সৈকতে কচ্ছপ পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ম্ভাবনাময় সোনাদিয়া দ্বীপ অবহেলিত এক জনপদ

আপডেট টাইম : ১০:০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নদীর ওপর সেতু। সেতুর দুইপাশে নেই সংযোগ সড়ক। সেতুর ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করে না। এলাকাবাসী সেতুটি ব্যবহার করলেও উঠতে ও নামতে বাঁশের মই ব্যবহার করতে হয়। অথচ পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়া দ্বীপ।

কক্সবাজার থেকে খুবই অল্প দূরত্বে এর অবস্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না বলে আগ্রহ থাকা সত্বেও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই দ্বীপটি অনেকটাই অধরা। যাতায়াতের জন্য ভরসা নৌপথ। যদিও অনেকটা পথ ঘুরে সড়ক পথে যাওয়া যায়, তবে বড় বড় দুটি নদী পার হতে হয়। সড়ক পথে যোগাযোগোর জন্য দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু সেতু দুটি পরিত্যক্ত।

সেতু দুটির একটি সোনাদিয়া ঘটিভাঙ্গা নদীর ওপর ২০১০ সালে নির্মিত হয়। এটি মূলত সোনাদিয়া যাওয়ার দ্বিতীয় সংযোগ সেতু। এর আগে আরেকটি সেতু আছে। সেতুতে ওঠার অবস্থাও খারাপ। প্রতিদিন স্থানীয়রা এ সেতু ব্যবহার করেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন।

এক সময় এ দ্বীপে অতিথি পাখির ব্যাপক সমাগম ছিল। সঙ্গে ছিল দেশীয় পাখির অভয়ারণ্য। দ্বীপকে বলা হতো পাখির রাজ্য। যেখানে সবুজ বনানী আর নীল জলের মিলনমেলায় প্রকৃতি পেত ভিন্নরূপ। অযত্ম-অবহেলায় সে দ্বীপই আজ সব ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

কয়েকদিন আগে বার্ড বাংলাদেশ এর একটি দল সোনাদিয়া দ্বীপে পাখি গণনার উদ্দেশে গিয়েছিল। সেখানে বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির ‘চামচঠুটি চা পাখি’ বা ‘স্পুনবিল’ এর একটি পাখি দেখা গেছে। এছাড়া দুদিন দ্বীপটিতে স্থানীয় এবং অতিথি পাখির কয়েকটি প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ লাল কাঁকড়ার সংখ্যাও পরিবেশগত কারণে অনেক কমে গেছে। দেখা যায়নি সমুদ্র কচ্ছপের।
কক্সবাজার ফিসারি ঘাট থেকে স্পিডবোটে কিছুটা পথ এগুতেই পরিবেশ নষ্টকারি নানা উপকরণ চোখে পড়ে। পরিবেশ অসচেতন একশ্রেণির মানুষের বিবেকহীন কর্মকাণ্ডে প্রতিনিয়ত পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, যা পাখি ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়েছে। সমুদ্রে জোয়ারের সময় যখন পানি নদীর তীর ছাপিয়ে উপরে ওঠে। আবার ভাটার সময় যখন পানি নেমে যায় তখন পানিতে ফেলে দেয়া পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল-ক্যানসহ পরিবেশ ধ্বংসকারী নানা উপকরণ পাশের গাছগুলোতে আটকে থাকতে দেখা গেছে। এ অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে।

বার্ড বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণকারী দলের অন্যতম সদস্য, গবেষক ও বিশিষ্ট পাখি বিশারদ আদনান আজাদ আসিফ তার পর্যবেক্ষণ নোটে বলেছেন, জোয়ারে ভেসে আসার সময় ছোট ছোট পোকামাকড়, জীব, নুড়ি কুড়ি ভেসে আসছে। আবার ভাটায় পানি নেমে যাচ্ছে। তখন পাখির খাবারগুলো বালিতে আটকে যাচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। ‘স্পুনবিল’ আগামী কয়েক বছরের ভেতরে খাদ‌্যের অভাবে এই স্পটে আসবে না। কারণ এখানে কয়েকশ মিটারের ভেতরে ইঞ্জিন চালিত নৌযান ও নোঙর করা বড় বড় ইন্টারন্যাশনাল কার্গো জাহাজ দেখেছি। যার তেল ও বর্জ্য পানিতে মিশে এই ছোট ছোট পোকা ও ছোট প্রাণীগুলো মারা যাবে ও ব্যাপক খাদ‌্যের অভাব দেখা দেবে। সে কারণে এই এলাকায় আমরা ‘স্পুনবিল’ হারাব।

তিনি বলেন, দ্বীপে উপস্থিত পাখিগুলো সারাদিন খাবার খোঁজায় ব্যস্ত সময় পার করলেও গ্রেট ক্রেস্টেড টার্ন টানা চার ঘণ্টা রুস্টিংয়ে ছিল। চরে আমরা চার ঘণ্টা অবস্থানকালে পুরো সময়জুড়েই তারা না খেয়ে রুস্টিং করে। ৮০ শতাংশ এই প্রজাতি তাদের ডানার ভেতরে মাথা গুজে রেখেছিল। মোট চারবার তারা স্থান পরিবর্তন করলেও অ‌্যাক্টিভিটি একই ছিল। আমার দিক থেকে এটি ছিল তাদের অ‌্যাবনরমাল বিহেবিয়ার।

দ্বীপের পরিবেশের বর্ণনা দিতে গিয়ে আদনান আজাদ আসিফ বলেন, সমুদ্রে ফেলা নানা বর্জ্য জোয়ারে ভেসে দ্বীপে জমে হচ্ছে। এসব পাখিদের বিহেবিয়ার নষ্ট করছে। দ্বীপে একটি বড় পোড়া ফোম দেখা গেছে। পানির ফেনাতেও ব্যাপক ময়লা ও তেলতেলে ভাব ছিল। গতবারের তুলনায় মাছ শিকারিদের আনাগোনা ছিল বেশি। বেশকিছু পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ছিল। কেনটিশ প্লোভারের ঝাঁক বেশি ছিল। কিন্তু সমুদ্রে বেশি ঢেউ ওঠার সময় তারা স্থান ত্যাগ করে।

গত বছর জানুয়ারিতে সোনাদ্বীপ ঘুরতে গিয়েছিলেন সালাহউদ্দিন আকবর। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, গত বছর দ্বীপটিতে দুদিন অবস্থান করে বিদেশি কোনো পাখির দেখা পাইনি। ডিম ছাড়তে সমুদ্র থেকে আসা কচ্ছপের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক কমেছে। লাল কাঁকড়ার তো দেখাই মেলেনি। সোনা ফলানো দ্বীপের শত শত একর জমি পতিত পড়ে থাকছে। বন কেটে ফেলে করা হয়েছে চিংড়ি ঘের।
তিনি বলেন, তবুও দীর্ঘ সৈকতের অপার সৌন্দর্য নিয়ে সমুদ্রতীরে জেগে থাকে দ্বীপ। সূর্য ডুবছে প্রকৃতির নিয়মে। ভোরের আলো ফুটে পূব আকাশে উদিত হচ্ছে নতুন সূর্য। অবারিত সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয় নতুন এক একটি দিনের।

সমুদ্র তীরের জেলা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপের অবস্থা এমনই। এখানে আছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আছে অপার সম্ভাবনা। এত সম্ভাবনা থাকার পরেও এখানকার মানুষের সংকটের শেষ নেই। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নজরদারির অভাবে সব সম্ভাবনা হারাতে বসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এ এলাকার উন্নয়নে ও সম্ভাবনা বিকাশে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।

দেশ-বিদেশে নাম ছড়ানো দ্বীপ সোনাদিয়া কীভাবে বদলে যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা নানা অভিযোগ করেছেন। আগের সোনাদিয়ার সঙ্গে এখনকার সোনাদিয়ার তুলনা করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রাইজিংবিডিকে বলেন, এ সংরক্ষিত বনে বিপুল পরিমাণ বন ছিল। বনে বসতো হাজারও পাখি। শীতে অতিথি পাখির দেখা মিলতো প্রচুর পরিমাণে। সেই বন উজাড় হয়ে এখন চিংড়ি ঘেরে পরিণত হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হওয়া সম্ভব হলেও পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে।

সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শচিরাম দাস রাইজিংবিডিকে বলেন, এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় পর্যটকদের আসা-যাওয়ায় সমস্যার অন্ত নেই। মহেশখালী উপজেলা সদর গোরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ কোনোভাবে আসা সম্ভব হলেও, এর পরের অংশে চার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সোনাদিয়া পর্যন্ত পৌঁছানো সবার পক্ষেই দুঃসাধ্য। এইটুকু পথে তিনটি নদী। দুটিতে বড় পাকা ব্রিজ থাকলেও রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। একটি নদীতে আছে নড়বড়ে সাঁকো।

দ্বীপের বর্গাচাষি মশিউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, এখানে সম্ভাবনার শেষ নেই। এখানকার জমি সব ধরনের ফসলের জন্য উপযোগী। অথচ উদ্যোগের অভাবে দ্বীপে বহু জমি পতিত পড়ে থাকছে। এই উর্বর জমিতে কৃষি প্রকল্প নিয়ে সরকার লাভবান হতে পারে। সেইসঙ্গে লাভবান হবেন চাষিরা।
দ্বীপের বিভিন্ন এলাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, এক সময় এখানকার সমুদ্র সৈকতে ঝিনুক, লাল কাঁকড়া, কচ্ছপ ছিল প্রচুর। এখন সেগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। দ্বীপের বাসিন্দারা সেসব এখন আর তেমনটা দেখতে পান না। কচ্ছপের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সমুদ্রে অবমুক্ত দেয়ার লক্ষ্যে দ্বীপের সৈকতে কয়েকটি হ্যাচারি স্থাপিত হলেও সৈকতে কচ্ছপ পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম।