হাওর বার্তা ডেস্কঃ হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে অর্ধশতাধিক ঘেরে শুটকি তৈরির কাজ পুরোদমে চলছে। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বানিয়াচং থেকে কোটি টাকার শুটকি বিদেশে রপ্তানি হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
বানিয়াচংসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের শুটকি কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে জেলে পল্লীগুলোতে শুটকি শুকানোর ধুম পড়েছে। উপজেলার রতœা, ভাটিপাড়া, আতুকুড়া, মিনাটের গাঙ ও উপজেলার নদীর চরগুলোতে অর্ধশতাধিক শুটকি মহালে দেড় থেকে দুই হাজার জেলে ও নারী শ্রমিক শুটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত।
অন্যান্য এলাকার জেলেরা ইউরিয়া সার, লবণ ও বিষাক্ত পাউডার দিয়ে শুটকি উৎপাদন করেন। বানিয়াচংয়ে শুটকি ঘেরগুলোতে বিষাক্ত কেমিকেল ব্যবহার না করায় এখানকার শুটকি সুস্বাদু এবং আলাদা কদর আছে। বানিয়াচংয়ের জেলেরা কোনো কিছু মিশ্রণ ছাড়া প্রখর রোদে শুটকিগুলো শুকিয়ে থাকেন। জেলে পল্লীগুলোতে শুকানো শত শত মণ শুটকি কিনতে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে গুদাম মালিকরা দলে দলে হাজির হচ্ছেন এবং অনেকেই জেলেদের অগ্রিম টাকা দিচ্ছেন।
বানিয়াচংয়ের ভাটিপাড়ার জেলে নিখিল দাস বলেন, আমাদের এখানে উৎপাদিত শুটকির মধ্যে লইট্যা, রূপচাঁদা, পুঁটি, ট্যাংরা, চিংড়ি, শৌল ও বাইমের শুটকি অন্যতম। এসব এলাকার উন্নতমানের শুটকি জেলার গ-ি পেরিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে শুটকি এখন রপ্তানি হচ্ছে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এসব শুটকি রপ্তানি করে কোটি টাকা আয় করছেন বানিয়াচংয়ের ঘের মালিকসহ বড় বড় গুদাম মালিকরা।
স্থানীয় জেলেরা জানান, বানিয়াচংয়ের জেলেরা শুটকি উৎপাদন করতে সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্য-সহায়তা পান না। নিজ উদ্যোগে তারা কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুটকি উৎপাদন করেন। শুটকি উৎপাদনকারী জেলেদের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা বা ব্যাংক ঋণ সুবিধা না থাকায় তারা ধর্ণা দেন- এলাকার প্রভাবশালী, শহরের গুদাম মালিক বা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে। গুদাম মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয়ার কারণে অনেক সময় স্বল্প মূল্যে শুটকিগুলো গুদাম মালিকদের হাতে তুলে দিতে হয়। বানিয়াচংয়ের তিন থেকে চার হাজার জেলের অন্যতম আয়ের উৎস এই শুটকি ঘের। শুকনো মৌসুমে শুটকি শুকিয়ে তা মালিকদের কাছে বিক্রি করে চলে তাদের জীবন-জীবিকা।
মামু ভাগিনা শুটকি আড়তের মালিক ও রপ্তানিকারক হেকিম উল্লা জানান, প্রতি বছর বানিয়াচং থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় প্রায় কোটি টাকার শুটকি। নদী ও হাওর থেকে আহরণ করা মাছ আধুনিক পদ্ধতিতে শুকানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জেলেদের বাড়ির সামনে রৌদ্রে শুটকি শুকাতে হয়। তাছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ সড়কপথগুলো উন্নত না হওয়ায় উৎপাদিত শুটকি দূর-দুরান্তে সরবরাহ করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এখানকার শুটকি কম খরছে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যেত। শুটকি শুকানো কাজে নিয়োজিত জেলেরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও ব্যাপক হারে শুটকি উৎপাদন করার মাধ্যমে তা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।