হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে জটিলতা থাকলেও নির্বাচন কমিশনার ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের ভোটের তারিখ আসছে সপ্তাহে নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী রোববার দুই সিটি করর্পোরেশনের তফসিল নির্ধারণের জন্য সভা ডেকেছে ইসি সচিবালয়। ইসির কার্যপত্রে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল নির্ধারণ আলোচনার বিষয় রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুর ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, কোনটাতে ভোট করা যাবে কোনটাতে যাবে না এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তারা বললে কমিশন তফসিল দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করে। দুই সিটির নির্বাচন আইনি জটিলতা আছে কি না তা আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ না করে বলতে পারব না।
এদিকে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। তফসিল ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। গত ১৪ নভেম্বর নির্বাচন উপযোগী হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। আর ১৮ নভেম্বর নির্বাচন ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির। ফলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলে আগামী সপ্তাহ থেকেই যে কোনো দিন ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু এরই মধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে নতুন করে যুক্ত ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইসি। এসব ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলররা একসঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট না করতে কমিশনের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। ফলে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা দিয়েছে কমিশনে। ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, আমরা ভোটের প্রস্তাবনা তৈরি করে ইতোমধ্যে কমিশনের কাছে দিয়েছি। সেখানে ভোটের তারিখ ফাঁকা রাখা হয়েছে। রোববারের আলোচনায় সিদ্ধান্ত এলে ফাঁকা জায়গায়গুলো ভোটের তারিখ দিয়ে পূরণ করা হবে। এরপর তফসিল ঘোষণা হবে। এক্ষেত্রে সভা শেষেই তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম-সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান ইনকিলাবকে বলেন, কমিশন বৈঠকে ভোটার তারিখ নির্ধারণ হবে। সিদ্ধান্ত এলে সেদিনই তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এর সংশোধনী ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন ২০১৯ সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্তকরণ, নির্বাচন প্রশিক্ষণ বাজেটের প্রমিতকরণ নীতিমালা, একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রতিবেদন প্রকাশ এবং নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমের ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রকাশের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনের খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে আরপিও সংশোধনীর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। ভোটের জন্য জানুয়ারির একেবারে শেষের সময়কে ভাবা হচ্ছে। কেননা, এই দুই সিটির পুরো নির্বাচন হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। আর ইভিএম পরিচালনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়া শেষ হবে জানুয়ারির শেষে।
কর্মকর্তা বলছেন, ভোটের দিন হিসেবে ৩০ কিংবা ৩১ জানুয়ারিও ভাবনায় রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর তফসিল হলে ৪০-৪১ দিন সময় পাওয়া যাবে। সাধারণত ৪০ দিনের কম সময়ে ভোট করতে চায় না কমিশন। এতে নির্বাচনী কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় মেলে না। ২০১৫ সালে ঢাকার দুই বিভক্ত সিটির প্রথমবার ভোট হয়েছিল ২৮ এপ্রিল, ওই দিনটি ছিল। আর উত্তরের মেয়র আনিসুক হক মারা গেলে উপ-নির্বাচন হয়েছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি, দিনটি ছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারির ৩০ তারিখ। ৩১ জানুয়ারি। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি/সমমান পরীক্ষা রয়েছে। এক্ষেত্রে ৩১ জানুয়ারি কম পছন্দ ইসির কাছে। ডিএনসিসিতে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র আছে ১ হাজার ৩১৮টি। ভোটকক্ষ আছে ৭ হাজার ৮৪৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে। সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। ডিএসসিসিতে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র আছে ১ হাজার ১৫০টি। আর ভোটকক্ষ আছে ৬ হাজার ৬২২টি। এ সিটিতে সম্ভাব্য ভোটার ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৬ জন। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বাস্তবায়ন করছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ।
এ বিভাগের অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান বলেন, প্রায় ১৪ হাজার ৪৬৬টি ভোটকক্ষের জন্য ২০ হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখা হবে। আর প্রতি কেন্দ্রে এক করে সেনা সদস্য রাখা হলেও লোকবল লাগবে প্রায় ২ হাজার ৫শ জনের মতো।
দুই সিটির স¤প্র্রসারিত ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ডের সংরক্ষিতসহ মোট ৪৮ জন কাউন্সিলর সময় চেয়ে কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন। তাদের দাবি নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য এক বছরও সময় পাননি। অথচ একজন কাউন্সিলর পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। সেক্ষেত্রে দুই সিটির এসব স¤প্র্রসারিত ওয়ার্ডে এখন ভোট না দিয়ে তাদেরকে কাজ করার পর্যাপ্ত সময় দিতে দাবি জানান তারা। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচনের সঙ্গে প্রথম বারেরমতো স¤প্র্রসারিত ৩৬ ওয়ার্ডে ভোট করে ইসি। এখন ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল দিয়ে জানুয়ারির মাঝামাঝি অথবা শেষে মেয়র পদের সঙ্গে সব ওয়ার্ডে ভোট করার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। এর আগে ২০১৭ সালের ৯ মে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন করে, যার মধ্য দিয়ে ঢাকার দুই সিটির আয়তন বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়। ঐ বছরের ২৮ জুন ১৮টি করে নতুন ৩৬টি ওয়ার্ড দুই সিটিতে যুক্ত করে ঢাকা সিটির আয়তন বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির সঙ্গে যুক্ত নতুন ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর এক বছর সময় পাইনি এলাকার কাজ করার জন্য। এ কারণে কমিশনের কাছে আবেদন করেছি আমাদের যেন কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যথাসময়ে ভোট করার জন্য ইসিকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে চিঠি দিয়েছে।