ঢাকা ১২:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪২:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৬৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুখ শান্তি সবাই চায়। তবে প্রকৃত শান্তি তারাই পায় যারা শান্তির ঠিকানা জানে। অধিকাংশ মানুষ শান্তির ছায়ার পেছনে ছুটে মরছে। সেই নির্বোধ মানুষের মতো যে একটি পাখি ধরবে বলে পাখির ছায়ার পেছনে ছুটছিল। তাকে একজন বুদ্ধিমান লোক বলেছিলেন, ছায়ার পেছনে না ছুটে মূল পাখিটাকে ধরো। অনেক মানুষই মূল শান্তি না চিনে শান্তির ছায়া ধরতে জীবনভর ছুটে বেড়ায়। মহান আল্লাহ বলেন, জেনে রাখো, অন্তরের শান্তি ও স্বস্তি রয়েছে আল্লাহর যিকিরের মধ্যে। বিস্তারিত অর্থে আল্লাহর হুকুম মানা ও তার নিষেধ থেকে বিরত থাকা শান্তির প্রধান পথ। মানুষের জীবনে শান্তি রয়েছে কেবল একটি পথেই। সেটি সুন্নতের পথ, শরীয়তের পথ। মানুষ যখন ঈমান, আমল ঠিক করে নেয় এবং পরস্পরের হক দিয়ে দেয়, কাউকে কষ্ট না দেওয়ার অঙ্গীকার করে তখনই ধূলির ধরা পরিণত হয় একধরনের জান্নাতে। জান্নাত তো এ জগতে দেখা বা কল্পনাও করা যাবে না। তবে পৃথিবীতে অপার্থিব আনন্দ আর সুখকে আমরা জান্নাতী সুখ বলে আখ্যা দিয়ে থাকি।

এক ব্যক্তি রাস্তায় সড়ক-বাতির আলোয় কী যেন খুঁজছিল। দুয়েকজন পথচারী এসে তাকে জিজ্ঞেস করলো, কী খুঁজছেন ভাই? আপনি কি কিছু হারিয়েছেন?
লোকটি জবাবে বলল, একটি দামি অলঙ্কার। তখন সবাই মিলে তন্ন তন্ন করে অনেক্ষণ ধরে খুঁজল। যখন কিছুতেই পাওয়া গেল না তখন একজন পথচারী প্রশ্ন করল, একটি জিনিস হারিয়ে গেল আমরা এতগুলো লোক এতক্ষণ ধরে খুঁজে মরছি। কিছুতেই পেলাম না। তাহলে জিনিসটি গেল কোথায়? অলঙ্কারের মালিককে সে প্রশ্ন করল, আপনার জিনিসটি ঠিক কোথায় হারিয়েছেন, বলুন তো।

মালিক জবাব দিল, হারিয়েছে আমার গ্রামে কিন্তু সেখানে আলো নেই। শহরে এসে দেখলাম এ জায়গাটি বেশ আলোকিত। ভাবলাম, এখানে খুঁজলে পাওয়া যাবে। তার জবাব শুনে সব পথচারী রেগে গেল। কেউ কেউ তাকে নির্বোধ বলে গাল দিয়ে চলে গেল। অনেকেই তার মাথা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করতে লাগল।
এখানে নিজ আচরণের জন্য আমরা এ লোকটিকে বোকা অথবা পাগল বলতে পারি কিন্তু পৃথিবীতে প্রায় সব মানুষই এ ধরনের ভুল পন্থা অবলম্বন করে আছে। তারা শান্তির মালিক আল্লাহকে অবলম্বন না করে অন্যত্র শান্তি খুঁজে মরছে। শরীয়ত ও সুন্নাহর পথ ত্যাগ করে যখন তারা সুখ-শান্তি হাতছাড়া করে ফেলেছে তখন অন্য জায়গায় তা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে। মানুষ তেতো ফলের গাছ লাগিয়ে মিষ্টি ফল আশা করছে। সন্তানদের দীনি শিক্ষা না দিয়ে মহব্বত ও আনুগত্য আশা করছে। ঈমান আমল ঠিক না করে দয়া, মায়া ও মানবতা আশা করছে। অঙ্গীকার ভঙ্গ করেও দীনদার হতে চাইছে। আমানতের খেয়ানত করেও ঈমানদার হতে চাইছে। হারাম উপার্জন করেও পরহেযগার হতে চাইছে। অন্যের সম্পদ গ্রাস করেও মুত্তাকী হতে চাইছে। এ যেন অগ্নিক ঝাঁপ দিয়ে নিরাপদ থাকার বৃথা আশা ।

আমার কাছে গত ৩০/৩৫ বছরে যত মাসআলা, সমস্যা বা জিজ্ঞাসা নিয়ে মানুষ এসেছে তার মধ্যে অসংখ্য ছিল বান্দার হক সম্পর্কে। আমি লক্ষ করেছি, যত মানুষ বান্দার হক নষ্ট করে তাদের চেয়ে আল্লাহর হক নষ্টকারী মানুষের পরিমাণ কম। যেসব লোক আমার পরামর্শ চেয়েছেন তাদের সংখ্যা বললাম। সমাজের বাকি মানুষের সংখ্যা এমন হতে পারে বা নাও হতে পারে।

একবার মক্কা শরীফে এক মজলিসে আমি হালাল জীবিকার ওপর বয়ান করলাম। পরদিন ঢাকার এক হজযাত্রী দেখা করতে এলেন। তিনি বললেন, আমি আমার মাকে নিয়ে হজ করতে এসেছি। গতকাল আপনার বয়ান শুনে আমার মা ও আমি দুজনই খুব অস্থির। কারণ, দেশে আমাদের প্রায় সকল সম্পত্তিই হারাম উপায়ে অর্জিত। হালাল উপার্জন দিয়ে আমরা অতি সাধারণ জীবনযাপন করতে পারতাম কি না সন্দেহ। তবে ঘুষের টাকায় আমার বাবা একাধিক বাড়ি করেছেন। দুর্নীতির দ্বারা অনেক সম্পদ জমা করে গেছেন। আমরা এখনো সুদমুক্ত নই। আমার আম্মা খুব পরহেযগার। আমি নিয়মিত নামায রোযা করি না। আমাকে দীনের পথে আনার জন্য মা খুবই চেষ্টা করছেন। আমি তাদের সমস্যা বুঝতে পেরে ঢাকার একজন আলেমের পরামর্শে চলার এবং সবকিছু সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আপডেট টাইম : ০৭:৪২:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুখ শান্তি সবাই চায়। তবে প্রকৃত শান্তি তারাই পায় যারা শান্তির ঠিকানা জানে। অধিকাংশ মানুষ শান্তির ছায়ার পেছনে ছুটে মরছে। সেই নির্বোধ মানুষের মতো যে একটি পাখি ধরবে বলে পাখির ছায়ার পেছনে ছুটছিল। তাকে একজন বুদ্ধিমান লোক বলেছিলেন, ছায়ার পেছনে না ছুটে মূল পাখিটাকে ধরো। অনেক মানুষই মূল শান্তি না চিনে শান্তির ছায়া ধরতে জীবনভর ছুটে বেড়ায়। মহান আল্লাহ বলেন, জেনে রাখো, অন্তরের শান্তি ও স্বস্তি রয়েছে আল্লাহর যিকিরের মধ্যে। বিস্তারিত অর্থে আল্লাহর হুকুম মানা ও তার নিষেধ থেকে বিরত থাকা শান্তির প্রধান পথ। মানুষের জীবনে শান্তি রয়েছে কেবল একটি পথেই। সেটি সুন্নতের পথ, শরীয়তের পথ। মানুষ যখন ঈমান, আমল ঠিক করে নেয় এবং পরস্পরের হক দিয়ে দেয়, কাউকে কষ্ট না দেওয়ার অঙ্গীকার করে তখনই ধূলির ধরা পরিণত হয় একধরনের জান্নাতে। জান্নাত তো এ জগতে দেখা বা কল্পনাও করা যাবে না। তবে পৃথিবীতে অপার্থিব আনন্দ আর সুখকে আমরা জান্নাতী সুখ বলে আখ্যা দিয়ে থাকি।

এক ব্যক্তি রাস্তায় সড়ক-বাতির আলোয় কী যেন খুঁজছিল। দুয়েকজন পথচারী এসে তাকে জিজ্ঞেস করলো, কী খুঁজছেন ভাই? আপনি কি কিছু হারিয়েছেন?
লোকটি জবাবে বলল, একটি দামি অলঙ্কার। তখন সবাই মিলে তন্ন তন্ন করে অনেক্ষণ ধরে খুঁজল। যখন কিছুতেই পাওয়া গেল না তখন একজন পথচারী প্রশ্ন করল, একটি জিনিস হারিয়ে গেল আমরা এতগুলো লোক এতক্ষণ ধরে খুঁজে মরছি। কিছুতেই পেলাম না। তাহলে জিনিসটি গেল কোথায়? অলঙ্কারের মালিককে সে প্রশ্ন করল, আপনার জিনিসটি ঠিক কোথায় হারিয়েছেন, বলুন তো।

মালিক জবাব দিল, হারিয়েছে আমার গ্রামে কিন্তু সেখানে আলো নেই। শহরে এসে দেখলাম এ জায়গাটি বেশ আলোকিত। ভাবলাম, এখানে খুঁজলে পাওয়া যাবে। তার জবাব শুনে সব পথচারী রেগে গেল। কেউ কেউ তাকে নির্বোধ বলে গাল দিয়ে চলে গেল। অনেকেই তার মাথা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করতে লাগল।
এখানে নিজ আচরণের জন্য আমরা এ লোকটিকে বোকা অথবা পাগল বলতে পারি কিন্তু পৃথিবীতে প্রায় সব মানুষই এ ধরনের ভুল পন্থা অবলম্বন করে আছে। তারা শান্তির মালিক আল্লাহকে অবলম্বন না করে অন্যত্র শান্তি খুঁজে মরছে। শরীয়ত ও সুন্নাহর পথ ত্যাগ করে যখন তারা সুখ-শান্তি হাতছাড়া করে ফেলেছে তখন অন্য জায়গায় তা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে। মানুষ তেতো ফলের গাছ লাগিয়ে মিষ্টি ফল আশা করছে। সন্তানদের দীনি শিক্ষা না দিয়ে মহব্বত ও আনুগত্য আশা করছে। ঈমান আমল ঠিক না করে দয়া, মায়া ও মানবতা আশা করছে। অঙ্গীকার ভঙ্গ করেও দীনদার হতে চাইছে। আমানতের খেয়ানত করেও ঈমানদার হতে চাইছে। হারাম উপার্জন করেও পরহেযগার হতে চাইছে। অন্যের সম্পদ গ্রাস করেও মুত্তাকী হতে চাইছে। এ যেন অগ্নিক ঝাঁপ দিয়ে নিরাপদ থাকার বৃথা আশা ।

আমার কাছে গত ৩০/৩৫ বছরে যত মাসআলা, সমস্যা বা জিজ্ঞাসা নিয়ে মানুষ এসেছে তার মধ্যে অসংখ্য ছিল বান্দার হক সম্পর্কে। আমি লক্ষ করেছি, যত মানুষ বান্দার হক নষ্ট করে তাদের চেয়ে আল্লাহর হক নষ্টকারী মানুষের পরিমাণ কম। যেসব লোক আমার পরামর্শ চেয়েছেন তাদের সংখ্যা বললাম। সমাজের বাকি মানুষের সংখ্যা এমন হতে পারে বা নাও হতে পারে।

একবার মক্কা শরীফে এক মজলিসে আমি হালাল জীবিকার ওপর বয়ান করলাম। পরদিন ঢাকার এক হজযাত্রী দেখা করতে এলেন। তিনি বললেন, আমি আমার মাকে নিয়ে হজ করতে এসেছি। গতকাল আপনার বয়ান শুনে আমার মা ও আমি দুজনই খুব অস্থির। কারণ, দেশে আমাদের প্রায় সকল সম্পত্তিই হারাম উপায়ে অর্জিত। হালাল উপার্জন দিয়ে আমরা অতি সাধারণ জীবনযাপন করতে পারতাম কি না সন্দেহ। তবে ঘুষের টাকায় আমার বাবা একাধিক বাড়ি করেছেন। দুর্নীতির দ্বারা অনেক সম্পদ জমা করে গেছেন। আমরা এখনো সুদমুক্ত নই। আমার আম্মা খুব পরহেযগার। আমি নিয়মিত নামায রোযা করি না। আমাকে দীনের পথে আনার জন্য মা খুবই চেষ্টা করছেন। আমি তাদের সমস্যা বুঝতে পেরে ঢাকার একজন আলেমের পরামর্শে চলার এবং সবকিছু সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছি।