হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবায়ের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে যুগোপযোগী সমবায় ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে সমবায়ের মাধ্যমেই আমাদের দেশের উন্নয়ন করতে পারবো।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪৮ তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০১৯ উদযাপন এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তাঁর সরকার ‘উন্নত জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে মহিলাদের সুদ বিহীন, জামানত বিহীন, দীর্ঘ মেয়াদী ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
সমবায় ভবন নির্মাণ এবং সমবায় অধিদপ্তরের সদর কার্যালয় থেকে উপজেলা পর্যন্ত সকল কার্যালয়কে আইসিটি নেটওয়ার্কের আওতায় এনে অনলাইনে কেনা-বেচার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন এবং এই অনুষ্ঠানের শুরুতেই অনলাইনে পন্য কেনা-বেচা ও বাজারজাতকরণের বিষয়টির উদ্বোধন করেন বলেও জানান।
তিনি বলেন, আমাদের সমবায় আইনটিকে আরো যুগোপযোগী করতে হবে এবং সমবায় ব্যাংক যেটা রয়েছে সেটা এক সময় মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কাজেই এই ব্যাংক আইনটাও সময়োপযোগী করে এবং এটাকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) কর্তৃক ৫টি উন্নয়ন প্রকল্পে গ্রামের দরিদ্র ও বিত্তহীন জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ, উপকরণ সরবরাহ ও ঋণ সহায়তা প্রদান করে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। ক্ষুদ্র কৃষকদের উন্নয়নে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বর্তমানে ১৭৪টি উপজেলায় বিস্তৃত হয়েছে।
সেই সঙ্গে পল্লী অবকাঠামো সুবিধা ও দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ)-এর মাধ্যমে সরকার ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ফলে গ্রামে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং গ্রামের রাস্তায় সৌরবিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যেখানে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন নেই সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং দেশের শতকরা ৯৩ জন মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌ পথ, সড়ক পথ এবং রেল পথ চালু করা এবং উন্নত করা এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার ফলে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়ছে এবং মানুষের জীবন-মান উন্নত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের আওতায় ৮৭ হাজার ২২৩টি গ্রামে ১ লক্ষ ৫ হাজার ৭২৩টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠিত হয়েছে। যার উপকারভোগী পরিবার ৪৭ লাখের ও বেশি। একইসঙ্গে, গ্রামভিত্তিক সমবায় সমিতি গঠন করে সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (সিভিডিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে সমবায়ভুক্ত সদস্যদের লাগসই প্রশিক্ষণও প্রদান করা হচ্ছে।
দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর শতকরা ৯০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নেই বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের বাজেট ও আমরা ৭ গুণ বৃদ্ধি করেছি এবং ইতোমধ্যেই আমরা সল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন লাভ করেছি।
এই উত্তোরণকে ধরে রেখে আমাদেরকে আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘জাতির পিতার নির্দেশনা অনুযায়ী এই এগিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সমবায়কে গুরুত্ব দেব। যাতে করে একসঙ্গে অধিক সংখ্যক মানুষ উপকার ভোগ করতে পারে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব কামাল উদ্দিন তালুকদার, বাংলাদেশের জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি শেখ নাদির হোসেন লিপু অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক এবং মহাপরিচালক আমিনুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সিনিয়র সচিব, সচিব সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং সারাদেশ থেকে আগত সমবায়ীবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। চলতি বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন।’ অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালের জাতীয় সমবায় পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আলোচনা পর্বের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সমবায়ীদের জন্য অনলাইনে পন্য কেনা-বেচা ও বাজারজাতকরণের উদ্বোধন করেন এবং অনুষ্ঠানস্থলে সমবায়ীদের স্থাপিত বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।