ফাহাদ হত্যায় উত্তাল বুয়েট

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে বুয়েট। ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধারের দাবিতে প্রভোস্টের অফিস ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা।

সিসিটিভির ফুটেজ চেক করতে গিয়ে দেখা যায় রাত ২টা ৬ মিনিটের পর থেকে সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ফুটেজ উদ্ধারে সাত ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। এরপর জানা যাবে ঘটনার মূল কারণ।

নিহত ফাহাদের সহপাঠীরা বলছেন, রাত ৮টার দিকে শের-ই বাংলা হলের এক হাজার ১১ নম্বর কক্ষ থেকে কয়েকজন ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত ২টা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাদের ধারণা, ফাহাদকে ডেকে নিয়ে পেটানো হয়। পরে শেরেবাংলা হলের একতলা ও দুই তলার মাঝখানের সিঁড়িতে তাকে ফেলে রাখা হয়।

ফাহাদের এক সহপাঠী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাংবাদিকদের বলেন, যারা ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের আমরা চিনি। কিন্তু এ মুহূর্তে তাদের নাম বলতে চাচ্ছি না।

তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে, এ বিষয়ে এখনও কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। এদিকে এ বিষয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষও এখনও কিছু বলেনি।

এ ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল ও সহসভাপতি ফুয়াদকে আটক করেছ পুলিশ।

চকবাজার থানার ওসি সোহরাব হোসেন জানান, বুয়েট শিক্ষার্থী ফাহাদের মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাসেল ও ফুয়াদকে আটক করা হয়েছে। তারা দুজনই বুয়েট শিক্ষার্থী। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

এদিকে আলোচনায় রয়েছে আবরার দেওয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস। গত ৫ অক্টোবর তিনি এ স্ট্যাটাস তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে দেন।

পাঠকদের জন্য সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

আবরার লিখেন,
১.৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।
২.কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।
৩.কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তরভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।
হয়তো এসুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।”

এর আগে রোববার দিনগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলা থেকে ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ও তার পরিবার বলছে, ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। শরীরের পেছনে, বাম হাতে ও কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত আঘাতের কালো দাগ ছিল।

ফাহাদের মামাতো ভাই জহিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ফাহাদের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। সে কুষ্টিয়ায় গিয়েছিল। গতকালকেই বিকালে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসে হলে ওঠে। তার পর মধ্যরাতে খবর পাই ভাই মারা গেছে।

হল প্রভোস্ট মো. জাফর ইকবাল খান বলেন, রাত পৌনে ৩টার দিকে খবর পাই এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছে। কেন সে বাইরে গিয়েছিল, কী হয়েছিল, তা এখনও জানা যায়নি।

‘পরে বুয়েটের চিকিৎসক দিয়ে তাকে পরীক্ষা করা হয়। ওই চিকিৎসক জানান তিনি বেঁচে নেই। পরে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

চকবাজার থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাত পৌনে ৩টার দিকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ আমাদের ফোন করে বিষয়টি জানায়। পরে আমরা গিয়ে শেরেবাংলা হলের বাইরে নিচতলা থেকে লাশ উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে আসি।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আবরারের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে। তার বাবার নাম বরকত উল্লাহ। গ্রামের বাড়ি থেক গতকাল রবিবারই হলে ফেরেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর