জাতিসংঘে তিন মুসলিম নেতার সাহসী ভাষণ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি সপ্তাহে আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হলো এর ৭৪তম সাধারণ সভা। সভাকে কেন্দ্র করে আমেরিকায় জমায়েত হন বিশ্বের সব শীর্ষ নেতা। এবারের বিশেষ দিক ছিল মুসলিম বিশ্বের নেতাদের ভূমিকা। শীর্ষ মুসলিম নেতারা সোচ্চার কণ্ঠে নিপীড়িত মুসলিম জাতিগুলোর কথা তুলে ধরেছেন এ বিশ্ব দরবারে। বাংলাদেশ, তুরস্ক, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং কাতারের আমির ও সৌদি যুবরাজসহ নেতারা উপস্থাপন করেছেন রোহিঙ্গা, কাশ্মীর, ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন মুসলিম জনগোষ্ঠীর দুর্দশার কথা। এদের মধ্যে তুরস্ক, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ও জোরালো বক্তব্য বিশেষভাবে
দৃষ্টি কেড়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের। তাদের ভাষণের প্রধান অংশগুলো নিয়ে এই আয়োজন

কাশ্মীর প্রশ্নে ইমরান খানের বলিষ্ঠ বক্তব্য 

জাতিসংঘে প্রদত্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাষণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ওলামায়ে কেরাম ও বিভিন্ন গুণিজনের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ইমরান খান তার ভাষণে কাশ্মীর ইস্যুর পাশাপাশি ইসলামফোবিয়া, ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের ভুল ধারণা, মুসলমানদের নবীর প্রতি ভালোবাসা, ইসলাম ও ইসলামের বিভিন্ন নিদর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা, ইসলামের পর্দার বিধান ইত্যাদি বিষয় অত্যন্ত জোরালো ও যুক্তিপূর্ণ ভাষায় আবেগ ও দৃঢ়তার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন, যার দৃষ্টান্ত জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক নেতাদের সভায় বিরল। তার ভাষণে ইউরোপের নেতাদের সামনে ইসলাম, মুসলমান, রাসুল, রাসুলের আদর্শের প্রতি একজন প্রবল আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ঈমানদারের অভিব্যক্তিই প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছেন পৃথিবীর অনেক আলেম এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি।
ইমরান খান তার ভাষণে বলেছেন, ‘আপনারা মনে করেন, ইসলাম সংখ্যালঘু অধিকারের বিরোধী। আমাকে বিষয়টি পরিষ্কার করতে দিন। ইসলাম ধর্মে কোরআন যেভাবে বিধিবিধানের উৎস, তেমনি হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনীকে মনে করা হয় সেই কোরআনের বাস্তব রূপ। তিনি সর্বপ্রথম মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা ইসলামি সভ্যতার মূল ভিত্তি। ভাবতে অবাক লাগে, ইসলাম সম্পর্কে বলা হয়, এটি নারী অধিকার বিরোধী। এটি সংখ্যালঘু অধিকার বিরোধী। অথচ মদিনাই সর্বপ্রথম এমন কল্যাণ রাষ্ট্র, যা দরিদ্র, এতিম, বিধবা, প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এ রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে প্রত্যেকেই তার ধর্ম পালনে স্বাধীন। এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব যে, ধর্মীয় জায়গাগুলোকে সংরক্ষণ করা হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের সামনে সমান। তার ধর্ম, তার বর্ণ যাই হোক না কেন। ইসলামের চতুর্থ খলিফা তো এক ইহুদির কাছে মামলায় হেরে গিয়েছিলেন। সুতরাং যখন কোনো মুসলিম সমাজ কোনো সংখ্যালঘুর প্রতি অবিচার করে, তখন সেটা ইসলামের এবং ইসলামের নবীর আইনের বিরুদ্ধে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার ভাষণে আরও বলেন, ‘বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝে নেওয়া উচিত যে, মুহাম্মদ (সা.) আমাদের অন্তরের অন্তস্তলে বাস করেন। তিনি যখন আক্রান্ত হন, তাকে যখন ব্যঙ্গ করা হয়, তখন সেটি আমাদের অন্তরকে আঘাত করে। আমরা মানুষ হিসেবে একটা জিনিস বুঝি, যখন মনে আঘাত লাগে, তখন সেটা শরীরের আঘাতের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ব্যথা দেয়। সেজন্যই মুসলমানরা তাদের নবীকে ব্যঙ্গ করলে কঠিন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে থাকেন। আমি সবসময়ই ভেবেছি, যদি কখনও সুযোগ পাই, তাহলে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে পশ্চিমা জাতি ও তাদের নেতাদের এ বিষয়টি বোঝাব।’
‘পশ্চিমাবিশ্বে আমি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছি। ধর্ম সম্পর্কে আমি তাদের মনোভাব ভালোভাবেই বুঝি। কিশোর বয়সে সর্বপ্রথম লন্ডনে যখন এলাম, দেখলাম ঈসা (আ.) এর ওপর একটি কমেডি ফিল্ম চলছে, ইসলামি সমাজে যা কল্পনাও করা যায় না।’
“আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আমরা অন্যের কষ্টের কারণ না হই। পশ্চিমাজগতে ‘হলোকাস্ট’ বিষয়টিকে খুবই স্পর্শকাতর মনে করা হয়। কারণ এটি ইহুদি সম্প্রদায়কে ব্যথা দেয়। সেজন্যই আমি বলতে চাই, আপনারা আপনাদের বাকস্বাধীনতাকে আমাদের নবীকে আঘাত করার কাজে লাগাবেন না। আমাদের ব্যথা দেবেন না। এটাই আমরা চাই।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা জানি, চরম পর্যায়ের আচরণ মানুষকে চরমপন্থার দিকে নিয়ে যায়। বর্তমানে পশ্চিমাবিশ্বের নেতারা মনে করেন, সন্ত্রাসবাদ আর ইসলাম সমর্থক। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা উচিত, প্রত্যেক সমাজেই চরমপন্থি রয়েছে, মধ্যপন্থি রয়েছে এবং উদারপন্থি রয়েছে। কোনো ধর্ম চরমপন্থা শেখায় না। সব ধর্মের মূল কথায় ভালোবাসা এবং সমবেদনার শিক্ষা আছে। এটাই আমাদের প্রাণীদের থেকে ব্যতিক্রম করে দেয়।’
‘সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নেই। এখনও পর্যন্ত কেউ এ বিষয়টি গবেষণা করেনি, ৯/১১-এর আগে আত্মঘাতী বোমা হামলা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি করেছে তামিল টাইগাররা। তারা ছিল হিন্দু। কেউ তখন হিন্দু ধর্মকে তো এ চরমপন্থার জন্য ভর্ৎসনা করেননি। আমরা জাপানের কেমিক্যাজ পাইলটের মুভি দেখেছি। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে আত্মঘাতী বিমান হামলা করেছেন। কেউ তার ধর্মকে নিন্দা করেননি।’
ইমরান খান ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের ভুল ধারণাকেই ইসলাম সম্পর্কে ভীতি সৃষ্টি করার আসল কারণ মনে করেন। তিনি বলেন, ‘লাখ লাখ মুসলমান আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে সংখ্যালঘু হিসেবে বাস করে। ইসলামভীতি ৯/১১-এর পর থেকে খুবই উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। প্রত্যেক মানুষকে উচিত পরস্পর বোঝাপড়ার সঙ্গে বসবাস করা। কিন্তু ইসলামফোবিয়া, ইসলাম সম্পর্কে অমূলক ভীতি একটা বিভাজন তৈরি করছে। মুসলমান নারীরা, যারা বোরকা পরিধান করেন তারা এখন কিছু কিছু দেশে হেনস্তার শিকার হন। পর্দাকে এমনভাবে দেখা হয়, যেন এটা একটা অস্ত্র। এটা কেন হচ্ছে? এটি হচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে অমূলক ভীতির কারণে।’
অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ভারত সরকারের নির্মম অত্যাচারের বিষয়টি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে ইমরান খান বলেন, ৫২ দিন ধরে ৮০ লাখ কাশ্মীরিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ৯ লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করে সেখানকার নাগরিকদের সঙ্গে পশুসুলভ আচরণ করছে আরএসএস মতাদর্শী মোদি সরকার। আরএসএস মতাদর্শী ভারতের বর্তমান সরকার হিটলারের নাৎসি বাহিনীর মানসিকতা নিয়ে মুসলিমনিধন করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ সরকারের হাতেই গুজরাটে মুসলিমদের ওপর গণহত্যা পরিচালিত হয়েছে। কাশ্মীরে কারফিউ প্রত্যাহারের পর আমরা আবারও এমন একটি গণহত্যার আশঙ্কা করছি।
মুসলিম নির্যাতনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতার সমালোচনা করে ইমরান খান বলেন, মুসলমানদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে তাদের ব্যাপারে সবাই নীরব বসে থাকে। আজ যদি ইহুদিরা এভাবে অবরুদ্ধ থাকত, তাহলে কি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এমন হতো? রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হলো, আন্তর্জাতিক শক্তি কী ভূমিকা পালন করেছে?
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বিষয়টির ভয়াবহতা বুঝতেই পারছে না। আবার অনেকে আছে, যারা বুঝেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা ভারতের বিশাল বাজারের দিকে তাকান। প্রায় ১২০ কোটি মানুষের বাজার আছে সেখানে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানুষের চেয়ে বাণিজ্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, এটি দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, মুসলিমদের মধ্যে যারা উগ্রবাদে জড়ায়, তারা ইসলামের কারণে নয় ইনসাফের অভাবেই এ পথে পা বাড়ায়। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দায় এড়াতে পারে না। যদি দুটি দেশের মধ্যে প্রচলিত যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে সাতগুণ ছোট একটি দেশের সামনে দুটি বিকল্প থাকে। হয় আত্মসমর্পণ নয়তো শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া। আমরা যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়েছি, তখন তো আমরা কখনও আত্মসমর্পণ করব না। যখন কোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশ শেষ অবধি লড়াই চালিয়ে যায়, তখন এর পরিণাম মানচিত্রের সীমানা ছাড়িয়ে যায়। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের লড়াইয়ের প্রভাব তখন পুরো দুনিয়ার ওপর পড়ে। সমগ্র বিশ্বকে এর ফল ভোগ করতে হয়।
তিনি বলেন, এটি জাতিসংঘের জন্য একটি পরীক্ষা। এ সংস্থা কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের গ্যারান্টি দিয়েছিল। আত্মতুষ্টিতে নয় বরং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। এজন্য সবার আগে ভারতকে দখলকৃত কাশ্মীরে আরোপ করা কারফিউ তুলে নিতে হবে। সব বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দিতে হবে।
হ সৌজন্যে : ইসলাম টাইমস

রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় মাহাথিরের উচ্চকণ্ঠ ভাষণ
জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ১১ নম্বর সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয়ের আয়োজনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের পার্শ্ব-অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, মিয়ানমার সরকার এ সংকট সমাধানে অনিচ্ছুক। কাজেই এ পরিস্থিতি বিষয়ে কিছু করার দায়িত্ব আমাদের, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হাতে পড়েছে। কাজের শুরু হিসেবে জাতিসংঘকে তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভবিষ্যতে মানবসৃষ্ট দুর্দশা রোধ করার জন্য। সংকট সমাধান ও অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপের বাইরে অন্যদেরও তাদের দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে।
‘মালয়েশিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে বলা অব্যাহত রাখবে যে প্রত্যাবাসন হতে হবে নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও সম্মানের সঙ্গে। এটা শুধু হতে পারে রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব দেওয়ার মাধ্যমে।’ যোগ করেন তিনি।
‘যখন বিশ্ব আইডিপি শিবিরগুলোর সঙ্গে অতীতের কুখ্যাত বন্দি শিবিরগুলোর তুলনা করে, তখন মিয়ানমার সরকার দ্রুতই তা অস্বীকার করে। কিন্তু তারা জাতিসংঘের কিছু কর্মকর্তা ও মানবিক সাহায্য কর্মীদের প্রবেশাধিকার দেয়নি। যদি মিয়ানমারের লুকানোর কিছু না থাকে, তাহলে রাখাইনের পরিস্থিতি কেন অন্যদের দেখতে দেওয়া হচ্ছে না? যারা শিবিরে বাস করছেন তাদের পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও সাহায্য করতে এসব কর্মকর্তা ও সাহায্য কর্মীদের যেতে দিন। মিয়ানমারকে দেখাতে হবে যে, তারা সংকট দূর করতে আন্তরিক,’ বলেন মাহাথির।
কিছু উদ্বাস্তুকে প্রত্যাবাসনের দুটি উদ্যোগের উভয়টি ব্যর্থ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এর কারণগুলো সুস্পষ্ট। কেউ তো ফিরবে না যদি না তারা অনুভব করে যে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আছে।’ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিপুণভাবে রোহিঙ্গাদের বিষয়টিকে ভয়, ঘৃণা ও সহিংসতায় ঠেলে দিয়েছে, একইভাবে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিছক বিবেচনা করাও অগ্রহণযোগ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এটা পরিষ্কার, জবাবদিহি নিশ্চিতে মিয়ানমারের পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। এমন পদক্ষেপ কীভাবে সফল হবে যদি নৃশংসতার জন্য দায়ী অপরাধীরা সিস্টেমের অংশ হয়ে থাকে?’
রোহিঙ্গাদের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে ওআইসির ইতিবাচক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন মাহাথির। ‘এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে, আমরা আশা করি অন্যান্য দেশ ওআইসিকে সাহায্য করবে, যাতে জঘন্য অপকর্ম করা অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে না পারে।’
রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়ার মানবিক সহায়তা তুলে ধরে মাহাথির বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের আমাদের সংগতি ও ক্ষমতা অনুযায়ী সাহায্য অব্যাহত রাখব।’ ‘তারপরও আমরা আশা করি রোহিঙ্গাদের ওপর পতিত দুর্দশার ইতি ঘটাতে আমাদের সংকল্পে অন্যরা আমাদের ও বাংলাদেশের সঙ্গে যোগ দেবে। আমাদের এ সংকটের ইতি টানা দরকার এবং এটি আমাদের এখনই করতে হবে,’ বলেন তিনি। রোহিঙ্গাদের প্রতি হওয়া নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘চলুন, কালোকে কালো বলা শুরু করি। রাখাইন রাজ্যে যা হয়েছে, তা গণহত্যা।’
ধর্ষণ ও অন্যান্য কুৎসিত মানবাধিকার লঙ্ঘন। যার ফল রোহিঙ্গাদের গণহারে দেশ ছেড়ে পালানোÑ বেশিরভাগই গিয়েছেন কক্সবাজারে। এক্ষেত্রে ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ যা করেছে তার জন্য দেশটির প্রশংসা করি আমরা,’ যোগ করেন মাহাথির।

ফিলিস্তিনের 
পক্ষে এরদোগানের 
সাহসী বক্তৃতা
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান একটি মানচিত্র দেখিয়ে প্রশ্ন রাখেন, এটা কি ১৯৪৮ সালের সীমান্ত, নাকি ১৯৬৭ সালের? কিংবা এছাড়া কি কোনো সীমান্ত রয়েছে?
এ সময় তিনি ইসরাইলি দখলদারিত্বে ফিলিস্তিন ভূখ- বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অনাচারের শিকার হয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন। বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে এরদোগান বলেন, ইসরাইলের ফিলিস্তিন ভূখ- দখল করার কোনো বৈধতা নেই। এ ইস্যুতে তুরস্কের অবস্থান স্পষ্ট। ১৯৬৭ সালের সীমান্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী আলাদা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে এবং পূর্ব জেরুজালেম তাদের রাজধানী হবে।
জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরাইল নিয়ে নিজেদের নিয়ম প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ। যদি তাদের ভূখ-ের আওতায় না পড়ে; তবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে অন্যান্য অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখ-ের মতো তারা গোলান মালভূমি ও পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতিকে কীভাবে একীভূত করতে পারে?
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তির’ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এরদোগান। তিনি বলেন, এটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে বিলুপ্ত করার প্রক্রিয়া। তুরস্ক সবসময় ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের পাশে থাকবে এবং অতীতেও ছিল।
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে ১৯৪৮ সালে তাদের জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। ১৯৬৭ সালের ইসরাইল-আরব যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে। ফিলিস্তিনিরা চায় পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে এর রাজধানী বানাতে। তবে অন্যদিকে জেরুজালেমের পুরোটাই নিজেদের রাজধানী বলে দাবি করে থাকে ইসরাইল। এছাড়াও তিনি রোহিঙ্গা নির্যাতন ও কাশ্মীর প্রসঙ্গে জোরালো বক্তব্য রাখেন।
ইসরাইলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র এ দেশটির হাতে রয়েছে পরমাণু অস্ত্র। অথচ আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে চললেও ইরানে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ইসরাইল কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো পরমাণু চুক্তি বা সমঝোতায় সই করেনি। ইরান-তুরস্ক সবক’টাতেই সই করেছে। তারপরও ইরানকে পরমাণু শক্তিধর হতে দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে ইসরাইলের পরমাণু কর্মসূচিকে নিষিদ্ধ করা হোক।
এরদোগান এ-ও বলেন, এ ব্যাপারে ইসরাইলকে ছাড় দেওয়া হলেও প্রতিবেশী দেশ তুরস্কের বেলায় সবাই রে রে করে উঠছে। শুধু পরমাণু অস্ত্রের অহংকারেই সব দেশকে চোখ রাঙাচ্ছে ইসরাইল। হয় সব দেশকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির অনুমোদন দেওয়া হোক, না হয় পুরোপুরি নিষিদ্ধ হোক পরমাণু অস্ত্র। যাতে কোনো দেশের হাতেই এ মারণাস্ত্র না থাকে। কয়েকটি দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্রসম্ভার রয়েছে। অথচ তারাই আবার বিশ্বকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ করতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এ কেমন নীতি?  হয় পরমাণু অস্ত্র পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হোক। না হলে সব দেশকেই আত্মরক্ষার্থে এ অস্ত্র তৈরির অধিকার বা অনুমতি দেওয়া হোক।

সূত্র : ইউএনবি

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর