ঢাকা ০৫:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজিমুন্নেসা বেগমের জিন্দা কবর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:১৭:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২২৮ বার

মুর্শিদাবাদের শাসক এবং প্রতিষ্ঠাতা মুর্শিদ কুলি খান। আজিমুন্নেসা বেগম ছিলেন তার কন্যা এবং বাংলার দ্বিতীয় নবাব সুজা-উদ্দিন মুহাম্মদ খানের স্ত্রী। মুর্শিদাবাদের পুরোনো শহর আজিম নগরে তাকে সমাহিত করা হয়। শহরটি ভারতের কলকাতা থেকে প্রায় ১২৬ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। সমাধিটি জিন্দা কবর নামেও পরিচিত। বলা হয়ে থাকে যে,তাকে এখানে জীবিত দাফন করা হয়েছিলো। চলুন জানা যাক তার সঙ্গে এমন নির্দয় হওয়ার পেছনে কারণ কি ছিলো।

লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে যে, কোনো এক সময় আজিমুন্নেসা বেগম ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন হেকিম (চিকিৎসক) তাকে এমন একটি ঔষধ খেতে বলেন যা তৈরি করা শিশুদের কলিজা (লিভার) দিয়ে। এরপর থেকে তিনি সেই ঔষধটি খেতে শুরু করেন।

ঔষধটি তার কাছে লুকিয়ে পৌছে দেয়া হত। কিন্তু সুস্থ হবার পরও তিনি সেই ঔষধটি ছাড়তে পারছিলেন না, কারণ সেটি তার নেশায় পরিণত হয়েছিলো। যার ফলে ওই ঔষধ তৈরি করতে লুকিয়ে অনেক শিশুকে মেরে ফেলা হয়।

তিনি তৎকালীন সময়ে ওই অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী এবং শক্তিশালী নারী ছিলেন। ফলে তার কর্মচারীদের পক্ষে নির্দেশ অমান্য করার সাহস ছিলোনা। তারা প্রতিদিন একটি করে শিশুকে হত্যা করতো কলিজা সংগ্রহের জন্য।

এটা জানার পর আজিমুন্নেসার স্বামী নবাব সুজা উদ্দিন তাকে শিশুদের মেরে ফেলার অপরাধে অভিযুক্ত করেন এবং জীবিত অবস্থায় সিঁড়ির নিচে দাফন করেন। যাতে ভবিষ্যতে যখন এখানে লোকজন আসবে তাদেরকে তার কবরের ওপর থেকে হেটে যেতে হয় এবং তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা হয়।

এমন নিষ্ঠুরতার কারনে আজিমুন্নেসা-কে ‘কলিজা খালি’ নাম দেয়া হয় যার অর্থ কলিজা খাদক। শোনা যায় যে, সুজা-উদ্দিন ও আজিমুন্নেসার ভিতরে সম্পর্ক ভালো ছিলনা যার কারনে নবাব তাকে এতো কঠোর শাস্তি দিতে দ্বিধাবোধ করেননি।

আরো একটি কথা রয়েছে যে, আজিমুন্নেসার বাবা গোপনে তার মেয়ের এই নিষ্ঠুর কাজের কথা জানতে পারেন এবং এতে তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে তার নিজের মেয়েকে জীবিত দাফনের  নির্দেষ দেন।

তবে তার মৃত্যুর সঠিক তারিখ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে, কারন তার মৃত্যুর নির্দিষ্ট তারিখ কোনো কাগজপত্রে উল্লেখ নেই।

১৭৩৪ সালে ওই অঞ্চলে মোঘল নকশা অনুযায়ী একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আজিমুন্নেসার কবরের ওপর নির্মিত সিঁড়িটি দিয়েই সেই মসজিদে প্রবেশ করতে হতো। এই মসজিদটির সঙ্গে প্রাচীন কাটরা মসজিদের অনেক মিল রয়েছে।

তবে মসজিদটি শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে কেবল এর প্রবেশদ্বারটি টিকে রয়ে। কিন্তু এই ধ্বংসাবশেষ দেখেও আপনি বুঝতে পারবেন যে পুরো স্থাপনাটি কতোটা চমৎকার ছিল।

এই মসজিদটি কে নির্মাণ করেছে সেটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে তবে অনেকের মতে এটাকে আজিমুন্নেসার পূর্বেই বানানো হয়েছিল।

১৯৮৫ সালে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এই ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব গ্রহন করে।

প্রায় তিনশত বছর হতে চলেছে তবে এখনও আজিমুন্নেসার মৃত্যুর প্রায় অনেক বিষয় রহস্যই থেকে গেছে। অনেকের মতে এগুলো গুজব অথবা লোককথা। তবে ইতিহাসের পাতায় আজিমুন্নেসা আজও “কলিজা খালি” নামক একজন নিষ্ঠুর নারী হিসেবে রয়েছে গেছেন।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আজিমুন্নেসা বেগমের জিন্দা কবর

আপডেট টাইম : ০৭:১৭:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মুর্শিদাবাদের শাসক এবং প্রতিষ্ঠাতা মুর্শিদ কুলি খান। আজিমুন্নেসা বেগম ছিলেন তার কন্যা এবং বাংলার দ্বিতীয় নবাব সুজা-উদ্দিন মুহাম্মদ খানের স্ত্রী। মুর্শিদাবাদের পুরোনো শহর আজিম নগরে তাকে সমাহিত করা হয়। শহরটি ভারতের কলকাতা থেকে প্রায় ১২৬ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। সমাধিটি জিন্দা কবর নামেও পরিচিত। বলা হয়ে থাকে যে,তাকে এখানে জীবিত দাফন করা হয়েছিলো। চলুন জানা যাক তার সঙ্গে এমন নির্দয় হওয়ার পেছনে কারণ কি ছিলো।

লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে যে, কোনো এক সময় আজিমুন্নেসা বেগম ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন হেকিম (চিকিৎসক) তাকে এমন একটি ঔষধ খেতে বলেন যা তৈরি করা শিশুদের কলিজা (লিভার) দিয়ে। এরপর থেকে তিনি সেই ঔষধটি খেতে শুরু করেন।

ঔষধটি তার কাছে লুকিয়ে পৌছে দেয়া হত। কিন্তু সুস্থ হবার পরও তিনি সেই ঔষধটি ছাড়তে পারছিলেন না, কারণ সেটি তার নেশায় পরিণত হয়েছিলো। যার ফলে ওই ঔষধ তৈরি করতে লুকিয়ে অনেক শিশুকে মেরে ফেলা হয়।

তিনি তৎকালীন সময়ে ওই অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী এবং শক্তিশালী নারী ছিলেন। ফলে তার কর্মচারীদের পক্ষে নির্দেশ অমান্য করার সাহস ছিলোনা। তারা প্রতিদিন একটি করে শিশুকে হত্যা করতো কলিজা সংগ্রহের জন্য।

এটা জানার পর আজিমুন্নেসার স্বামী নবাব সুজা উদ্দিন তাকে শিশুদের মেরে ফেলার অপরাধে অভিযুক্ত করেন এবং জীবিত অবস্থায় সিঁড়ির নিচে দাফন করেন। যাতে ভবিষ্যতে যখন এখানে লোকজন আসবে তাদেরকে তার কবরের ওপর থেকে হেটে যেতে হয় এবং তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা হয়।

এমন নিষ্ঠুরতার কারনে আজিমুন্নেসা-কে ‘কলিজা খালি’ নাম দেয়া হয় যার অর্থ কলিজা খাদক। শোনা যায় যে, সুজা-উদ্দিন ও আজিমুন্নেসার ভিতরে সম্পর্ক ভালো ছিলনা যার কারনে নবাব তাকে এতো কঠোর শাস্তি দিতে দ্বিধাবোধ করেননি।

আরো একটি কথা রয়েছে যে, আজিমুন্নেসার বাবা গোপনে তার মেয়ের এই নিষ্ঠুর কাজের কথা জানতে পারেন এবং এতে তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে তার নিজের মেয়েকে জীবিত দাফনের  নির্দেষ দেন।

তবে তার মৃত্যুর সঠিক তারিখ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে, কারন তার মৃত্যুর নির্দিষ্ট তারিখ কোনো কাগজপত্রে উল্লেখ নেই।

১৭৩৪ সালে ওই অঞ্চলে মোঘল নকশা অনুযায়ী একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আজিমুন্নেসার কবরের ওপর নির্মিত সিঁড়িটি দিয়েই সেই মসজিদে প্রবেশ করতে হতো। এই মসজিদটির সঙ্গে প্রাচীন কাটরা মসজিদের অনেক মিল রয়েছে।

তবে মসজিদটি শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে কেবল এর প্রবেশদ্বারটি টিকে রয়ে। কিন্তু এই ধ্বংসাবশেষ দেখেও আপনি বুঝতে পারবেন যে পুরো স্থাপনাটি কতোটা চমৎকার ছিল।

এই মসজিদটি কে নির্মাণ করেছে সেটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে তবে অনেকের মতে এটাকে আজিমুন্নেসার পূর্বেই বানানো হয়েছিল।

১৯৮৫ সালে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এই ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব গ্রহন করে।

প্রায় তিনশত বছর হতে চলেছে তবে এখনও আজিমুন্নেসার মৃত্যুর প্রায় অনেক বিষয় রহস্যই থেকে গেছে। অনেকের মতে এগুলো গুজব অথবা লোককথা। তবে ইতিহাসের পাতায় আজিমুন্নেসা আজও “কলিজা খালি” নামক একজন নিষ্ঠুর নারী হিসেবে রয়েছে গেছেন।