ঢাকা ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে পবিত্র আশুরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৪:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৭৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  আজ পবিত্র আশুরা। কারবালার শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনার এই দিনটি ধর্মীয়ভাবে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে এ দিনটি বিশেষ পবিত্র দিবস।

হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেইন (রা.) ও তার পরিবার এবং অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন।

এজন্যই যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা এ দিনটি পালন করে।

হাদিস শরিফ অনুসারে মহররমের ১০ তারিখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐশী ঘটনা ঘটেছে বলেই মুসলমানদের, বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে আশুরার ধর্মীয় গুরুত্ব খুব বেশি। তাই ১০ মুহাররমকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।

বাংলাদেশেও মঙ্গলবার যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পবিত্র আশুরা পালিত হচ্ছে।

এদিকে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটি।

কারবালার ঘটনা স্মরণ করে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল রয়েছে।

কারবালার শোকাবহ এই ঘটনা অর্থাৎ পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা যোগায়।

পবিত্র এই আশুরা শুধু মুসলমানদের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্যান্য আসমানি ধর্ম গ্রন্থের অনুসারীদের কাছেও এ দিনটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এ দিনটির পবিত্রতা ও গুরুত্ব প্রধানত এ কারণেই যে, বেহেশত থেকে পৃথিবীতে অস্থায়ীভাবে নির্বাসনে আসার পর এ দিনে হজরত আদম ও মা হাওয়া আলাইহিমুস সালামের তওবা আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেন।

এছাড়া প্রলয়ংকরী তুফান থেকে হজরত নূহের কিশতির নাজাত লাভ, নমরূদের আগুন থেকে হজরত ইব্রাহিমের মুক্তি, ফেরাউনের কবল থেকে হজরত মূসা ও বনি ইসরাইলের নাজাতসহ হজরত আইয়ুব, হজরত দাউদ, হজরত সুলায়মান ও হজরত ঈসা প্রমুখ আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম আল্লাহপাকের বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেন। এছাড়া এ দিবসে কিয়ামত হবে বলেও বর্ণনায় পাওয়া যায়।

আশুরা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। হোসনি দালানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাজিয়া মিছিল বের হবে।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলও এই দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া শোক মিছিলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। রাজধানীর বড় কাটারা ইমামবাড়া, খোজা শিয়া ইসনুসারী ইমামবাড়া এবং বিবিকা রওজায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

প্রতিটি ইমামবাড়া সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে প্রত্যেক দর্শনার্থীর দেহ তল্লাশি করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করানো হচ্ছে বলেও ডিএমপি কমিশনার উল্লেখ করেন।

এছাড়াও এবছর তাজিয়া মিছিলে ঢোল বাজিয়ে ছুরি, তলোয়ার ও লাঠিখেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে এসব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাজিয়া মিছিলে ১২ ফুটের বেশি বড় নিশান, ব্যাগ, পোঁটলা, টিফিন ক্যারিয়ার বহন এবং আগুনের ব্যবহার করা যাবে না। মাঝপথে কেউ মিছিলে অংশ নিতেও পারবেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে পবিত্র আশুরা

আপডেট টাইম : ১০:১৪:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  আজ পবিত্র আশুরা। কারবালার শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনার এই দিনটি ধর্মীয়ভাবে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে এ দিনটি বিশেষ পবিত্র দিবস।

হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেইন (রা.) ও তার পরিবার এবং অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন।

এজন্যই যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা এ দিনটি পালন করে।

হাদিস শরিফ অনুসারে মহররমের ১০ তারিখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐশী ঘটনা ঘটেছে বলেই মুসলমানদের, বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে আশুরার ধর্মীয় গুরুত্ব খুব বেশি। তাই ১০ মুহাররমকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।

বাংলাদেশেও মঙ্গলবার যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পবিত্র আশুরা পালিত হচ্ছে।

এদিকে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটি।

কারবালার ঘটনা স্মরণ করে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল রয়েছে।

কারবালার শোকাবহ এই ঘটনা অর্থাৎ পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা যোগায়।

পবিত্র এই আশুরা শুধু মুসলমানদের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্যান্য আসমানি ধর্ম গ্রন্থের অনুসারীদের কাছেও এ দিনটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এ দিনটির পবিত্রতা ও গুরুত্ব প্রধানত এ কারণেই যে, বেহেশত থেকে পৃথিবীতে অস্থায়ীভাবে নির্বাসনে আসার পর এ দিনে হজরত আদম ও মা হাওয়া আলাইহিমুস সালামের তওবা আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেন।

এছাড়া প্রলয়ংকরী তুফান থেকে হজরত নূহের কিশতির নাজাত লাভ, নমরূদের আগুন থেকে হজরত ইব্রাহিমের মুক্তি, ফেরাউনের কবল থেকে হজরত মূসা ও বনি ইসরাইলের নাজাতসহ হজরত আইয়ুব, হজরত দাউদ, হজরত সুলায়মান ও হজরত ঈসা প্রমুখ আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম আল্লাহপাকের বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেন। এছাড়া এ দিবসে কিয়ামত হবে বলেও বর্ণনায় পাওয়া যায়।

আশুরা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। হোসনি দালানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাজিয়া মিছিল বের হবে।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলও এই দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া শোক মিছিলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। রাজধানীর বড় কাটারা ইমামবাড়া, খোজা শিয়া ইসনুসারী ইমামবাড়া এবং বিবিকা রওজায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

প্রতিটি ইমামবাড়া সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে প্রত্যেক দর্শনার্থীর দেহ তল্লাশি করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করানো হচ্ছে বলেও ডিএমপি কমিশনার উল্লেখ করেন।

এছাড়াও এবছর তাজিয়া মিছিলে ঢোল বাজিয়ে ছুরি, তলোয়ার ও লাঠিখেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে এসব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাজিয়া মিছিলে ১২ ফুটের বেশি বড় নিশান, ব্যাগ, পোঁটলা, টিফিন ক্যারিয়ার বহন এবং আগুনের ব্যবহার করা যাবে না। মাঝপথে কেউ মিছিলে অংশ নিতেও পারবেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।