An Indian paramilitary soldier searches a car at a roadblock during a lockdown in Srinagar on September 3, 2019. (Photo by Tauseef MUSTAFA / AFP)

উভয় সংকটে কাশ্মীর

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের এক মাস পরও স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। কিছু কিছু এলাকায় কড়াকড়ি শিথিল হলেও সেনা-পুলিশের উপস্থিতি আগের মতোই। ফলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি ভূস্বর্গ। অবরোধের মধ্যেই রীতিমতো উভয় সংকটে পড়েছেন উপত্যকার সাধারণ মানুষ। পুলিশের নির্দেশ, দিনের বেলা স্কুল ও দোকানপাট খুলে রাখতে হবে। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলছে এর উল্টোটা।

শহরের দেয়ালে দেয়ালে লিফলেট ও পোস্টার মেরে তারা হুমকি দিয়েছে, দোকানপাট খোলা রাখলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোমবার এ অঞ্চলের প্রধান দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদিন ও লস্কর-ই-তৈয়বার হুমকি সংবলিত কিছু পোস্টার উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে আটক কাশ্মীরি নেতা ও রাজনীতিকদের কারাগার ও বন্দিশিবির থেকে সরিয়ে তাদের বাড়িতে নিচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ। তবে এখনই তাদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। বরং গৃহবন্দি করে রাখা হবে। হুরিয়াত নেতা মিরওয়াজ ওমর ফারুক, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা গোলাম আহমদ সোফি, পিডিপির নেতা মুজাফফর বেইগ ও সিপিআইএমের মোহাম্মদ ইউসুফ তারিগামিকে তাদের বাড়িতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নেয়া হবে আরও দুই নেতাকে। খবর আইএএনএসের।

স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, সকাল-সন্ধ্যার বদলে দুপুরে দোকানপাট খোলার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে বাধা দিয়েছে পুলিশ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুপুরে দোকানপাট খোলা থাকলে বোঝানো যাবে যে উপত্যকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সকালে দোকান খোলায় শ্রীনগরের বাটামালু এলাকা থেকে চারজন ব্যবসায়ীকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। আবার সন্ধ্যায় দোকান খোলায় কামারওয়ারি এলাকা থেকে দু’জনকে আটক করা হয়। কিন্তু দিনের বেলায় স্কুল ও দোকানপাট খোলার ব্যাপারে হুশিয়ারি দিচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো। মূলত গত দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন এলকায় পোস্টার লাগিয়ে এসব হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

কুলগাম জেলা থেকে হিজবুল মুজাহিদিনের কিছু পোস্টার পাওয়া গেছে। এতে এলাকাবাসীকে তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় না বের করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২১ আগস্ট অনন্তনাগ জেলার আইশমুকাম মাকের্টের ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান খোলার চেষ্টা করলে তাদের সতর্ক করা হয়। একইদিন পুলওয়ামা জেলার ব্যবসায়ীদের হুশিয়ার করে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। শ্রীনগরের সিভিল লাইন্স এবং উপত্যকার অন্য কয়েকটি অংশে গত কয়েকদিন ধরে সকালে পসরা নিয়ে বসেছিলেন দোকানিরা।

তাদের দাবি, দোকান লক্ষ্য করে পেট্রল বোমা ছোড়া হয়েছে। গত শুক্রবার শ্রীনগরের পারিমপোরা এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। পুলিশের কথা মেনে দুপুরে দোকান খুলেছিলেন গোলাম মোহাম্মদ নামে ৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যবসায়ী।

পুলিশের দাবি, সন্ত্রাসীরা তাকে দোকান বন্ধ করতে বলে। তিনি জবাবে বলেন, কাশ্মীর আজাদি পেলে তিনি ‘আজাদি ব্রিগেড’-এর নির্দেশ মেনে চলবেন। তার পরেই তাকে গুলি করা হয়। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান গোলাম। কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এক কর্মকর্তা বলেন, দু’পক্ষের টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে গিয়েছি আমরা। পুলিশ অনেক দোকানিকে পসরা নিয়ে বসতে চাপ দিয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ী খুনের পর কেউ ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি।

এদিকে নিজের বিয়ের দিনকে সামনে রেখে প্রায় এক বছর ধরে নানা পরিকল্পনায় সাজাচ্ছিলেন কাশ্মীরের শ্রীনগরের কন্যা আরশি নিশার। তিন দিন চলবে বিয়ের অনুষ্ঠান। গান-বাজনা, বিশেষ রূপচর্চার অনুষ্ঠান গায়েহলুদ আর বিশাল খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান ‘ওয়াজওয়ান’।

কাশ্মীরি ঐতিহ্যবাহী খানাপিনায় ৭০০ জনেরও বেশি অতিথি আমন্ত্রিত। কিন্তু হঠাৎই সব পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গেল। জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে লাখ লাখ সেনা-পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয় পুরো উপত্যকা। রাস্তাঘাট, মোবাইল, ইন্টারনেটসহ বন্ধ করে দেয়া হয় যোগাযোগের সব মাধ্যম।

পুরো বিশ্ব থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কাশ্মীর। ফলে বিয়ে ঘিরে সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। মাটিতে মিশে যায় সব আনন্দ। শেষে মাত্র ৪০ জনের মতো অতিথিকে নিয়ে কোনো রকমে বিয়েটা সেরে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিশারের বাবা-মা। বিয়ের মৌসুম চলছে ভূস্বর্গে। এখানে সাধারণত ঐতিহ্যবাহী নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ধুমধাম করে বিয়ে হয়।

২৯ বছর বয়সী আরশি এএফপিকে বলেন, ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল, আমার বিয়ে ধুমধাম করে হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে উদ্যাপন করার মতো তেমন কিছু নেই।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর