হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুর্লভ প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নিভৃত গ্রাম ‘খোর্দ্দ বাউসা’। গ্রামের বড় বড় গাছগুলোয় হাজারো পাখির বসবাস। তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। পাখিগুলোর ডাকেই ঘুম ভাঙে এখানকার বাসিন্দাদের।
গ্রামটির নাম খোর্দ্দ বাউসা হলেও বর্তমানে পাখির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আর এসব পাখির অদ্ভুত মিতালি দেখতে আসেন দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা। পাখিগুলো সংরক্ষণে গ্রামবাসীরও আন্তরিকতার শেষ নেই। অপার মমত্বে আগলে রেখেছেন সেগুলোকে। তাদের স্বপ্ন, একদিন পাখিদের গ্রামটির পরিচয় ছড়াবে সবখানে। বেঁচে থাকবে মানুষ, গাছ ও পাখির এই মিতালি।
ভালোবাসা আর নিরাপত্তা পেয়ে বংশ বিস্তারের মাধ্যমে দিন দিন বাড়ছে পাখির সংখ্যা। প্রকৃতির অপরূপ খেয়ালে গাছে বাসা বেঁধেছে হাজারো শামুকখোল পাখি। গ্রামবাসী বলেন, এ দেশে পাখি প্রজননে অতীত কোনো ইতিহাস না থাকলেও খোর্দ্দ বাউসা গ্রামটি খাল-বিলের পাশে হওয়ায় এখানে প্রজনন সম্ভব হচ্ছে।
স্থানীয়রা শিক্ষক শাহাদত ও ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, পাখিদের আসা-যাওয়া বেশ উপভোগ করেন তারা। তাই এসব পাখিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেরাই করেন। তাদের প্রত্যাশা এ পাখি রক্ষায় সরকারও এগিয়ে আসবে। এছাড়া প্রকৃতি ও পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সচেতনতা সৃষ্টিতেও উদ্যোগের দাবি জানান তারা।
তারা আরো জানান, পাখি সংরক্ষণে তারা দায়িত্ব পালন করছে। পাখিরা যেন চলে না যায়, সেজন্য মৌসুমে গাছের আম শর্ত সাপেক্ষে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। পাখিরা যখন খাবার সংগ্রহে যায় তখন গাছের আম পাড়ে। প্রথম দিকে বৈশাখের শুরু থেকে আশ্বিনের শেষ পর্যন্ত এসব পাখির বিচরণ থাকতো। তবে এখন প্রায় সারা বছরই থাকে।
বাগান মালিক শফিকুল ইসলাম মুকুট জানান, দুর্লভ পাখিগুলো অনেকদিন ধরে আম বাগানসহ বিভিন্ন গাছে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। আগে অঞ্চলভেদে বড় বড় বট, পাইকড় গাছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসবাস করতো। এসব গাছের ফল খেয়ে জীবন ধারণ করতো। কালের বিবর্তনে হাট-বাজার কিংবা গ্রামের ফাঁকা জায়গায় বট-পাইকড় গাছ না থাকায় আবাসস্থল হিসেবে আমগাছসহ বিভিন্ন গাছকে বেছে নিয়েছে।
গ্রামের নিহারা খাতুন জানান, পাখিগুলোর ডাকেই এখন আমাদের ঘুম ভাঙে। আমাদের গ্রাম যেন পাখির মেলা। সকাল হলে পাখিরা উড়ে যায়। সন্ধ্যা হলে ফিরে। পাখিগুলো দেখতে দর্শনার্থীরা আসায় আমরা গর্ব করি।
বাঘার ইউএনও মো. শাহিন রেজা বলেন, পাখিগুলো যাতে তাদের বংশবিস্তার যথাযথভাবে করতে পারে এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে শামুকখোল, ফিঙ্গে, বাদুড়, শালিক, দোয়েল, মাইছা বক, পানকৌড়ি, সলি ও সারসসহ দেশি পাখির সংখ্যাই বেশি। এ পাখি সংরক্ষণে সরকারিভাবে প্রজেক্ট হিসেবে উদ্যোগ নেয়া হবে।