আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আবারও দলের সাধারণ সম্পাদক পদে আসছেন। যদিও দলের আরও কয়েকজন প্রভাশালী নেতা সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আগামী মেয়াদেও দলের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনার দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
চলতি বছর ২৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে চলতি মেয়াদে সৈয়দ আশরাফ দ্বিতীয়বার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের কাউন্সিলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রথমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে তিনি দীর্ঘদিন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় সৈয়দ আশরাফ ছিলেন দলের দ্বিতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তখন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল কারাবন্দি ছিলেন।
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দলের ক্রান্তিকালে অসাধারণ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দেন। তার মেধা ও যোগ্যতার কারণেই শেখ হাসিনা তাকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়ে আসেন বলে দলের অভিজ্ঞ নেতারা মন্তব্য করেন।
গত ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গত জুলাইয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে দলের ভেতরে-বাইরে তীব্র সামালোচনা ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। এই সময় দলের ভেতরে-বাইরে সৈয়দ আশরাফের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার আরও বর্হিপ্রকাশ ঘটে। এর কয়েক দিন পর সৈয়দ আশরাফকে সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিগত মহাজোট সরকার ও বর্তমান সরকারের প্রায় দুই বছরে সরকার ও দলকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সে সময়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান।
এ বছর জাতীয় শোক দিবসে ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। এই কর্মসূচি নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাঠে ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। সর্বস্তরের ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণে এ বছর শোক দিবসের এই কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হয়।
তাছাড়া বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ট নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এসব দিক বিবেচনায় তিনি তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাবেন বলে দলের অভিজ্ঞ নেতারা মনে করেন।
এদিকে যারা দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য তৎপর রয়েছেন তাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অন্যতম।
মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপটেন মনছুর আলীর ছেলে। মোহাম্মদ নাসিম এক সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, আগামী কাউন্সিলে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হতে চান। এই লক্ষ্য নিয়ে তিনি পার্টিতে তৎপর রয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য অপর প্রার্থী ওবায়দুল কাদের গত দুই সম্মেলনেই প্রার্থী ছিলেন। ২০০৯ এর সম্মেলনের আগে ওবায়দুল কাদের দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তখন থেকেই তিনি সাধারণ সম্পদক পদের দৌড়ে রয়েছেন। তাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
২০১২ সালের ডিসেম্বরের সম্মেলনেও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য তৎপর ছিলেন। এবারও তিনি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আও দুই একজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক। এসব নেতারা তাদের ঘনিষ্ঠদের কাছে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন বলে জানা গেছে।
মাহবুব-উল-আলম হানিফ দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই গত দুই মেয়াদে দলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের অঘোষিত মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেখানে কর্মসূচি সেখানেই থাকছেন এই নেতা।
তবে সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম দলের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে তাদের সবার থেকে অনেক দূর এগিয়ে আছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।