পটুয়াখালীর রাবনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে চালু হচ্ছে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। এরফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমার পাশাপাশি পণ্য জাহাজীকরণ ও খালাসে বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করছে সরকার। ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে এ বন্দরটি নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের অবস্থান হচ্ছে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় রাবনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে। ২০১৩ সালে ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এ্যাক্ট-২০১৩ অনুমোদিত হয় ও তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ওই বছরই ১৯ নভেম্বর তৃতীয় এ সমুদ্রবন্দরটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে ১৬ একর জমির উপর সীমিত ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাদির একটি বন্দর টার্মিনাল তৈরী করা হলেও এখনো পণ্য উঠানামা বা খালাস করা হচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গ পায়রা বন্দর গড়ে না উঠা পর্যন্ত বহির্নোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজ আনয়নের মাধ্যমে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস হতে পণ্য খালাসের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর পূর্ণ উদ্যোমে চালু করা ও আমদানি-রফতানি পণ্যের অবাধ পরিবহনের লক্ষ্যে— একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি ওয়্যার হাউস, পাইলটবোট, টাগবোট, বয়া লেইনিং ভেসেল, সার্ভে বোট এবং নিরাপত্তা যন্ত্রসামগ্রী প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৫ ভাগ কার্গো উঠানামা করে। চট্টগ্রাম বন্দর-সংলগ্ন এলাকায় আবাসিক ও শিল্প স্থাপনা গড়ে উঠায় এ বন্দরের উন্নয়নের জন্য আর কোনো জায়গা নেই। অন্যদিকে পশুর নদীতে পলি জমার কারণে নদীর নাব্যতা হারাচ্ছে। ফলে মংলা বন্দরে জাহাজ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ দু’টি বন্দর দিয়ে দেশের প্রায় সিংহভাগ পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। কিন্তু আমদানি-রফতানির আকার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় পায়রা বন্দর নির্মাণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক পর্যায় পায়রা বন্দরের অবকাঠামো সুবিধাদি উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
অন্যদিকে পায়রা বন্দর দিয়ে ট্রাক, লরিসহ অন্যান্য যানবাহন দিয়ে রফতানি ও আমদানি করা পণ্য পরিবনের জন্য বন্দর টার্মিনাল থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা এ-সব মহাসড়ক পর্যন্ত কোনো সংযোগ সড়ক নেই। প্রকল্প এলাকায় বিদ্যমান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ-কাম সরু রাস্তাটি ক্ষেপুপাড়া প্রধান সড়ক থেকে বন্দর পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ রাস্তাটি সরু এবং দুই দিকে বসতবাড়ি, গাছপালা ও কলাপাড়া বাজার রয়েছে। এ অবস্থায় এই সরু রাস্তা দিয়ে আমদানি ও রফতানিকৃত পণ্য পরিবহন করা সম্ভব নয়। এ কারণে আলাদা এ্যালাইনমেন্টে ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার চার লেন বিশিষ্ট আরসিসি রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাস্তাটি বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কের চেইনেজ (রাজপাড়া) থেকে শুরু হয়ে পায়রা বন্দরে শেষ হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ক্ষুদ্র পরিসরে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও রাজপাড়া-পায়রা সমুদ্রবন্দর সড়ক নির্মাণ (চার লেন) শীর্ষক প্রকল্প দু’টির ওপর গত জুনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এ দু’টি প্রকল্পকে একীভূত করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ‘পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধাদির উন্নয়ন’ নামের পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আমদানি-রফতানি বেড়ে যাওয়ায় তৃতীয় এ বন্দর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ-সব বিবেচনায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।’
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে— ৬ হাজার ৬৯ দশমিক ১৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ, এক লাখ বর্গফুট ওয়্যার হাউস নির্মাণ, ৫ কিলোমিটার রাবনাবাদ ও কালীগঞ্জ নৌপথ ড্রেজিং, পাঁচতলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, দু’টি হাইস্পিড বোট, ৫টি পিস্তল, ১০০টি শটগান ও ২ হাজার রাউন্ড গুলি সংগ্রহ, দু’টি পাইলটবোট, একটি গাটবোট, একটি বয় লেইয়িং ভেসেল, একটি সার্ভে ভেসেল ও দু’টি পন্টুন সংগ্রহ, ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক নির্মাণ ও অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক কার্যক্রম করা।