ঢাকা ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুঃখ একটাই বাহে, ১ মণ ধান বিক্রির টাকা দিয়ে ১ কেজি মাংস কেনা যাচ্ছে না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:০১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯
  • ২৭৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘শুধুই শ্রমিকের মজুরি নয়, ধান বিক্রি করে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচসহ পরিবারের খরচ মিটাতে হয়। দুঃখ হামার একটাই বাহে, এক মণ ধান বিক্রির টাকা দিয়ে এক কেজি মাংস কেনা যাচ্ছে না। এই কোন দুনিয়ায় বাস করছি বাহে!

ঘরে নতুন ধান তুললে জামাই-বেটিসহ নাতি-নাতনিরা আসবে। ঘরে ধান আছে, তা বিক্রি করে আরাম-আয়েস করে অথিতি আপ্যায়ন করবো। যদি ধানের দাম না থাকে তাহলে কিভাবে আত্মীয় আপ্যায়ন করবো বাহে! সামনে একটা বড় উৎসব। থেকে বারো রোজা করলাম। কয়েকদিন পড়েই পবিত্র ঈদ। এবারের ঈদে আনন্দটা থাকলো না বাহে।

পরিবারের সদস্যদের নতুন জামা-কাপড়সহ আত্মীয়-স্বজনদের আপ্যায়ন করাটা দুস্কর হয়ে যাবে। কিভাবে যে ঈদটা হবে ভেবেই কুল পাচ্ছি না। স্ত্রী ছেলে-মেয়ে, জামাই ও নাতি-নাতনির নতুন পোশাক দিতে না পালে তাদের মাঝেও ঈদের আনন্দটা থাকবে না। এ নিয়ে বড় দু:চিন্তায় আছি!’

এই কথাগুলো অতিকষ্টে সাংবাদিকের কাছে তুলে ধরেন কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুর (৮০), বালাতাড়ি গ্রামের কৃষক হোসেন আলী (৫০) ও গজেরকুটি গ্রামের কৃষক আবু তাহের (৫৫)।

কৃষক আবু তাহের আরও জানান, আমার পরিবারে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য। ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিরও মুখে হাসি ফোটার জন্য ঈদে নতুন জামা-কাপড় কিনতে হবে। ধান বিক্রির টাকায় ঈদের আনন্দ উৎসব ও কেনাকাঁটা করা সম্ভব নয়। যদি ঈদের আগে ধানের দাম না বারে তাহলে এবারের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যাবে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধানের দাম না থাকলেও হতাশা বুকে নিয়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে কৃষক-কৃষানীরা ধান কাঁটা, মাড়াই ও খড় রোদে শুকাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কিন্তু কয়েকদিন পরেই ঈদ।

এই ঈদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কৃষকরা কিভাবে ঈদ উৎসব পালন করবে এ চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার শতশত কৃষক। অন্য দিকে ফুলবাড়ী উপজেলা সরকারি ভাবে ধান ক্রয় শুরু না হওয়া কৃষকরা আরও বেশি দুচিন্তায় পড়েছেন বলে জানা গেছে।

কৃষকরা আরও জানান, সেখানে বিঘা প্রতি খরচ ৯ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে ধান হয় ১৮ থেকে সর্বচ্ছ ২০ মন। আর ধানের বাজার যদি হয় মণ প্রতি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। তাহলে কিভাবে কৃষকরা লাভের মুখ দেখবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ জানান, এ বছর ১১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বোরো ধান চাষ করেছেন। ধান কাঁটা ও মাড়াই প্রায় শেষের দিকে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গড়ে প্রতি বিঘায় ২০ মন বোরো ধান কৃষকরা ঘরে তুলছেন। তবে ধানের দাম না থাকায় কৃষকরা হতাশায় ভোগছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাছুমা আরেফিন জানান, কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। আগামী সোমবার থেকে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪০ টাকা দরে ধান ক্রয় করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

দুঃখ একটাই বাহে, ১ মণ ধান বিক্রির টাকা দিয়ে ১ কেজি মাংস কেনা যাচ্ছে না

আপডেট টাইম : ০৪:০১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘শুধুই শ্রমিকের মজুরি নয়, ধান বিক্রি করে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচসহ পরিবারের খরচ মিটাতে হয়। দুঃখ হামার একটাই বাহে, এক মণ ধান বিক্রির টাকা দিয়ে এক কেজি মাংস কেনা যাচ্ছে না। এই কোন দুনিয়ায় বাস করছি বাহে!

ঘরে নতুন ধান তুললে জামাই-বেটিসহ নাতি-নাতনিরা আসবে। ঘরে ধান আছে, তা বিক্রি করে আরাম-আয়েস করে অথিতি আপ্যায়ন করবো। যদি ধানের দাম না থাকে তাহলে কিভাবে আত্মীয় আপ্যায়ন করবো বাহে! সামনে একটা বড় উৎসব। থেকে বারো রোজা করলাম। কয়েকদিন পড়েই পবিত্র ঈদ। এবারের ঈদে আনন্দটা থাকলো না বাহে।

পরিবারের সদস্যদের নতুন জামা-কাপড়সহ আত্মীয়-স্বজনদের আপ্যায়ন করাটা দুস্কর হয়ে যাবে। কিভাবে যে ঈদটা হবে ভেবেই কুল পাচ্ছি না। স্ত্রী ছেলে-মেয়ে, জামাই ও নাতি-নাতনির নতুন পোশাক দিতে না পালে তাদের মাঝেও ঈদের আনন্দটা থাকবে না। এ নিয়ে বড় দু:চিন্তায় আছি!’

এই কথাগুলো অতিকষ্টে সাংবাদিকের কাছে তুলে ধরেন কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুর (৮০), বালাতাড়ি গ্রামের কৃষক হোসেন আলী (৫০) ও গজেরকুটি গ্রামের কৃষক আবু তাহের (৫৫)।

কৃষক আবু তাহের আরও জানান, আমার পরিবারে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য। ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিরও মুখে হাসি ফোটার জন্য ঈদে নতুন জামা-কাপড় কিনতে হবে। ধান বিক্রির টাকায় ঈদের আনন্দ উৎসব ও কেনাকাঁটা করা সম্ভব নয়। যদি ঈদের আগে ধানের দাম না বারে তাহলে এবারের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যাবে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধানের দাম না থাকলেও হতাশা বুকে নিয়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে কৃষক-কৃষানীরা ধান কাঁটা, মাড়াই ও খড় রোদে শুকাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কিন্তু কয়েকদিন পরেই ঈদ।

এই ঈদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কৃষকরা কিভাবে ঈদ উৎসব পালন করবে এ চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার শতশত কৃষক। অন্য দিকে ফুলবাড়ী উপজেলা সরকারি ভাবে ধান ক্রয় শুরু না হওয়া কৃষকরা আরও বেশি দুচিন্তায় পড়েছেন বলে জানা গেছে।

কৃষকরা আরও জানান, সেখানে বিঘা প্রতি খরচ ৯ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে ধান হয় ১৮ থেকে সর্বচ্ছ ২০ মন। আর ধানের বাজার যদি হয় মণ প্রতি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। তাহলে কিভাবে কৃষকরা লাভের মুখ দেখবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ জানান, এ বছর ১১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বোরো ধান চাষ করেছেন। ধান কাঁটা ও মাড়াই প্রায় শেষের দিকে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গড়ে প্রতি বিঘায় ২০ মন বোরো ধান কৃষকরা ঘরে তুলছেন। তবে ধানের দাম না থাকায় কৃষকরা হতাশায় ভোগছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাছুমা আরেফিন জানান, কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। আগামী সোমবার থেকে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪০ টাকা দরে ধান ক্রয় করা হবে।