ঢাকা ০১:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবীতে মাত্র ৪৩ জনের দেহে রয়েছে যে রক্ত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৩:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০১৯
  • ২৬১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘রক্ত চাই, কেউ আছেন? এবি পজিটিভ রক্ত লাগবে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রক্তের জন্য এমন পোস্ট সবারই নজরে আসে। একই রক্তের গ্রুপ অনেকের থাকায় সহজেই সাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু নতুন আবিষ্কৃত রক্তের গ্রুপ ‘গোল্ডেন ব্লাড’ এর মানুষরা কী করেন? সারা পৃথিবীতে এই গ্রুপের রক্ত শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন মাত্র ৪৩ জন মানুষ!

‘গোল্ডেন ব্লাড’ গ্রুপধারী ব্যাক্তির শরীরে ‌‘আরএইচ’ সিস্টেমের কোনো এন্টিজেন থাকে না। এধরণের মানুষদের পৃথিবীর আলো দেখারই কথা না। কারণ এন্টিজেন ছাড়া জীবিত থাকা সত্যিই অসম্ভব। যেসব মানুষদের মায়ের গর্ভে মারা যাওয়ার কথা তারা পৃথিবীর বুকে বিচরণ করছে। এটাই সবচেয়ে আশ্চর্যজনক।

সব মানুষের রক্ত দেখতে লাল বর্ণের হলেও গঠনগত পার্থক্যটা আসলে রক্তে থাকা ৩৪২টি এন্টিজেনে। এদের মধ্যে ১৬০টি এন্টিজেন সবার রক্তেই বিদ্যমান। এগুলোর মধ্যে কারো রক্তে যে কোনো একটি এন্টিজেন যা শতকরা ৯৯ জন মানুষের রক্তেই বিদ্যমান, তার অনুপস্থিতি থাকলে সেই রক্তের গ্রুপকেই ধরা হয় ‘দুর্লভ’ হিসেবে। আর শতকরা ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষের রক্তে থাকে এমন এন্টিজেন কারো রক্তে অনুপস্থিত থাকলে সেই রক্তকে ধরা হয় ‘খুব দুর্লভ’ হিসেবে।

এমন রক্তকে ‘আর-এইচ নাল ব্লাড’-ও বলা হয়। ১৯৩৯ সালে প্রথম এই ব্লাডের কথা গবেষকদের মাথায় আসে। তবে এটা শুধুই তত্ত্ব ছিলো। যদি কারো শরীরে এরএইচ সিস্টেমের কোনো এন্টিজেন না থাকে তবে তার ব্লাডগ্রুপ হবে ‘আর-এইচ নাল’। কিন্তু বাস্তবে যে এটা সম্ভব তা কেউ ভাবেনি। মূলত এধরণের মানুষের শরীরে আরএইচ এন্টজেন বহনকারী জিন অনুপস্থিত থাকে। অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণকারি মানুষের শরীরে জিন জনিত পরিবর্তন এর কারণেও হয়। এই পরিবর্তন হতে পারে দুটি উপায়ে।

১৯৬১ সালে প্রথমবারের মতো এমন রক্তধারী একজন অস্ট্রেলিয়ান নারীর সন্ধান পান তারা। এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে মাত্র ৪৩ জন এমন মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে।  এমন রক্ত নিয়ে জন্ম নেয়া কোনো ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন হলে দেখা দেয় আসল সমস্যা। তাই তাদের জীবনধারণ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

এমন রক্তধারী মাত্র একজনকেই চেনেন সবাই। ২০১৪ সালে থমাস নামের ওই ব্যক্তিকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আটলান্টিকে। গোল্ডেন ব্লাডের ধারক হওয়ায় বাড়তি সতর্কতা হিসেবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে এমন কোথাও ছোটবেলায় তাকে যেতে দিতেন না বাবা-মা। অত্যাধুনিক হাসপাতাল সুবিধা নেই এমন কোনো দেশেও ভ্রমণ করেন না তিনি। সেইসঙ্গে নিজের কাছে একটি কার্ড রাখেন যেখানে তার এই ‘অতি-দুর্লভ’ রক্তের গ্রুপের কথা লেখা থাকে। এর জীবন বাঁচানোর ক্ষমতা অস্বাভাবিক রকমের বেশি হওয়ায় ব্লাড ব্যাংকে স্যাম্পল জমা দেয়ার ক্ষেত্রেও রক্তদাতাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পৃথিবীতে মাত্র ৪৩ জনের দেহে রয়েছে যে রক্ত

আপডেট টাইম : ১২:০৩:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘রক্ত চাই, কেউ আছেন? এবি পজিটিভ রক্ত লাগবে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রক্তের জন্য এমন পোস্ট সবারই নজরে আসে। একই রক্তের গ্রুপ অনেকের থাকায় সহজেই সাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু নতুন আবিষ্কৃত রক্তের গ্রুপ ‘গোল্ডেন ব্লাড’ এর মানুষরা কী করেন? সারা পৃথিবীতে এই গ্রুপের রক্ত শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন মাত্র ৪৩ জন মানুষ!

‘গোল্ডেন ব্লাড’ গ্রুপধারী ব্যাক্তির শরীরে ‌‘আরএইচ’ সিস্টেমের কোনো এন্টিজেন থাকে না। এধরণের মানুষদের পৃথিবীর আলো দেখারই কথা না। কারণ এন্টিজেন ছাড়া জীবিত থাকা সত্যিই অসম্ভব। যেসব মানুষদের মায়ের গর্ভে মারা যাওয়ার কথা তারা পৃথিবীর বুকে বিচরণ করছে। এটাই সবচেয়ে আশ্চর্যজনক।

সব মানুষের রক্ত দেখতে লাল বর্ণের হলেও গঠনগত পার্থক্যটা আসলে রক্তে থাকা ৩৪২টি এন্টিজেনে। এদের মধ্যে ১৬০টি এন্টিজেন সবার রক্তেই বিদ্যমান। এগুলোর মধ্যে কারো রক্তে যে কোনো একটি এন্টিজেন যা শতকরা ৯৯ জন মানুষের রক্তেই বিদ্যমান, তার অনুপস্থিতি থাকলে সেই রক্তের গ্রুপকেই ধরা হয় ‘দুর্লভ’ হিসেবে। আর শতকরা ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষের রক্তে থাকে এমন এন্টিজেন কারো রক্তে অনুপস্থিত থাকলে সেই রক্তকে ধরা হয় ‘খুব দুর্লভ’ হিসেবে।

এমন রক্তকে ‘আর-এইচ নাল ব্লাড’-ও বলা হয়। ১৯৩৯ সালে প্রথম এই ব্লাডের কথা গবেষকদের মাথায় আসে। তবে এটা শুধুই তত্ত্ব ছিলো। যদি কারো শরীরে এরএইচ সিস্টেমের কোনো এন্টিজেন না থাকে তবে তার ব্লাডগ্রুপ হবে ‘আর-এইচ নাল’। কিন্তু বাস্তবে যে এটা সম্ভব তা কেউ ভাবেনি। মূলত এধরণের মানুষের শরীরে আরএইচ এন্টজেন বহনকারী জিন অনুপস্থিত থাকে। অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণকারি মানুষের শরীরে জিন জনিত পরিবর্তন এর কারণেও হয়। এই পরিবর্তন হতে পারে দুটি উপায়ে।

১৯৬১ সালে প্রথমবারের মতো এমন রক্তধারী একজন অস্ট্রেলিয়ান নারীর সন্ধান পান তারা। এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে মাত্র ৪৩ জন এমন মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে।  এমন রক্ত নিয়ে জন্ম নেয়া কোনো ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন হলে দেখা দেয় আসল সমস্যা। তাই তাদের জীবনধারণ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

এমন রক্তধারী মাত্র একজনকেই চেনেন সবাই। ২০১৪ সালে থমাস নামের ওই ব্যক্তিকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আটলান্টিকে। গোল্ডেন ব্লাডের ধারক হওয়ায় বাড়তি সতর্কতা হিসেবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে এমন কোথাও ছোটবেলায় তাকে যেতে দিতেন না বাবা-মা। অত্যাধুনিক হাসপাতাল সুবিধা নেই এমন কোনো দেশেও ভ্রমণ করেন না তিনি। সেইসঙ্গে নিজের কাছে একটি কার্ড রাখেন যেখানে তার এই ‘অতি-দুর্লভ’ রক্তের গ্রুপের কথা লেখা থাকে। এর জীবন বাঁচানোর ক্ষমতা অস্বাভাবিক রকমের বেশি হওয়ায় ব্লাড ব্যাংকে স্যাম্পল জমা দেয়ার ক্ষেত্রেও রক্তদাতাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়।