ঢাকা ০২:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গহীন অরণ্যে ঝর্ণা সুন্দরী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৭:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯
  • ৩৯৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুরমা সীমান্তের গহীন অরণ্যে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম হামহাম জলপ্রপাত। প্রায় ১৬০ ফুট পাহাড়ের ওপর থেকে স্বচ্ছ পানি পড়ছে পাথরের গায়ে। প্রায় ১০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেটে পোঁছাতে হয় এ ঝর্ণা সুন্দরীর আঙিনায়। রোমাঞ্চকর দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাতের ঝর্ণা ধারা যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ঝর্ণার ঝরে পড়া পানি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ছড়া তৈরি করে বয়ে চলেছে। এরকমই বিভিন্ন ছোট-বড় ছড়া পেরিয়ে এ ঝর্ণা সুন্দরীর কাছে পৌঁছতে হয়।

ঝর্ণাটির কাছে যাওয়ার জন্য সাধারণত স্থানীয় অধিবাসীদের থেকে কাউকে গাইড বা পথপ্রদর্শক নির্ধারণ করে পর্যটকরা ভ্রমণ করেন। ঝর্ণায় যেতে হলে কুরমা বন বিটের চাম্পারায় চা বাগান হয়ে যেতে হয়। চাম্পারায় চা বাগান থেকে ঝর্ণার দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। পথে অত্যন্ত খাড়া টিলা পাড়ি দিতে হয় এবং অনেক ঝিরিপথ ও ছড়ার কাদামাটি দিয়ে পথ চলতে হয়। ঝিরিপথে কদাচিৎ চোরাবালুও তৈরি হয়।

এছাড়া গভীর জঙ্গলে বানর, সাপ, মশা এবং জোঁকের অত্যাচার সহ্য করে পথ চলতে হয়। হামহামের রয়েছে দুটো ধাপ, সর্বোচ্চ ধাপটি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে মাঝখানের ধাপে এবং সেখান থেকে আবার পানি পড়ছে নিচের অগভীর খাদে।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় অবস্থিত জলপ্রপাত বা ঝরণা হল হামহাম বা চিতা ঝর্ণা। কমলগঞ্জের একেবারে শেষ গ্রামের নাম কলাবনপাড়া, যেটি তৈলংবাড়ি নামেও পরিচিত। বলতে গেলে এরপর থেকেই আর তেমন কোনো জনবসতি নেই। আর এখান থেকেই শুরু হয় হামহাম যাওয়ার আসল অ্যাডভেঞ্চার। হামহাম যাওয়ার জন্য বনের ভেতর দুটি পথ আছে। বনের শুরুতেই হাতের ডানে ও বামে পাশাপাশি পথ দুটির অবস্থান। একটা দিয়ে যেতে হবে আরেকটা দিয়ে আসবেন। ডানের পথ দিয়ে ঢুকে বাম দিয়ে বের হবেন এটাই ভালো, কারণ ডানের পথটা দীর্ঘ এবং অনেকগুলো উঁচু টিলা পার হতে হয়। হামহাম যাওয়ার জন্য সঙ্গে একজন গাইড নিয়ে যাওয়া অত্যাবশ্যক। কারণ প্রথমবার যারা যাবেন তাদের জন্য রাস্তা ভুল করাই স্বাভাবিক।

এছাড়া ভ্রমণের সময় পাহাড়ি পথে হাঁটার সুবিধার্থে এবং আত্মরক্ষার্থে প্রত্যেকের সঙ্গে একটি করে বাঁশ নেওয়া আবশ্যক। এছাড়া জোকের হাত থেকে রক্ষা পেতে সঙ্গে করে লবণ ও সরিষার তেল নিয়ে নিলে ভালো হয়। হাঁটতে হাঁটতে একসময় পৌঁছে যাবেন কাঙ্ক্ষিত হামহাম জলপ্রপাতের কাছাকাছি। কিছু দূর এগুলেই শুনতে পাবেন হামহাম জলপ্রপাতের শব্দ। চারিদিকে এক শিতল শান্ত পরিবেশ। ডানে বামে কোনোদিক থেকেই আপনার চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

গহীন অরণ্যে ঝর্ণা সুন্দরী

আপডেট টাইম : ০৬:৫৭:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুরমা সীমান্তের গহীন অরণ্যে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম হামহাম জলপ্রপাত। প্রায় ১৬০ ফুট পাহাড়ের ওপর থেকে স্বচ্ছ পানি পড়ছে পাথরের গায়ে। প্রায় ১০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেটে পোঁছাতে হয় এ ঝর্ণা সুন্দরীর আঙিনায়। রোমাঞ্চকর দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাতের ঝর্ণা ধারা যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ঝর্ণার ঝরে পড়া পানি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ছড়া তৈরি করে বয়ে চলেছে। এরকমই বিভিন্ন ছোট-বড় ছড়া পেরিয়ে এ ঝর্ণা সুন্দরীর কাছে পৌঁছতে হয়।

ঝর্ণাটির কাছে যাওয়ার জন্য সাধারণত স্থানীয় অধিবাসীদের থেকে কাউকে গাইড বা পথপ্রদর্শক নির্ধারণ করে পর্যটকরা ভ্রমণ করেন। ঝর্ণায় যেতে হলে কুরমা বন বিটের চাম্পারায় চা বাগান হয়ে যেতে হয়। চাম্পারায় চা বাগান থেকে ঝর্ণার দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। পথে অত্যন্ত খাড়া টিলা পাড়ি দিতে হয় এবং অনেক ঝিরিপথ ও ছড়ার কাদামাটি দিয়ে পথ চলতে হয়। ঝিরিপথে কদাচিৎ চোরাবালুও তৈরি হয়।

এছাড়া গভীর জঙ্গলে বানর, সাপ, মশা এবং জোঁকের অত্যাচার সহ্য করে পথ চলতে হয়। হামহামের রয়েছে দুটো ধাপ, সর্বোচ্চ ধাপটি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে মাঝখানের ধাপে এবং সেখান থেকে আবার পানি পড়ছে নিচের অগভীর খাদে।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় অবস্থিত জলপ্রপাত বা ঝরণা হল হামহাম বা চিতা ঝর্ণা। কমলগঞ্জের একেবারে শেষ গ্রামের নাম কলাবনপাড়া, যেটি তৈলংবাড়ি নামেও পরিচিত। বলতে গেলে এরপর থেকেই আর তেমন কোনো জনবসতি নেই। আর এখান থেকেই শুরু হয় হামহাম যাওয়ার আসল অ্যাডভেঞ্চার। হামহাম যাওয়ার জন্য বনের ভেতর দুটি পথ আছে। বনের শুরুতেই হাতের ডানে ও বামে পাশাপাশি পথ দুটির অবস্থান। একটা দিয়ে যেতে হবে আরেকটা দিয়ে আসবেন। ডানের পথ দিয়ে ঢুকে বাম দিয়ে বের হবেন এটাই ভালো, কারণ ডানের পথটা দীর্ঘ এবং অনেকগুলো উঁচু টিলা পার হতে হয়। হামহাম যাওয়ার জন্য সঙ্গে একজন গাইড নিয়ে যাওয়া অত্যাবশ্যক। কারণ প্রথমবার যারা যাবেন তাদের জন্য রাস্তা ভুল করাই স্বাভাবিক।

এছাড়া ভ্রমণের সময় পাহাড়ি পথে হাঁটার সুবিধার্থে এবং আত্মরক্ষার্থে প্রত্যেকের সঙ্গে একটি করে বাঁশ নেওয়া আবশ্যক। এছাড়া জোকের হাত থেকে রক্ষা পেতে সঙ্গে করে লবণ ও সরিষার তেল নিয়ে নিলে ভালো হয়। হাঁটতে হাঁটতে একসময় পৌঁছে যাবেন কাঙ্ক্ষিত হামহাম জলপ্রপাতের কাছাকাছি। কিছু দূর এগুলেই শুনতে পাবেন হামহাম জলপ্রপাতের শব্দ। চারিদিকে এক শিতল শান্ত পরিবেশ। ডানে বামে কোনোদিক থেকেই আপনার চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করবে না।