বাংলাদেশের পতাকা মানচিত্রে ধান চাষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার মনাগ্রাম এলাকার কৃষক মনজুর হোসেন কৃষিতে অবদান রাখার জন্য একাধিকবার পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। বরাবরই নতুন কিছু করার প্রতি তার আগ্রহের কমতি নেই। চলতি বোরো মৌসুমেও তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসা কয়েকটি জাতের কালো ধান আবাদ করেছেন। বিশেষ করে সবুজ ও বেগুনি পাতার এসব ধানের চারা বাংলাদেশের মানচিত্রের আদলে রোপণ করে তিনি সবার নজর কেড়েছেন।

কৃষক মনজুর হোসেন বলেন, কালো ধানের গাছের পাতা সবুজ ও বেগুনি দুই ধরনেরই হয়। ভিয়েতনাম জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকে নিয়ে আসা এ জাতের চালের কেজি ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাই এবার তিনি থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, জাপান, চীন ও ভিয়েতনাম থেকে কালো ধানের বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করেছেন, যা তিনি রোপণ করেছেন প্রায় দুই একর জমিতে। সৌন্দর্যের কারণেই তিনি চারাগুলো বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার মতো করে রোপণ করেছেন।

এদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও গবেষকরা বলছেন, কালো চালের ভাতও কালো হয়। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এ চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) মো. ছালেকুর রহমান বলেন, মনজুর হোসেন সাতটি দেশের কালো ধানের বীজ সংগ্রহ করেছেন। এর সঙ্গে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) থেকে সর্বশেষ অবমুক্ত করা নতুন জাতের ধানও তার জমিতে চাষ হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে এ ধান আবাদ করে ভালো ফল পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ বলেন, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ কালো চালের উৎপাদন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া গেলে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কালো ধানের এ জাতগুলো ব্রির গাজীপুর কার্যালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয় কুমিল্লার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল মোতালেব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক কৃষিবিদ দীলিপ কুমার অধিকারী বলেন, ‘ব্ল্যাক রাইসের বীজ কুমিল্লাসহ সারা দেশে আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর একই সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (গবেষণা) বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, গত আমন মৌসুমে কৃষক মনজুরের পাঁচ জাতের কালো ধানের জমি পরিদর্শন করেছি। এ ধানের আবাদ পদ্ধতি অন্য ধানের মতোই। এতে অতিরিক্ত সার, পানি কিংবা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কালো ধানের বাজার মূল্যও অন্য ধানের থেকে কয়েক গুণ। ফলে এ ধান আবাদে কৃষকের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর