মৃত্যুর আগে অঞ্জনাকে যে কষ্টের কথা বলেছিলেন কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৃত্যুর আগে অঞ্জনাকে-বাংলা চলচ্চিত্রের শক্তিমান কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ মারা গেছেন। আজ ৬ মার্চ, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

টেলি সামাদের শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা অঞ্জনা। মৃত্যুর খবর শোনার পর স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন তিনি। ফেসবুকে বেশ কিছু ছবি আর ভিডিও শেয়ার করেছেন অঞ্জনা। লিখেছেন তার অনুভূতিও।

অঞ্জনা লিখেছেন, ‘আমার জীবনের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র দস্যু বনহুর থেকে টেলি ভাইয়ের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। সবসময় ওনার সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো। টেলি ভাই নেই কথাটি শুনেই বুকের ভিতর ধাক করে উঠলো!’

‘‘এইতো সেদিন আমি ধানমন্ডিতে একটি অনুষ্ঠানে; হঠাৎ টেলি ভাইয়ের বড় মেয়ে আমাকে কল করলেন, ‘আন্টি, বাবার অবস্থা খুবই খারাপ আমরা পিজি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেছি বাবাকে।’

আমি এক মূহুুর্ত দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে পিজি হাসপাতালে গিয়ে উপস্থিত হই! আমাকে দেখে আমার মনে হলো টেলি ভাই যেনো সুস্থ হয়ে গেছে। উনি কথা বলতে পারছিলেন না, তারপরও আমাকে কষ্ট করে কতো কথা জিজ্ঞাসা করলেন।’

‘‘আমি কাঁদছিলাম। উনি বললেন, ‘আরে অঞ্জনা কান্না করিস না। আমি সুস্থ হয়ে যাবো। তুই আমাকে দেখতে এসেছিস, হাসি মুখে থাক, তাহলে আমার ভালো লাগবে।’ উনি একটু কষ্ট নিয়ে বললেন, ‘তুই আর জায়েদ খান ছাড়া আমাকে একটি লোক দেখতে আসলো না। এতোটা দিন যাবত অসুস্থ। এই কথাটি বলো দীর্ঘ নিশ্বাস নিলো‘’

‘আরে কতো কাজ করেছি সবার সাথে আজ অসুস্থ হয়ে পড়াতে কেউ খোজ নেয় না, বলে কেঁদে দিলেন। আমি বললাম টেলি ভাই কেউ না আসুক আমি তো এসেছি। উনি বললেন, হ বোন।’

‘আজ এই কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে। আমি আমার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র থেকে অসংখ্য, প্রায় ১০০-এর বেশি ছায়াছবিতে টেলিসামাদ ভাইয়ের সাথে কাজ করেছি। আমার প্রযোজনায় নির্মিত প্রতিটি ছায়াছবিতে আমি টেলিসামাদ ভাইকে রেখেছি,’ লিখেছেন অঞ্জনা।

‘আপনি যেখানে থাকেন, ভালো থাকেন,’ লেখার শেষে প্রার্থনা অঞ্জনার।

পারিবারিক দ্বন্দ্বে আটকে আছে টেলি সামাদের জানাজা

সবাইকে কাঁদিয়ে আজ শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ। আজ বাদ মাগরিব পশ্চিম রাজার বাজারে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন আটকে আছে জানাজা।

টেলি সামাদের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বাসা পশ্চিম রাজার বাজারে বাদ মাগরিব হওয়ার কথা থাকলেও হুট করেই ঘোষণা দেয়া হয় বাদ এশায় হবে। আর এ নিয়েই টেলি সামাদের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে প্রথম পক্ষের মেয়ে বিন্দুর বাগবিতন্ডা শুরু হয়েছে।

টেলি সামাদের দ্বিতীয় পক্ষের একমাত্র ছেলে দিগন্ত অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এতদিন অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত করা হয়েছে। এমন কি রাজাবাজারের বাড়িতে একটি ফ্লাটও দেয়া হয়নি। যাই হোক বাবা মারা গেছে আমি তার ছেলে আমারও তো অধিকার আছে৷

আমি তাদের সাথে আলাপ করে জানাজার সময় নির্ধারণ করেছি আপনারা বাদ মাগরিব রাজারবাজারে করেন আর আমি আমার বাসা মগবাজারের দিলু রোডে বাদ এশায় জানাজা করব। কিন্তু হুট করে তারা সময় পরিবর্তন করলো। তাহলে কি আমরা আমার বাবা জানাজা করতে পারবো না? এটা বললেই হবে নাকি!

কে এই টেলি সামাদ?

টেলিসামাদ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অত্যন্ত শক্তিশালী ও জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা। জন্ম ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারী, মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও এলাকায়। ‘১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ দিয়ে তার চলচ্চিত্রে আগমন হয়। চার দশকে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মামুন তার ডাক নাম দিয়েছিলেন টেলিসামাদ। তারপর থেকে তিনি এ নামেই পরিচিত হন। ২০১৫ সালে তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘জিরো ডিগ্রী’ মুক্তি পায়।

টেলিসামাদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। ‘কার বউ’ তার অভিনীত প্রথম ছবি হলেও দর্শকদের কাছে তিনি পরিচিতি পান আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ ছবির মাধ্যমে। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা টেলিসামাদের সংগীতেও রয়েছে সমান পারদর্শিতা। ‘মনা পাগলা’ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। এছাড়া ৫০টিরও বেশি ছবিতে তিনি গানও গেয়েছেন।

সত্তরের দশক থেকে তাকে পর্দায় দেখেছেন দর্শকরা। এ যাবৎ অসংখ্য চলচ্চিত্র-নাটকে নানা ধরনের চরিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে দারুণভাবে। নিজের অভিনয় শৈলি দিয়ে দর্শকদের বিনোদন ও হাসিতে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখতেন টেলিসামাদ। একসময় কমেডিয়ান বললেই চলে আসত তার নাম। সমানতালে অভিনয় করেছেন সিনেমায়, টেলিভিশনে। পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা।

চল্লিশ বছর ধরে যিনি সবাইকে হাসিয়েছেন, জীবন সায়াহ্নে এসে অভাব, জরা, ক্লান্তি আর একাকীত্ব মিলিয়ে দারুন অবসাদগ্রস্থ সেই কৌতুক সম্রাটের মুখের হাসিই নিভে গেছে। অসুস্থ হয়ে আজ স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর