রাতের আগুনে পুড়ে ছাই তাদের স্বপ্ন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগের মধ্যেই এবার খিলগাঁও রেলগেইট সংলগ্ন কামারপট্টি বাজার আগুনে পুড়েছে। বুধবার রাত ৩টার দিকে ওই বাজারে আগুন লাগে।

অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর ১৫টি ইউনিট তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কীভাবে সেখানে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল তা জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। দোকানীরা বলছেন, তাদের লাখ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।

এদিকে, কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠেছে খিলগাঁও কাঁচা বাজারের পরিবেশ। বুধবার রাতে ভালোভাবে রেখে গেলেও মধ্যরাতের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বেশ কিছু দোকান। জীবিকার একমাত্র অবলম্বন শেষ সম্বলটুকু কতটুকু রক্ষা করা সম্ভব সেই চেষ্টা করে ফিরছেন কেউ কেউ।

এক দোকানী বলেন, রাত তিনটা বাজে আমার রুমমেট আমাকে জানায় আগুন লেগে আমাদের দোকানের সব পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এরপরে এসে দেখি, আব্বা বাড়ি থেকে দোকানের জন্য টাকা এনে পণ্য উঠিয়েছিল, তার কিছুই নাই। সব শেষ।

আরেকজন বলেন, এটাই আমার শেষ সম্বল ছিল ভাই। সব শেষ হয়ে গেছে আমার। বুধবার দিবাগত রাত তিনটায় আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানান দোকান মালিকরা। এতে পুড়ে যায় লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল। বৈশাখ ও ঈদকে সামনে রেখে দোকানগুলোতে মালামাল তুলেছিল ছিল বলে জানান তারা।

একজন বলেন, রমজান মাস সামনে রেখে আমরা অনেক বেশি পণ্যই দোকানে রেখেছিলাম। প্রায় ২০ লাখ টাকার মাল ছিল। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা।

আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, ক্ষতির পরিমাণ অধিক। বলতে গেলে মাত্রারিতিক্ত পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। অনেকের আর কিছুই রইল না। সব শেষ। তবে সূত্রপাত সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে এখনো কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইলিয়াছ হোসেন নামের একজন ব্যবাসীয় জানান, খিলগাঁও বাজারে একটি কাপড়ের দোকান আছে তার। তিনি বলেন, ‘বাসায় গিয়ে খাবার খেয়ে মাত্র ঘুমাইছি। তখনই ফোন পাইয়া লাফাইয়া উঠি। দৌড়াইয়া আইসা দেখি আমার দোকানের সব পুড়ে ছাই। আমি এখন কী করবো? আমার তো সব শেষ।’

আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, বাজারে বিভিন্ন রকমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। এর মধ্যে কাপড়, মুদি, প্লাস্টিকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকানের সংখ্যা বেশি। আগুনে হার্ডওয়্যার ও কামারপট্টির দোকানগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

আরেক ব্যবসায়ী মো. ফারুক আহমেদের দুইটি দোকান রয়েছে খিলগাঁও বাজারে। তিনি জানান, এর মধ্যে একটি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ভেতরের কোনো মালামালই বাঁচাতে পারেননি তিনি। অন্য দোকান থেকে কিছু মালামাল বের করে রাখতে পেরেছেন। কিন্তু ভোরের আলোয় আগুনের আতঙ্ক তখনও ছড়িয়ে তার চোখেমুখে।

আবুল কালাম মোল্লা বলেন, রাত তিনটার দিকে আগুন লাগার খবর পান। ছেলে ফরহাদ এবং চায়ের দোকানের একজন কর্মচারীকে সাথে নিয়ে বাজারে এসে দেখেন পুড়ছে তার দোকান। চোখের সামনেই পুড়ে যায় সব। ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল দোকানে। কয়েক দিন আগে ঈদের মাল তুলেছিলাম দোকানে। এখন সব ছাই।

নূর হোসেন নামের আরেক ব্যবাসীয় বলেন, আগে বায়তুল মোকাররমে ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করতাম। ফুটপাত তুলে দেওয়ায় মার্কেটে দোকান নিয়ে নতুনভাবে বেঁচে থাকার যুদ্ধে নামি। কিন্তু তাও এখন শেষ। দুই সন্তানকে নিয়ে কিভাবে দিন চলবে এখন আমার?

এপ্রিলের ১ তারিখে কামারপট্টি বাজারে তৈরি পোশাকের ব্যবসা শুরু করি। নিজের টাকা ও ১ লাখ টাকা ঋণ করে প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল তুলি দোকানে। ব্যবসা করে সংসার চালাতাম এখন ব্যবসাও গেলো, পুঁজিও গেলো। রাতের আগুন ছাই করে দিলো সব স্বপ্ন।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর