মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পদে নজরদারি চলবে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাদকসংক্রান্ত অপরাধ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তফসিলভুক্ত না হলেও ভিন্নভাবে মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনেছে দুদক। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। এমনটাই জানালেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ও মাদকাসক্তি: বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে আমরা ব্যবসায়ীদের তালিকা চাইলে তারা তিন শতাধিক ব্যবসায়ীর একটি তালিকা দিয়েছিল। কিন্তু অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম, তাদের দেওয়া ঠিকানায় কোনো মিল নেই। আবার তাদের কাছ থেকে আরেকটি তালিকা নিলাম। সে তালিকা অনুসন্ধান করে এযাবৎ ১২ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কমিশনের মামলায় কেউ কেউ কারাগারেও আছে। এদের ওপর নজরদারি অব্যাহত আছে।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট এমন হয়ে গেছে যে আমরা যা জানি তা মানি না, যা বলি তা বিশ্বাস করি না, যা বিশ্বাস করি তা বলি না। এ যেন নিজের সঙ্গে নিজেরই লুকোচুরি করা। আজ দেশের উন্নয়ন, দুর্নীতি, মাদক, ধ্বংস-সৃষ্টি যেন একই সূত্রে গাঁথা। একটার সঙ্গে আরেকটি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে।’

তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজ তোমাদের কাছে ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়েছে। আমরা যখন দেখি, এই ফেসবুকে সম্ভাবনাময় কোনো তরুণ সকালে প্রেম করছে, দুপুরে ফেসবুকে বিয়ের ঘোষণা, এমনকি ওই ফেসবুকেই অনাগত সন্তানদের সম্ভাব্য নাম রাখা হচ্ছে, তারপরই ভেঙে যাচ্ছে প্রেম। অর্থাৎ প্রেম, বিরহ, নেশা, তারপর চরম হতাশা এবং জীবন নামক স্বপ্নের মৃত্যু। আমরা হতাশায় নিমজ্জিত এমন প্রজন্ম সৃষ্টি হোক, তা চাই না। সিদ্ধান্ত তোমাদেরই নিতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এখানে এলে মনে হয়, নিজ গৃহে ফিরে এসেছি। দেশের যেকোনো সংকটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে পথ দেখায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু অপ্রিয় একটা সত্য কথা বলি, আমরা যখন ২০১৬ সালে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করি, তখন জানতে পারি, আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও কিছু শিক্ষার্থীও মাদকের মরণ নেশার সঙ্গে জড়িত। জাতির এই শেষ আশ্রয়স্থলেও যদি নেশা চলে আসে, তবে আমরা যাব কোথায়?’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, একসময় সিভিল সার্ভিসসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ চাকরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই প্রাধান্য পেতেন। সে অবস্থাও ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যদি নেশা থাকে, তাহলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মেহ্জাবীন হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা মানসের সভাপতি অধ্যাপক অরূপ রতন চৌধুরী। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সুনিশ্চিত কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি তথ্যমতে, দেশে ৭৫ লাখের বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। এসব মাদকসেবীর ৮০ শতাংশই যুবক, তাদের ৪৩ শতাংশ বেকার। ৫০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

একটি পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, মাদকসেবীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে, অর্থাৎ মাসে ৬০০ কোটি টাকার মাদক ব্যবসা হয়।

সূত্র- প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর