একাদশ সংসদ ভোটে ইভিএম ভাগ্য রাষ্ট্রপতির হাতে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে কি না তা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উপর নির্ভর করছে। কারণ সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সোমবার সংসদে উঠলেও তা এ দিনই পাস করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ক্যাবিনেট সূত্র জানায়, আরপিও সংশোধনে ইসির প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে আইন মন্ত্রণালয় তা মন্ত্রিসভা বৈঠকে তোলার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। সোমবার সেটা তোলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সকাল ১০টায় তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

তবে সোমবার মন্ত্রী সভায় অনুমোদনের পরে কোন ভাবেই তা একই দিনে সংসদে পাস করানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এ বিষয়ে স্পিকার জানান, কোন বিল সংসদে পাস করতে হলে অন্তত ৭ দিন আগে তা সংসদ সচিবালয়কে অবহিত করতে হয়। তবে স্পিকারের ক্ষমতা বলে তা স্বল্প সময়ে উত্থাপণ করা গেলেও বিলটি উত্থাপনের দিন থেকে সংসদ সদস্যদের অবহিত করতে এবং তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কতৃক চূড়ান্ত করতে নূন্যতম ২৪ ঘন্টার জন্য পাঠানো বাধ্যতামূলক। সেকারণে যদিও বিলটি সোমবার সংসদে উত্থাপিত হয় তা একই দিনে পাস করা অসম্ভভ বলে জানান তিনি।

অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি সংসদের মেয়ার আর বাড়ছে না। এবিষয়ে কেউ তার সঙ্গে আলোচনা করেন নি।

সুতরাং ইভিএমের ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে রাষ্ট্রপতির অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে। তিনি চাইলে অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে এটিকে আইনে রুপ দিতে পারেন বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। এবিষয়ে রোববার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন সম্ভব নয়। এ কারণে, সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সভায় এটি তোলা হবে এবং এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা চাওয়া হবে।

বিদ্যমান সময়ের মধ্যে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে না বলেও জানান তিনি।

এদিকে সোমবার শেষ হচ্ছে  জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশন। আবার মঙ্গলবার থেকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিন ক্ষণ গননা শুরু হচ্ছে। ১ নভেম্বর রাষ্টপতির সঙ্গে দেখা করার ১ সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং ডিসেম্বরের শেষের দিকে ভোটগ্রহণ করা হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ৭৫ এর ১ ধারায় বলা হয়েছে‘ কোন মন্ত্রী বিল উত্থাপণের জন্য অনুমতির প্রস্তাব করিতে চাহিলে তিনি অনুরুপ অভিপ্রায় জ্ঞাপন করিয়া সচিবের নিকট ৭ দিনের লিখিত নোটিশ প্রদান করিবেন। তবে স্পিকার পর্যাপ্ত কারণ বশত: এই বিধি স্থগিত করিয়া স্বল্পতর মেয়াদের নোটিশে প্রস্তাবের অনুমতি দিতে পারিবেন।

আবার ৭৭ ধারায় বলা হয়েছে ‘বিলটি যাচাই বাচাই বা চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য নূণ্যতম ২৪ ঘন্টা সময় দিয়ে স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়ে থাকে’। সুতরাং সোমবার ক্যাবিনেটে অনুমোদিত হয়ে কোনভাবেই তা সংসদের শেষ দিনে পাস হওয়া সম্ভব নয়।

সেকারণে বিলটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের  উপর। সংবিধানের ৯৩ এর ১ ধারায় বলা হয়েছে“ রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন কোন আইন জরুরী ভিত্তিতে করা প্রয়োজন তাহলে তিনি তার ক্ষমতাবলে সংবিধানের ৯৩ এর ১ ধারা বলে কোন বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারেন।’

সুতরাং আরপিও সংশোধনের জন্য ইসিকে আপাতত রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
অবশ্য আগেই এর ইঙ্গিত দিয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, যদি চলতি সংসদে আরপিও সংশোধনী বিলটি পাস না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা আইন পাস করা হবে। পরিবর্তি সংসদের প্রথম অধিবেশনে এটি উত্থাপণ করে পাস করানো হবে। যদিও তিনি আশা করেছিলেন চলতি সংসদেই সংশোধিত আরপিও পাস হবে।

এদিকে ইতিমধ্যে দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস করেছে পরিকল্পণা কমিশন। যদিও ইসি থেকে জানানো হচ্ছে এগুলো সংসদ ভোটে ব্যবহার না হলেও আইনী ভিত্তি থাকায় সংসদ পরবর্তী উপজেলা পরিষদসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে।

৩০ আগস্ট ইভিএমের বিধানযুক্ত করে সংশোধিত আরপিও চূড়ান্ত করে কমিশন। পরে প্রস্তাবটি যাচাইয়ের জন্য ৩ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইসি। এদিন প্রস্তাবনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এতে মত দেন। এর বিরোধিতা করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে সভা ত্যাগ করেন আরেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর