‘হৈ হৈ জুমত যেবং, জুমত যেইনে ঘচ্যা সুতো তুলিবং, ঘচ্যা সুতো তুলিনে টেঙা কামেবং।’ এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী চাকমা সম্প্রদায়ের একটি জুমনৃত্য সঙ্গীত। এর বাংলা অর্থ হল- হৈ হৈ জুমে যাব, জুমে গিয়ে তিল তুলা উঠাব, তিল তুলা উঠিয়ে টাকা রোজগার করব। গানটি এখন জুম্ম তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে। মনের আনন্দে গানের সুরে সুরে জুমের পাকা ধানসহ ফসল ঘরে তুলছেন জুম চাষীরা। অনেক জুমক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের চাষীরা এখন ঘরে জুমের পাকা ফসল তুলতে ব্যস্ত। কাটছেন জুমের পাকা সোনালি ধান। পার্বত্যাঞ্চল জুড়ে চলছে জুমের পাকা ফসল কাটার উৎসব। ফি বছর পার্বত্য তিন জেলায় বিস্তর জুমচাষ করেন আদিবাসী পাহাড়িরা। এটি তাদের আদিম পেশা এবং জীবন-জীবিকার অন্যতম উৎস। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবছরও রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই পার্বত্য তিন জেলায় ব্যাপক জুমচাষ হয়েছে। হয়েছে বাম্পার ফলন। এতে হাসি ফোটেছে জুম চাষীদের মুখে। জুমক্ষেতে আবাদ করা সোনালি ফসল এখন ঘরে তুলছেন তারা। জুমের সোনালি ফসল ঘরে তোলার পাশাপাশি আদিবাসীদের ঘরে ঘরে আয়োজন চলছে নবান্ন উৎসবের। জুমের পাকা সোনালি ফসল ঘরে তোলার খুশিতে মন ভরেছে আদিবাসী জুমিয়া তরুণ-তরুণীদের। তারা গানে গানে মাতিয়ে তুলেছেন পাকা ফসলে ভরা সোনালি জুমপাহাড়। জুম চাষীদের মনে এখন ঘরে ফসল তোলার আনন্দ। সরেজমিনে পাকা জুমক্ষেত গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ে পাহাড়ে এখন জুমের পাকা ফসল তোলার ধুম লেগেছে। জুমের পাকা ফসল ঘরে তোলার ভরা মৌসুম এখন। জুমিয়াদের ঘরে ঘরে উঠছে তাদের জুমে ফলানো সোনালি ফসল। তারা ব্যস্ত ফসল ঘরে তুলতে। জুম চাষীরা জানিয়েছেন, উপযুক্ত পরিবেশ ও অনুকূল আবহাওয়ার ফলে জুমে ধানসহ ফসলের বাম্পার ফলন এসেছে। তাই মনে খুশির জোয়ার। তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল পরিষ্কার করে জুমক্ষেতের চাষাবাদ হয়ে আসছে। এবার মৌসুমে কেবল শুরু জুমক্ষেতের পাকা ধান কাটা। জুমে ধান ছাড়াও চাষ হয় মারফা, চিনার, ফুটি, বেগুন, মরিচ, ধুন্দুল, ঢেঁড়শ, কাকরোল, কুমড়াসহ ইত্যাদি মিশ্রফসল। এসব ফসল ঘরে তোলা শেষ পর্যায়ে প্রায়। পাকাধান উঠানোর পর ঘরে উঠবে তিল, যব, তুলা। জুমে বীজ বপনের পর অনেক কষ্টে পাঁচমাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ শেষে ফলানো ফসল দেখলে মুখে হাসি ফোটে জুমচাষীদের। আদিবাসী জুমচাষীরা পৌষ ও মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল সাফ করে ফেলেন। এরপর কিছুদিন রোদে শুকিয়ে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে আগুনে সেগুলো পুড়িয়ে জুমেক্ষেত প্রস্তুত করেন। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসে পোড়ানো জুমের মাটিতে সূঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, তুলা, কাউন, ভুট্টা, ফুটি, চিনার, শিম, যব ইত্যাদি বীজ বপন করা হয়। ছিটানো হয় তিল, মরিচ, ধনেপাতাসহ বিভিন্ন বীজ।