নিজাম (নেত্রকোণা) প্রতিনিধিঃ যুগযুগ ধরে সরকারি খাস জমি দখলে নিয়ে ভোগ করেছেন একটি প্রভাবশালী চক্র। বেদখল হওয়া সরকারি সেই খাস জমি দখলমুক্ত করতে “মৃত্তিকা অভিযান” শুরু করেছেন নেত্রকোণার মদন উপজেলা রাজস্ব প্রশাসন। গেল ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস অভিযান পরিচালনা করে প্রভাবশালী চক্রের কবল থেকে ২২৪.৫৭ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। উদ্ধার হওয়া জমিগুলো সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও অসহায় হতদরিদ্র কৃষক পরিবারে মাঝে বন্দোবস্তু প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত রাজস্ব সভায় সরকারি খাস জমি বেদখল হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রভাবশালী চক্রের কবল থেকে সরকারি খাস জমি দখল মুক্ত করার জন্য “মৃত্তিকা অভিযান” পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন প্রশাসন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ডিসেম্বর মাসে জমি উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস অভিযান করে ২২৪.৫৭ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া জমির বর্তমান মূল্য ৪৯ কোটি ৯২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
উদ্ধার হওয়া জমির মধ্যে রয়েছে, চানগাঁও ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরপুর তহশিলের হাসকুড়ি মৈধাম মৌজার ৫.৯৭ একর। মদন সদর ইউনিয়নের মদন মৌজার ৯.৮৫ একর। গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দশ্রী মৌজার ১৪৫.৩২ একর, মনিকা মৌজার ৪০.২৫ একর ও পদমশ্রী মৌজার ৬.৫৪ একর। মাঘান ইউনিয়নের রানীহালা মৌজার ১৩.১১ একর। তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাঘমারা মৌজার ০.৭৯ একর । ফতেপুর ইউনিয়নের হাসনপুর তহশিলের ফতেপুর মৌজার ৩.১৩ একর। সরকারি খাস জমি উদ্ধারে “মৃত্তিকা অভিযান” অব্যাহত রয়েছে।
উদ্ধার হওয়া জমিগুলো সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও অসহায় হতদরিদ্র কৃষক পরিবারে মাঝে বন্দোবস্তু দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। জমি বন্দোবন্তু নেয়ার জন্য এখন পর্যন্ত ৯৫ টি লিখিত আবেদন উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধারকৃত বোরো জমি এ বছর সহকারি ভূমি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় কৃষকরা চাষাবাদ করেছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মদন উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মোতাহার আলম চৌধুরী বলেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাস জমি দখলে নিয়ে ভোগ করছে। এবার মৃত্তিকা অভিযানে বিপুল পরিমান খাস জমি উদ্ধার করেছে প্রশাসন। আরো কিছু খাস জমি এখনো লোকজনের দখলে রয়েছে। এসব জমি উদ্ধার করে সরকারে নিয়ন্ত্রণে আনা হলে উপজেলার রাজস্ব আয় বাড়বে। অন্যদিকে উদ্ধার হওয়া জমিগুলো অসহায় পরিবারগুলো বন্দোবস্তু পেলে তাদের সচ্ছলতা ফিরবে।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এ.টি.এম. আরিফ জানান, রাজস্ব সভার সিন্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি খাস জমির তথ্য সংগ্রহের জন্য সহকারি (ভূমি) কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়। তাদের দেওয়া জমির তথ্য যাচাই বাচাই করে সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে সরকারের নিয়েন্ত্রনে আনা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া জমি বন্দোবস্তু নেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত ৯৫ টি আবেদন পাওয়া গেছে। আবেদনগুলো যাচাই করে প্রকৃত লোকজনের মধ্যে বন্দোবস্তু দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহ আলম মিয়া জানান, রাজস্ব সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেদখল হওয়া সরকারি খাস জমি উদ্ধারের জন্য “মৃত্তিকা অভিযান” চলছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস অভিযান করে ২২৪.৫৭ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া জমির বর্তমান মূল্য ৪৯ কোটি ৯২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উদ্ধার হওয়া জমিগুলো সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও অসহায় হতদরিদ্র কৃষক পরিবারে মাঝে বন্দোবস্তু প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।