নবাবগঞ্জের দুটি ইটভাটায় চলছে শিশুশ্রম দিয়ে ঝুকিপূর্ণ কাজ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নে জেবিসি ও এনবিএস নামে দুটি ইটভাটায় শিশু শ্রমিকদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্র মতে, দোহার-নবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অন্তত ২৫টি ইটের ভাটা। অধিকাংশ ভাটায় কাজ করছে ১২ বছরের নিচের শিশু শ্রমিক। তবে কয়েকজন ভাটা মালিকের দাবি, বাবা-মায়ের সঙ্গেই তারা ভাটায় আসে। তবে ভাটাগুলোর শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মজুরি নিয়েই সেখানে কাজ করছে।

অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসন মাঝে-মধ্যে লোক দেখানো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের মাসিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার কথা তুলে ধরেন। তারা অভিযোগ করেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় কৃষি ফসল ও গাছ-পালার ব্যাপক ক্ষতি হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরেজমিন জানা যায়, যে শিশুরা ইটভাটায় কাজ করে, তাদের অধিকাংশই এসেছে কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল, সাতক্ষীরা, সিলেট, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলা থেকে। এই শিশু শ্রমিকদের অভিভাবকরা ভাটার মালিকদের কাছ থেকে ছয় থেকে আট হাজার টাকা দাদন নিয়েছেন।

দাদন নেওয়ার কারণে ইটের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে এসব শিশু। কাজ শেষে শিশুরা ভাটাতেই ঘুমায়। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় কাজ। মাঝে কিছু সময় বিরতির পর টানা কাজ করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এসব শিশু শ্রমিক মূলত কাঁচা ইট মাথায় করে বহনের কাজ করে থাকে। আবার কোনো কোনো ইটভাটায় ঠেলাগাড়িতে করে ইট বহন করে। দিনে অন্তত ৫-৭শ ইট বহনের কাজ করে তারা। রংপুর থেকে আসা জেবিসি ইটভাটার শিশু শ্রমিক নাদিম (৮) জানায়, এক বছর হয় সে কাজ করে। জেবিসি ও এনবিএস ইটের ভাটায় তার মতো ১৫ জন শিশু শ্রমিক কাজ করে। সে বলে, ‘আমাগো মতো গরিব মানুষ আর কী করব।’ এক হাজার ইট সাজালে ১৫০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়।কী কাজ করো? জানতে চাইলে নাদিম বলে, ‘মাথায় কইরে‌ রোইদের শুকনা ইট খোলায় তুলি। পুড়া অইলে ওগুলা আবার তুইল্যে আইন্যে সাজাইয়্যা রাখি। বড় কষ্টের কাম।

অনেক সময়ে ইট মাথায় থাইক্যা পায়ে পইড়া ব্যথা পাই। কিন্তু সরদার তখন আর আমাগো দেহে না।’ ওই ভাটার এক নারী শ্রমিক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ছোট শিশুদের স্বল্পমূল্যে দীর্ঘক্ষণ কাজে খাটানো যায় এবং টাকাও কম খরচ হয়। তাই ইটভাটার মালিকরা শিশুদের দিয়ে কাজ করায়।জেবিসি ও এনবিএস ইটভাটার মালিক মোঃ শের আলী এ বিষয় মুঠোফোনে বলেন, শিশুদের মা-বাবা আমার এখানে কাজ করেন। তাই শিশুরাও কাজ করে। আমি টাকা দিয়েই কাজ করাই।এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। আইন অমান্য করে ইটভাটায় ইট নির্মাণে শিশুদের কাজ করানো অবশ্যই অপরাধ। বিষয়টি আমরা দ্রুত দেখব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর