স্মৃতিতে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজনীতির মানসে যে সংগঠনের প্রতি আমার প্রথম ভালোবাসা জন্মেছিল, তা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগ। আর ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পেয়েছিলাম ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর্য। হূদয়ের গহীনে সুরক্ষিত এসব স্মৃতি আজও মনে শিহরণ সৃষ্টি করে। এই আগস্টে ঘাতকের বুলেট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তবে আমার মতো লাখো কোটি বাঙালির হূদয় থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা সরাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু কত বড় নেতা ছিলেন, দেশের প্রতি কতটা ছিলেন নিবেদিত প্রাণ, কত বড় ছিল তার মনের ঔদার্য এবং দলের কর্মীদের প্রতি কতটা ছিল তার ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা-বঙ্গন্ধুর সহচর্য যারা পেয়েছেন, তাদের চেয়ে বেশি কে তা জানে। আমার এমন কিছু স্মৃতি আছে, যার প্রতি দৃষ্টিপাত করতে চাই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বেশ কয়েকবার কাছ থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। তাকে প্রথম দেখি ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকা নরসিংদীর একটি ত্রাণ শিবিরে। তখন অবশ্য ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি পাননি তিনি। ১৯৬৪ তে ভারতের কাশ্মীরের হজরত বাল দরগা থেকে চুল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তত্কালীন পূর্ব-পাকিস্তানে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। এ দাঙ্গায় নরসিংদীর বেশ কয়েকটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের ঘটনায় বেশ কয়েক হাজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ গৃহহীন ও আশ্রয়হীন হয়ে নরসিংদী শহরের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেন। এ আশ্রয় শিবিরেই শেখ মুজিব দাঙ্গাপীড়িত শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছিলেন। তখন আমি ওই ত্রাণ শিবিরে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিলাম বলে শেখ মুজিবকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। সেদিন শেখ মুজিবের বক্তব্যের একটি কথাই আমার মনে আছে, যা তিনি শরণার্থীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না, আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আপনাদের সঙ্গে আছি।’ বঙ্গবন্ধুর ওই আশ্বাসে ত্রাণ শিবিরের শরণার্থীরা ভীষণভাবে উজ্জীবিত হয়েছিল। তার ওইদিনের সাহসী বক্তব্যের কথা আজও মনে শিহরণ জাগায়।
বঙ্গবন্ধুকে দ্বিতীয়বার দেখি ১৯৬৫ সালে। ওই সময় ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে ফাতেমা জিন্নাহসহ বঙ্গবন্ধু রেলযোগে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে নরসিংদী রেল স্টেশনে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে ফাতেমা জিন্নাহ বক্তৃতা করছিলেন। তখন আমরা ছাত্রলীগ কর্মীরা শেখ মুজিব রেলের কোনো কামড়ায় আছেন, তা খুঁজতে থাকি এবং তাকে দেখতে পেয়ে কামরার সামনে জড়ো হই। আমার চোখে এখনও স্পষ্ট দৃশ্যমান- কুমিল্লার খাদি কাপড়ের মুজিব কোট পরিহিত অবস্থায় চিরাচরিত পাইপ টানতেছিলেন শেখ মুজিব। আমরা ভেবেছিলাম তিনি বক্তৃতা করবেন। তার বক্তব্য শোনার জন্য রেলের কামড়ার সামনে আমরা সবাই উদগ্রীব হয়ে থাকি। কিন্তু আমরা অনেক অনুরোধ করার পরও তিনি কিছু বললেন না। শুধু বললেন, ‘তোমরা ফাতেমা জিন্নাহর বক্তৃতা শোন। এখানে আমার কোনো বক্তৃতা নাই। আর নির্বাচনী কাজ কর।’ বড় নেতা হয়েও আমাদের সঙ্গে সেদিন তিনি খোলামেলা অনেক কথা বলেছিলেন। তার এ উদারতা ও বিশেষ নেতৃত্ব গুণের কারণে সেদিন তার প্রতি অগাধ ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছিল।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালাতে থাকে। আর এর বিরুদ্ধে বরাবরই আপসহীন ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির অধিকার আদায়ে তিনি জেল খেটেছেন, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন; তবে দমে যাননি। সময়ের পরিক্রমায় দুই পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক তিক্ত থেকে তিক্ততর হতে থাকে। শেখ মুজিবুর রহমান বুঝলেন- এমন কিছু সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার, যা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকারের রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করবে এবং প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ সুগম করবে। তাই ১৯৬৬ সালের ৫ ফেরুয়ারি ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেরুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা উত্থাপন করেন এবং পরেরদিন সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ছয় দফা উত্থাপন করেন। সেদিন পাকিস্তানের তত্কালীন সেনাশাসক জেনারেল আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষায় ছয় দফা মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান তাতে দমে যাননি।
পরে ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে  ছয় দফা পেশ করেন। এর কিছুদিন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ছয় দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে আবারও শেখ মুজিবুর রহমান পেশ করেন এবং দলীয় কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেন। অল্পদিনের মধ্যে ছয় দফা বাংলার মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে।
কিন্তু পাকিস্তানিরা ছয় দফাকে মানতে পারেনি। তবে শেখ মুজিবকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে সরাসরি অভিযুক্ত করতেও পারেনি। এদিকে শেখ মুজিব  ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সারা বাংলায় জনসংযোগ শুরু করেন। এ সময় তাকে খুলনা, যশোর, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় বারবার গ্রেফতার করা হয়। বছরের প্রথমে তিন মাসে তিনি আটবার গ্রেফতার হন। ৮ মে নারায়ণগঞ্জে জনসভায় বক্তৃতা শেষে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। এরপর ৭ জুন শেখ মুজিব ও আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে ধর্মঘট পালিত হয়। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে তখন আমরাও মুজিবের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে শরিক হয়েছিলাম। এ আন্দোলন চলমান থাকতেই তত্কালীন পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনকে আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে একটি মামলা দায়ের করে।
১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি দায়ের করা ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, শেখ মুজিব ও অন্যরা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। এ মামলার প্রতিবাদে সাড়া বাংলার ছাত্রসমাজ তথা জনগণ শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নেমে আসে। মিছিল মিটিংয়ে ত্রস্ত করে তুলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে। তখন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির আন্দোলনে পুরোপুরি যুক্ত ছিলাম আমি। তবে এ কথা সত্য যে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যে অভিযোগে এ মামলা করেছিল, তারও একটা প্রেক্ষাপট ছিল। মূলত পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার নিশ্চিতে শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। এরূপ অভিযোগ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলা করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।
আন্দোলনের পরিক্রমায় ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান। সেদিন উত্তাল সংগ্রামের যে দাবানল জ্বলে উঠেছিল, তা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ক্ষমতার মদমত্তে অহঙ্কারের পাহাড়ে বসে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান মনে করেছিলেন বাঙালি বোবা দর্শক, আর তার মসনদ চিরস্থায়ী। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির মুক্তি সনদ ছয়দফা ঘোষণার ‘অপরাধে’ ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন বিক্ষুব্ধ বাংলার মানুষ দ্রোহের আগুনে জ্বলে উঠে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান-গণবিস্ফোরণের মুখে আইয়ুব খান ক্ষমতার মসনদ থেকে বিদায় নিয়ে যেতে বাধ্য হন। দীর্ঘ ৩৩ মাস কারাগারে থাকা প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্ত করে আনে বীর বাঙালি।
আইয়ুব খানের শাসনের পতনের পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে প্রধান মার্শাল ল’ এডমিনিস্টার হয়ে পাকিস্তান শাসনের ক্ষমতা পান। তবে পরিস্থিতি তখনও শান্ত হয়নি। এ ক্ষেত্রে একটি ঘটনার উল্লেখ করি। সম্ভবত ১৯৬৯ এর এপ্রিল-মে মাসে নরসিংদী কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে আর্মি জনতার মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে জনতার ইট-পাটকেলে প্রায় ৮-১০ জন পাকিস্তানি আর্মির মাথা ফেটে যায়। এ ঘটনা যখন নরসিংদী শহরে ছড়িয়ে পড়লো, তখন বাড়িতে বসে না থেকে আমি অগ্রজ নিরঞ্জন সাহাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে নরসিংদী শহরের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র দেখতে গেলাম এবং নরসিংদী কলেজেও গেলাম। ওখানকার গোলমালের অবস্থা দেখার জন্য ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে খোঁজখবর নেয়া আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলেই বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। সত্যি কথা বলতে, আমরা সিপাহী-জনতার ওই সংঘর্ষে কোনোক্রমেই জড়িত ছিলাম না। কিন্তু এটা প্রথমে বুঝতে পারিনি যে, ইয়াহিয়ার মার্শাল ল’ যেভাবেই হোক ভঙ্গ হয়েছে। আর এটা ছিল ইয়াহিয়ার প্রতি বাঙালিদের প্রথম ধাক্কা। সংঘর্ষের ঘটনায় আমাকেসহ সর্বমোট ৫ জনকে গ্রেফতার করে নরসিংদী থানায় নেয়ার পর বুঝতে পারলাম আমাদের অপরাধের মাত্রা। তখন নরসিংদী থানা থেকে ঢাকায় কর্মকর্তাদের টেলিফোনে জানানো হয়েছিল এই বলে যে, ছাত্রলীগের নেতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরদিন সকালবেলা Martial Law Regulation G (12MLR)  দিয়ে আমাদের নারায়ণগঞ্জ আদালতে চালান করা হলো। এরপর ১৫ দিন পর বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপে আমরা জামিনে করাগার থেকে মুক্তি পেলাম।
তখন ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ ছিলেন সাহেবজাদা ইয়াকুব খান আর পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন এডমিরাল আহসান খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর প্রভাব ও জনপ্রিয়তা ছিল তত্কালীন পূর্ব-পাকিস্তানে তুঙ্গে। সেদিন বঙ্গবন্ধু যদি আমাদের জামিনের ব্যাপারে তদবির না করতেন তাহলে হয়তো আমরা জামিন পেতাম না। যদিও পরবর্তীতে সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে তেজগাঁও ড্রাম ফ্যাক্টরির নিকট বিচারকার্য চলেছিল। ওই আদালতের চেয়ারম্যান ছিলেন একজন বাঙালি মেজর। সাক্ষ্যপ্রমাণে আমাদের মনে হয়েছিল আমরা দোষী, তাই ১২গখজ এর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে। কিন্তু কোর্ট থেকে আমাদের বলা হলো ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করব না’ বলে UndeZ&taking দিতে। আমাদের উকিলের মাধ্যমে আমরা UndeZ&taking দিলাম এবং আমাদের ক্ষমা করা হলো। জামিন পাওয়ার পর আমার প্রিয় বন্ধু প্রয়াত আলী আকবর আমাদের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে আমাদের মুক্ত করতে সাহায্য করেছিল। আলী আকবর ছিলেন একজন ছাত্রনেতা, মুক্তিযোদ্ধা এবং নরসিংদীতে ছাত্রলীগের একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। বঙ্গবন্ধুও তাকে খুব স্নেহ করতেন এবং ভালোবাসতেন। একদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসায় আমি ও আলী আকবর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাই। সালাম দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘কোনো ভয় পাবি না, কাজ করে যাও, আমি আছি তোমাদের সঙ্গে।’ বঙ্গবন্ধুর মুখে এ কথা শুনে আমরা উত্সাহিত হলাম।
এখানে আর একটি কথা না বলে পারছি না। ওইদিনই প্রথম সামনাসামনি বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। তিনি আমাদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যেখানে বসে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তার পাশেই পর্দা দিয়ে আলাদা রুমে বেগম মুজিব রাতের খাবার রুটি বানানোর জন্য আটা মাখছিলেন। বঙ্গবন্ধু পর্দার এপার থেকে বেগম মুজিবকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘এই যে হাসুর মা শোন, নরসিংদীতে যে ছেলেটা ১২গখজ-এ গ্রেফতার হয়েছে সে এসেছে তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য।’ আমি অবাক হয়ে গেলাম। ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর স্নেহ ও ভালোবাসা যে এত গভীর- তা এর আগে বুঝতে পারিনি। আমি পর্দার অপরদিকে গিয়ে সালাম দিলাম এবং বেগম মুজিব আমাকে বললেন, ‘ভয় পেয় না, কাজ করে যাও, তোমাদের নেতা তো আছেন।’ বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিবের প্রতি আমার শ্রদ্ধার মাত্রা আরও বেড়ে গেল।
কী চমত্কার! কর্মীদের প্রতি নেতা ও তার সহধর্মিণীর কত আন্তরিক ভালোবাসা। এই আন্তরিক ভালোবাসার কথা যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন হূদয়ে অম্লান হয়ে থাকবে। বেগম ফজিলাতুন্নেছা  মুজিব একজন সাধারণ গৃহবধূ হলেও তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অনেক দুর্যোগপূর্ণ সময়ে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য থেকে তাকে পরামর্শ ও উত্সাহ দিয়ে গেছেন বেগম মুজিব। যার ফলে বঙ্গবন্ধু অনেক কঠিন সঙ্কটেও সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন। (চলবে)
লেখক : উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক বর্তমান
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর