ছিটকে পড়লেন রানুও

খালেদা জিয়ার নিজ আসন ফেনী-১-এর (পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া) দায়িত্বে ছিলেন সাবেক এমপি রেহেনা আক্তার রানু। থাকতেন দলের চেয়ারপারসনের কাছাকাছি। এ কারণে অন্য নারীনেত্রীদের চেয়ে দলে তার প্রভাবও ছিল বেশি। শুধু তাই নয়, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে ঝড় তুলতেন সংসদের ভেতরে- বাইরে। তবে এখন সেই রানুর দেখা নেই খুব একটা।

বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের পর কমিটি গঠন নিয়ে দলে প্রতিক্রিয়ার জেরে আপাতত হারিয়ে গেছেন এই নারীনেত্রী। এমনকি আস্থা হারিয়ে এখন আর চেয়ারপারসনের কাছেও ঘেঁষতে পারছেন না তিনি।

দলে গুঞ্জন আচ্ছে, যে কারণে দলের মূল স্রোত থেকে প্রভাবশালী নেত্রী শিরিন সুলতানা ছিটকে পড়েছেন, একই কারণে রানুর ভাগ্যেও নেমে এসেছে অন্ধকার।

রানু সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন। ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যও। নতুন কমিটিতেও তাকে একই পদে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক।

জানা যায়, বিএনপির কমিটি গঠনের পর মহিলা দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় শিরিন ও রানু ছিটকে পড়েন। কমিটিতে মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে শামা ওবায়েদকে বিএনপির নতুন কিমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। তারা দুজনই শিরিন-রানুর জুনিয়র।

জ্যেষ্ঠতার কারণে অস্বস্তিতে পড়েন শিরিন, রানুসহ সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নেত্রীরা। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নেত্রীদের অবস্থান কোথায় হতে পারে এ বিষয়ে জানতে চান তারা। পরে শিরিনকে মহিলা দলের সভাপতি পদে পদোন্নতির আশ্বাস দেন খালেদা জিয়া। একপর্যায়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদমর্যাদা ও অন্য নেত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার দাবি জানান শিরিন। এটিই কাল হয় তার জন্য। ক্ষুব্ধ হন খালেদা জিয়া।

এ সুযোগে চেয়ারপারসনের কান ভারী করে সরিয়ে দেয়া হয় শিরিন ও রানুকে। খবরটি দলে এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। শুধু তাই নয়, তাদের মতামত সমর্থন করায় আরো কয়েকজনকে কাঙ্ক্ষিত পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল, তখনকার সময় আন্দোলন কর্মসূচিতে প্রতিনিয়ত মিছিল নিয়ে সংসদ ভবন চত্বর মাতিয়ে রাখতেন রানুরা। কখনো কখনো রানুসহ অন্য মহিলা সাংসদরা হরতালে নয়াপল্টনে এসেও মাঠ গরম করতেন। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের একাধিকবার ধস্তাধ্বস্তি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে এসব কিছুই এখন অতীত।

২০১৩ সালে সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনার সময় নানা জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন রানু। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় তার ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়া চুদুরবুদুর চইলত ন’ বাক্যটি দেশজুড়ে ঝড় তুলেছিল তখন।

এরপর থেকে সভা-সমাবেশে নেতাকর্মীদের কাছে আকর্ষণীয় বক্তার জায়গা দখল করেন রানু।

তবে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপির পাশাপাশি খালেদা জিয়ার ফেনী-১ আসনের দায়িত্বে থাকায় তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, প্রভাব খাটানোর অভিযোগও আছে। এসব কারণে ফেনীতে তিনি ‘ঘষেটি বেগম’ নামে পরিচিত বলে জানা গেছে।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রানুর কারণেই বিএনপির প্রধান দুর্গ বলে খ্যাত চেয়ারপারসনের নিজ জেলা ফেনীতে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড রুগ্ন ও দেউলিয়া হয়ে গেছে। চেয়ারপারসনের কাছাকাছি থাকার সুবাদে মাত্রাতিরিক্ত স্বেচ্ছাচারিতা ও কতিপয় ব্যবসায়ী নেতার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিএনপিকে অযোগ্যদের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

ওই সময় ফেনী পৌরসভা নির্বাচনে অযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল সেখানে।

বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলার জন্য রেহানা আক্তার রানুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর