শেখ হাসিনার সরে যাওয়ার আগ্রহে সায় নেই নেতাদের

টানা ৩৫ বছর দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এবার আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম জানান সেই আগ্রহের কথা। শনিবার দলীয় আরেকটি বৈঠকে একই আগ্রহের কথা আবারও জানালেন তিনি। তবে এতে সায় নেই দলীয় নেতাদের। নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা বাধাগ্রস্ত হতে দেয়া যাবে না। শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, শেখ হাসিনা এখন বিশ্বনেত্রী, তাই তাঁকে নেতৃত্বে থাকতে হবে। তাঁর নেতৃত্বেই দল এবং দেশ এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন নেতারা।

সন্ধ্যায় গণভবনে দলের জাতীয় কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘৮১ থেকে ২০১৬; ৩৫ বছর। আর, কত? নতুন নেতা নির্বাচন করেন। বঙ্গবন্ধু চারা রোপণ করেছিলেন। সেটা মহীরুহ হয়েছে। আপনারা আবার নতুন করে চারা রোপণ করেন, দলকে সুসংগঠিত করেন।’

বৈঠকে উপস্থিত দলটির কেন্দ্রীয় একজন নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানান। খুলনা ও সিলেট মহানগর এবং সিরাজগঞ্জ ও পঞ্চগড় জেলার নেতারা তাদের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে কোনোভাবেই নেতৃত্ব থেকে না সরার অনুরোধ জানান। কেন্দ্রীয় নেতারাও এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে সাফ জানিয়ে দেন, দলে আপাতত তাঁর কোনো বিকল্প নেই।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। তিনি শুধু দেশের নন, এখন বিশ্বনেতা। তাকে শুধু আওয়ামী লীগের প্রয়োজন এমনটাই নয়, দেশেরও প্রয়োজন। আমরা তাঁকে কোনোভাবেই হারাতে চাই না। আমরা তাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বেই এগিয়ে যেতে চাই।’

এ ব্যাপারে দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাহ উদ্দি বলেন, ‘জননেত্রী তাঁর ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমরা তাঁর নেতৃত্বেই থাকতে চাই। দলে তাঁর কোনো বিকল্প নেই।’

গত ৩৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে তাঁকে সভাপতি নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ। এরপর দেশে ফেরেন তিনি। জাতির জনককে হত্যার পর ভাঙন ধরা আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

১৯৮১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগে কোনো প্রশ্ন উঠেনি। দলের সম্মেলনে তাকে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানায়নি অন্য কোনো নেতা। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিলেও নেতাকর্মীদের অনুরোধে আবার তাঁর সে প্রস্তাব ফিরিয়ে নেন।

আগামী ২২-২৩ অক্টোবরের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোনো নাম উচ্চারিত হচ্ছে না। তবে গত ২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাউন্সিলরা অন্য কাউকে সভাপতি নির্বাচিত করলে আমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবো।’

প্রধানমন্ত্রী যখন এ বক্তব্য দিচ্ছেলেন তখন সংবাদ সম্মেলনে থাকা এক নেতা বলেন, একী বলছেন? এরপর প্রধানমন্ত্রী আবার বলেন, ‘আমিতো দল ছেড়ে যাচ্ছি না। দলেই থাকবো।’

তবে আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প আপাতত দেখছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বলেন, “আমার মনে হয় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চাইছেন আস্তে আস্তে অবসরে যাবেন। তবে এখনই এটা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগে তার কেনো বিকল্প নেই। তিনি যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে অন্য কেউ সাহস দেখাতে পারবেন না।’

সৈয়দ মনজুরুল আরও বলেন, ‘তবে তিনি হয়তো একটু ক্লান্তির কথা বলতে পারেন। ৭০ বছরের একজন মানুষ তো একটু ক্লান্ত হতেই পারেন। কিন্তু তার সমকক্ষ কেউ আওয়ামী লীগে নেই। সর্বগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি তিনিই।”

এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মনজুরুল বলেন, ‘২০১৯ সালের নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হতে হবে। তবে আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে ভাবতে হবে। একজন মানুষের ওপর নির্ভরতা দীর্ঘ মেয়াদে সুফল বয়ে আনবে না। আওয়ামী লীগে এখন থেকেই সেই ভাবনা শুরু হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী হয়তো সেই ভাবনারই ইঙ্গিত দিয়েছেন।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর