ভিন্নধারার চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই

বাগেরহাটের মেয়ে ঈশিকা খান। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ঈশিকা দ্বিতীয়। শৈশবের কিছুটা সময় গ্রামের বাড়িতে কাটালেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকাতেই। মডেলিং, অভিনয় আর উপস্থাপনার পাশাপাশি বর্তমানে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছেন তিনি।

দুষ্টু মিষ্টি অভিনয়ের ঈশিকার সঙ্গে দর্শকের প্রথম পরিচয় মূলত একটি টেলিকম কোম্পানির বিজ্ঞাপন চিত্রের মাধ্যমে। এরপর পর্দায় সাবলীল উপস্থিতি আর টোলপড়া গালের হাসি সময়ের সঙ্গে মসৃণ করেছে ঈশিকার ক্যারিয়ার। হালের এই পরিচিত মুখ তার সাম্প্রতিক ব্যস্ততা ও নানা গল্প নিয়ে খোশ আলাপে জমে ওঠেন জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগে।

আপনার সঙ্গে অনেক দিন পর কথা হলো, তাই না? কেমন আছেন?
ঈশিকা: তা বটে! খুব ভালো আছি।

প্রথমেই আপনার ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই?
ঈশিকা: এইতো সম্প্রতি একটি খন্ড নাটক এবং দুটি সিরিয়ালের কাজ শেষ করেছি। তাছাড়া আমার নাইন এন্ড অ্যা হাফ এবং সম্রাট নামের দুটি নাটক অনএয়ারে আছে এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে আগামীতে প্রায় একই সাথে আরো চারটি নাটক প্রচারে আসবে।

ইদানিং নাটকে আপনার উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। কাজ করার আগে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখেন?
ঈশিকা: প্রথমে গল্পটা জেনে নেই তারপর গল্পের সাথে নিজের চরিত্রের বিশ্লেষনটা কেমন হবে সেটা বিবেচনা করি। একইসাথে ডিরেক্টরের মেকিং দক্ষতা, কাজটি শেষ হতে কতদিন সময় লাগবে এবং কো-আর্টিস্ট কে থাকবেন এগুলো ঠিকভাবে জেনে নেই। এসব ব্যাটে-বলে মিলে গেলে সেই নাটকে কাজ করি।

নাটকে ঈশিকাকে ঝগড়াটে চরিত্রে বেশি দেখা যায়। বাস্তবেও কি ঈশিকা এমন?
ঈশিকা : (হাসি দিয়ে) একদম না। এটা শ্রেফ গল্পের প্রয়োজনে। তবে আমি নিজেই বুঝি না আমি যে সব নির্মাতাদের নাটকে কাজ করি তারা বোধহয় ঝগড়াটে ক্যারেকটারের জন্য আমাকেই সিলেক্ট করেন। আমি চাই সব ধরণের চরিত্রে কাজ করতে। একজন প্রকৃত অভিনেত্রীকে সব চরিত্রে দেখা যায়। ভিউয়ার্সরা আমাকে ঝগড়াটে চরিত্রে দেখে বলেই হয়তো তেমনটাই ভাবে। কিন্তু আবার বাস্তবে জীবনে আমি কিন্তু মোটেও ঝগড়াটে না। যদিও একটু-আধটু রাগ দেখাই সেটাও পরিবারের মধ্যে। আমি বেশ লক্ষ্মী একটা মেয়ে।

আপনাকে তো নাটক একই সঙ্গে বিজ্ঞাপনেও দেখা যায়। কে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে? মডেলিং নাকি অভিনয়?
ঈশিকা : আমার কাছে দুটো কাজই উপভোগের এবং গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখনো শিখছি। দু`জায়গাতেই বেশি বেশি কাজ করে নিজের অভিজ্ঞতাটা বাড়িয়ে নিতে চাই। একজন সত্যিকারের অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।

অভিনয়ের সাথে পেশাদারিত্বের জায়গাটা কেমন বলুনতো?
ঈশিকা: বর্তমানে অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়া যেতে পারে! আগামীতে এই ব্যাপারটা আরো ভালো হবে বলে আমার ধারণা। যেহেতু আমাদের দেশে অভিনয়টা ভালোভাবে রপ্ত করার জন্য উন্নতমানের কোন প্রতিষ্ঠান নেই সুতরাং এটা বেশ কঠিনও হবে বলে আমি মনে করি। আর অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে হলে কাজের প্রতি সিনসিয়ার হতে হবে এবং যে চরিত্রটা পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে হবে সেই চরিত্রের ভিতর নিজেকে ঢুকে যেতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই বলে আমি মনে করি।

অভিনেত্রী না হলে কি হতেন?
ঈশিকা: ছোটবেলায় ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার কথা ভাবতাম। কিন্তু ক্লাস নাইনে সাইন্সে যাওয়ার পর সেটা খুব কঠিন মনে হয়েছিল। এরপর এইচএসসিতে কর্মাসে চলে যাই। সেখান থেকেই কর্মাস নিয়ে পড়ছি। তবে আমার মনে হয় অভিনেত্রী না হলে ব্যাংকার অথবা কোন করপোরেট জব হোল্ডার হতাম।

ফেসবুকে আপনার দুই লক্ষাধিক ফলোয়ার। তাদের সাথে যোগাযোগটা কেমন?
ঈশিক: আমি যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করি কোন মেসেজ কিংবা কমেন্স আসলে উত্তর দেওয়ার জন্য। অনেক সময় একটা উত্তর দিলে দশটা মেসেজ আসে এসময় আর রেসপন্স দেওয়া হয়ে ওঠে না। তবে আমি চেষ্টা করি সবার সাথে হায়/হেলো`র মাধ্যমে যোগাযোগ রাখার জন্য।

আপনি ক্রিকেট খেলা বেশি ইনজয় করেন?
ঈশিকা: সত্যিই তাই! আমার প্রিয় কাজ ক্রিকেট খেলা দেখা। কেউ যদি আমাকে সব কাজ বন্ধ করে দিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ দেখার জন্য স্টেডিয়ামে বসিয়ে দেন তাহলে খেলা দেখেই সারাদিন পার করে দিতে পারি। ক্রিকেট মানেই অদ্ভুত এক পাগলামি কাজ করে আমার ভিতর। বাংলাদেশের সব খেলা দেখি এবং মন থেকে বিশ্বাস করি আমাদের টাইগাররা একদিন ওয়ার্ল্ড কাপ ঘরে নিয়ে আসবেন।

জাগো নিউজ: আপনার দৃষ্টিতে বর্তমানে নাটক নির্মাণের প্রতিবন্ধকতা কি কি?
ঈশিকা: ভালো প্রশ্ন। অনেক সঙ্কট আছে আমাদের, আছে প্রতিবন্ধকতাও। প্রথমে বলবো নাটকের মান। আজকাল নাটকের গুল্পগুলো এমন যে দর্শকদের টানেই না। জোর করে মানুষ হাসানো হচ্ছে। সবার কথা বলছি না, এরই মাঝে ভালো কাজও কিন্তু করছেন অনেকেই। গল্প আর পরিচ্ছন্ন নির্মাণের অভাবের পর আমি মনে করি নাটক নির্মাণের বড় বাঁধা বাজেট। ভালো কাজ করতে হলে চাই সে অনুযায়ী অর্থ সংস্থান। অনেক নির্মাতা আছেন যারা বলেন, ‘ভালোটা দাও, নিজের সেরাটা দাও’। কিন্তু পারিশ্রমিকের বেলায় তারা ভালোটা দিতে চান না। আসলে পারেন না। কারণ, বাজেট থাকে খুব কম। তাই আমরা নতুনরা কম পারিশ্রমিকে ভালোটা দেয়ার চেষ্টা করলেও সিনিয়ররা অনেক সময়ই তাড়াহুরো করে কাজ শেষ করেন। এর যুক্তিও আছে। শ্রমের মূল্য যথাযথ না পেলে কেন একজন নিজেকে খাটিয়ে মারবেন। আমার মনে হয়, নাটকের মান বাড়াতে, ভালো গল্প ও নির্মাণ উপহার দিতে বাজেট বাড়ানো জরুরি একই সাথে শুটিং স্পটের সার্বিক পরিবেশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভালো থাকে না। এদিকেও নজর দিতে হবে। এতে করে নির্মাতা কলাকুশলী এবং শিল্পীরা সবাই স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন। তারপর বুঝতে হবে দর্শকের চাহিদা।

চলচ্চিত্রে কাজ নিয়ে কোন ভাবনা নেই?
ঈশিকা: সবাই চায় শোবিজের সবচেয়ে বড় মাধ্যমটিতে কাজ করতে। আমিও চাই। আমি মনে করি এখানে নিজেকে উপস্থাপন করতে হলে নিজেকে অভিনয়ে ঝানু হতে হয়। তবে বর্তমানে বাণিজ্যিক ঘরানার যে সব চলচ্চিত্র নির্মাণ হতে তাতে কাজ করার ইচ্ছা আমার নেই। আর্ট ফিল্ম কিংবা সাহিত্য নির্ভর অথবা ভিন্নধারার ছবিতে কাজ করতে চাই। কারণ আমি মনে করি সাহিত্য নির্ভর কিংবা বিকল্প ধারার ছবিতে কাজ করলে একজন শিল্পীর কাছ থেকে প্রকৃত অভিনয়ের মাধ্যমে সেরা কাজ বেরিয়ে আসে।

ধন্যবাদ আপনাকে।
ঈশিকা : আপনাকেও ধন্যবাদ। সেইসাথে পাঠকদের জানাই ভালোবাসা। বেশি বেশি দেশি অনুষ্ঠান দেখুন, বিনোদনের সঙ্গে থাকুন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর