সাফল্য নিয়ে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশি করোনা ভ্যাকসিন খরগোশের শরীরে দুই দফা প্রয়োগে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সফল হয়েছে। পরের ধাপে প্রয়োগ হবে ইঁদুরের শরীরে। এটায় সফল হলে সবশেষে মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির এই কাজটি করছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিডেট।

এটি দেশের অন্যতম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। গ্লোব বায়োটেক লিমিডেটের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ড. কাকন নাগ ও চিফ অপারেটিং অফিসার ড. নাজনিন সুলতানার তত্ত্বাবধানে এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। তারা দুই জনই কানাডার পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিক।

গ্লোব বায়োটেক লিমিডেটের আরো ৯ জন কর্মকর্তা ভ্যাকসিন তৈরির কাজে জড়িত। তারা হলেন ড. মো. মহিউদ্দিন, ড. আসিফ মাহমুদ, জুয়েল চন্দ্র বাড়ৈই, মাকসুদুর রহমান, ফখরুল ইসলাম, রনি রায়, মোবারক হোসেন চৌধুরী, জিকরুল ইসলাম ও সমীর কুমার। ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, করোনা ভাইরাসের এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফল হওয়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। তবে স্বাস্থ্য প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করে তারা বলেন, ওরস্যালাইন আবিষ্কার করেছিল বাংলাদেশ। এখন এটি সারা বিশ্বে চলছে। করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেও বাংলাদেশ বিশ্বে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে বিশ্বের ১০টি দেশের প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। ১১তম দেশ হিসেবে যুক্ত হলো বাংলাদেশ। দশম দেশ হিসেবে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিল ভারত।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা এবং ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম শুরু করে গ্লোব বায়োটেক লিমিডেট। পৃথিবীর যত ভাইরাস আছে তাদের জিনোম সিকোয়েন্স সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সকল ডাটা তারা আন্তর্জাতিক সংস্থা (জিন ব্যাংক) এনসিডিআইতে জমা দেয়। জিন ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে তারা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কেন্দ্রে প্রাণীর ওপর প্রাথমিক ট্রায়াল করে।

গত ১০ জুন ল্যাবরেটরিতে দুটি খরগোশের দেহে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে ২১ ও ২৮ জুন আরো দুই দফা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে অ্যান্টিবডি মিলেছে। অর্থাত্ ভ্যাকসিনটি প্রাণীর দেহে প্রাথমিক পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পেরেছে। ভ্যাকসিনের বর্তমান এই অবস্থা একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা।

এখন দ্বিতীয় ধাপে নিয়ন্ত্রিতভাবে ইঁদুরের ওপর আবারও প্রয়োগ করা হবে। এ জন্য ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগবে। ইঁদুরের দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। এক্ষেত্রে মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের ইথিক্যাল কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদিত প্রোটোকল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। সফল হলে বাজারে ভ্যাকসিনটি নিয়ে আসার জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমোদন দেবে।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মানবদেহেও সফলভাবে কাজ করবে এই ভ্যাকসিন। এটি সফল হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার প্রতি আবিষ্কারটি উত্সর্গ করা হবে বলে বায়োটেক লিমিডেটের বিজ্ঞানীরা জানান।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করলে যে সফল হন এটা তার প্রমাণ। দেশে করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে বিশাল কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি হবে। বিশ্বব্যাপী দেশের সুনাম হবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনসিবিআইর (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) ভাইরাস ডাটাবেজ অনুযায়ী গত ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ৫ হাজার ৭৪৩টি সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স জমা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছে ৭৬টি। ঐ সিকোয়েন্সগুলো বায়োইনফরমেটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে গ্লোব বায়োটেক তাদের ভ্যাকসিনের টার্গেট নিশ্চিত করে। ঐ টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজে জমাও দেওয়া হয়। এটা ইতিমধ্যে এনসিবিআইর স্বীকৃতি পেয়েছে। এ সিকোয়েন্স বায়োইনফরমেটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে গ্লোব বায়োটেক তাদের টিকার টার্গেট নিশ্চিত করে। এটা যৌক্তিকভাবে এই ভৌগোলিক অঞ্চলে অধিকতর কার্যকরী হবে বলে তারা আশাবাদী।

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া ও ভারতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। তবে কোনোটিই এখনো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি পায়নি। নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জনসাধারণ পর্যায়ে ভ্যাকসিন পেতে আরো কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর