মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরিতে জয় দেখছে বাংলাদেশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বপ্নমাখা দিনে দুই সেঞ্চুরি; যার একটি রূপ নিল ডাবল সেঞ্চুরিতে। শুরুতে অধিনায়ক মুমিনুল হক ক্যারিয়ারের নবম টেস্ট শতকে বসন্তের সকালটা রাঙিয়ে দেন। শেষটা করেছেন মুশফিকুর রহিম। মিরপুরে তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।

সিকান্দার রাজাকে কাট করেই দৌড়াতে শুরু করলেন মুশফিক। গ্যালারিতে গর্জন। ক্রিজের মাঝপথে থাকতেই দু’হাত শূন্যে ছুড়লেন, পয়েন্ট দিয়ে চার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্কোরবোর্ডের কর্মীরা ১৯৮ পাল্টে মুশফিকের নামের পাশে বসিয়ে দিলেন ২০২। তখনও থামেননি মুশফিক।

শূন্যে তলোয়ারের মতো একবার ব্যাট চালালেন। এরপর ব্যাট মাটিতে ছুড়ে ফেলে খুলে ফেললেন গ্লাভস। পরে দু’হাতে ডায়নোসরের মতো অ্যাকশন নিয়ে তাকালেন ড্রেসিংরুমের দিকে। পরে তিনি জানালেন, ডায়নোসরের অ্যাকশনটা দুই বছরের ছেলে মায়ানের জন্য। ছেলে যে ডায়নোসর খুব ভালোবাসে!

বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক হলেন মুশফিক। পাশাপাশি টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের দৌড়ে তামিম ইকবালকে (৪৪০৫) টপকে শীর্ষে উঠে এলেন মুশফিক (৪৪১৩)।

ছয় উইকেটে ৫৬০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ২৯৫ রানের বিশাল লিডও পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো রান না তুলতেই দুই উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে সোমবার তৃতীয়দিন শেষ করেছে দুই উইকেটে নয় রানে।

তৃতীয়দিন শেষে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে জয়ের সুবাস পাচ্ছে। হাতে দু’দিন থাকায় মুশফিক ধারণা করতে পারেননি এত দ্রুত ইনিংস ঘোষণা করবেন মুমিনুল। ২০৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। আজ বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে বলেই হয়তো ঝুঁকি নিতে চায়নি বাংলাদেশ।

বিকেলে আকাশে মেঘ জড়ো হওয়ায় ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। নাঈম হাসান জিম্বাবুয়ের প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে প্রিন্স মাসভাউরে ও নাইটওয়াচম্যান ত্রিপানোকে ফিরিয়ে দেন। হ্যাটট্রিকের সুযোগ থাকলেও ব্রেন্ডন টেলর সেটা হতে দেননি।

বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটি মুশফিকের। ২০১৩ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে গলে ঠিক ২০০ করে আউট হয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় ২০৬ রান করে মুশফিককে দুইয়ে নামিয়ে দেন তামিম ইকবাল। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে ২১৭ করে সাকিব আল হাসান পেছনে ফেলেন দু’জনকেই।

২০১৮ সালে আবার মুশফিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকায় অপরাজিত ২১৯ রান করে নিজের রেকর্ডটি ফিরে পান। কাল তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি (২০৩*) করে জায়গা করে নিলেন অনন্য উচ্চতায়।

নিয়তিই হয়তো ঠিক করে রেখেছিল টেস্টে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশের উত্তরণে মুশফিকেরই সবচেয়ে বেশি অবদান থাকবে। দ্বিতীয়দিন শেষে আলোটা মুমিনুলের ওপরই বেশি ছিল। কারণ রানটা যে মুশফিকের চেয়ে তারই বেশি ছিল। কাল প্রথম সেশনে মুমিনুলের ডাবল নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল তখন অন্যপ্রান্তে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন মুশফিক।

ঠিক যেন ২০১৮ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকার সেই টেস্টেরই পুনরাবৃত্তি। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের টেলর সেঞ্চুরি করেছিলেন। এবার করলেন ক্রেগ আরভিন। বাংলাদেশের হয়ে মুমিনুল করেছিলেন ১৬১, এই ম্যাচে করলেন ১৩২। মুশফিক সিকান্দার রাজার বলে ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন।

এবারও তার ডাবল সেঞ্চুরির পথে বোলার ছিলেন সিকান্দারই। অদ্ভুত এই মিলে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন মুশফিকও। দিনের খেলা শেষে তিনি বলেন, ‘ঠিক যেন ওই ম্যাচেরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আমি একই ভূমিকায় অভিনয় করে গেছি। অবিকল সবকিছু মিলে যাচ্ছিল। আজ শুধু চেয়েছিলাম মুমিনুল যেন ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারে।’

টেস্টে তো এই মুশফিককেই দেখতে চায় বাংলাদেশ। দু’দিন মিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা ব্যাট করেছেন। সেই অর্থে কোনো সুযোগই দেননি জিম্বাবুয়েকে। কাল প্রথম সেশনে কোনো উইকেট দেননি মুমিনুল ও মুশফিক। ৭৯ রান নিয়ে খেলতে নেমে দিনের শুরুতেই ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান অধিনায়ক মুমিনুল।

দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে এনলোভুকে পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে সপ্তম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। বাকিটা পথ তিনি একের পর এক রেকর্ডই স্পর্শ করেছেন শুধু। মুমিনুলের ২২৪ বলের ইনিংসে ছিল ১৪টি চার।

মুশফিকের ৩১৮ বলের ইনিংসে ২৮টি চার। চতুর্থ উইকেটে ২২২ রান যোগ করেন মুমিনুল-মুশফিক। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নবম সর্বোচ্চ জুটি এটি। একই সঙ্গে ২শ’ ছাড়ানো তৃতীয় জুটি তাদের।

শেষদিকে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন লিটন দাসও। ৯৫ বলে পাঁচ চারে ৫৩ করে আউট হন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর