পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জেতান ওয়াসিম, ইমরান নন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ১৯৯২ সালে ইমরান খানের অধিনায়কত্বের ওপর ভর করেই একমাত্র বিশ্বকাপ ট্রফি বগলদাবা করার স্বাদ পায় পাকিস্তান।

এরপর ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, ইনজামাম-উল-হক, ইউনুস খান, শহীদ আফ্রিদিদের মত গ্রেটদের নেতৃত্ব পাকিস্তান খেলেও বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ অপূর্ণই রয়ে গেছে।

তাই ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয়ে ইমরান খানের চৌকস নেতৃত্বকেই এতদিন সবাই বাহবা দিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রায় তিন দশক পর এসে ৯২’র বিশ্বকাপে ইমরান খানের অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এক পাকিস্তানি ক্রিকেট ভক্ত। তার যুক্তি পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ওয়াসিম আকরাম ও ইনজামাম, ইমরান খান নন।

সম্প্রতি ইয়াহু স্পোর্টসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই পাকিস্তানি ক্রিকেটভক্তের সোজাসাপ্টা মন্তব্য, ‘বিশ্বকাপ জয়ে ইমরানের অবদান নিয়ে যা বলা হয়, তাতে সেটা মিথ্যে ছাড়া আর কিছুই নয়। পুরো টুর্নামেন্টে ইমরান খান এমন কোনো ক্রিকেট খেলেননি যে, বিশ্বকাপ জয়ে তার বড় অবদান আছে বলে মনে করতে হবে।’

এরপর ওই ভক্ত দাবি করেন, ‘১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ে ইমরান খানের অবদান শূন্য।’

এমন মন্তব্যের পেছনে ওই ভক্তের যুক্তি হচ্ছে- ‘৯২ সালের বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচ আমি দেখেছি। বিশেষকরে পাকিস্তানের খেলাগুলো আমার বেশ মনে আছে। সেসব ম্যাচে চোখে পড়ার মতো কোন পারফরমেন্স করেননি ইমরান খান।’

এরপর স্মৃতির পাতা হাতড়াতে থাকেন ওই ক্রিকেটভক্ত। বলেন, ‘ইমরান খান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেলেননি। ওই ম্যাচে ১০ উইকেটে হেরে যায় পাকিস্তান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে আমির সোহেল দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেন। সেই সুবাদে পাকিস্তান জেতে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন ইমরান। একইভাবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেও ডাক মেরেছিলেন তিনি।’

এরপর তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৪ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। সে ম্যাচেও ইমরান খেলেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলে ১০ রান, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ করেছিলেন মাত্র। ’

তিনি প্রশ্ন ছুড়েন, ‘প্রথম রাউন্ডে ইমরান খানের ব্যাটিং পারফরমেন্স এই হলে দলকে কে টেনে নিল সেমিফাইনালে?’

এসময় তাকে তথ্য দেয়া হয়, প্রথম রাউন্ডে ভালো ব্যাটিং না করলেও সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৪ রান করেছিলেন ইমরান। উল্টোপিঠে ওই ভক্ত যুক্তি দেন, ‘সেদিন তার মন্থর গতির ব্যাটিং-ই তো পাকিস্তানকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল। ৯৩ বলে ৪৪ রান করেছিলেন। রানরেটকে তলানিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। শেষে ইনজামাম-উল-হক ৩৭ বলে ৬০ রানের ঝোড়ো ইনিংস না খেললে ফাইনালে ওঠা হতো না পাকিস্তানের।’

এরপর তাকে জানানো হয়, ফাইনালে ইমরান খান ৭০ রানের একটি অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন।

জবাবে তিনি বলেন, তা অস্বীকার করছি না, তবে ওই ম্যাচে রান দিয়ে নয় ওয়াসিম আকরামের ক্ষুরধার ইয়র্কার বোলিং পাকিস্তানকে জিতিয়েছিলে। অ্যালান ল্যাম্ব আর ক্রিস লুইসকে পরপর দুই বলে ফিরিয়েই ইংল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন ওয়াসিম। ওই দুই ব্যাটসম্যান সেট হয়ে গেলে ইমরানের ৭০ রান কোনো কাজে আসত না।

পাকিস্তানের ওই ভক্ত জোর দাবি করেন, ‘ওয়াসিম আকরাম আর ইনজামাম-উল-হকই পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জিততে বড় অবদান রেখেছিলেন। কেবল অধিনায়ক ছিলেন বলেই ইমরানকে এর কৃতিত্ব দিতে রাজি নই আমি। দিন শেষে মানুষ এটাই দেখবে দলের হয়ে কত রান আর কত উইকেট নিয়েছে খেলোয়াড়।’

প্রসঙ্গত, ৯২’র বিশ্বকাপে রাউন্ড রবিন লিগে ৫ ম্যাচের চারটিতেই হেরে বিদায়ের ঘণ্টা শোনা যাচ্ছিল পাক শিবিরে। পরে ইমরান খানের চৌকস অধিনায়কত্বে সে দল শেষ তিন ম্যাচে টানা জিতে চলে যায় সেমিফাইনালে। শেষ চারের লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ড আর ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ঘরে আনে পাকিস্তান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর