ঢাকা ১১:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্যান্ডউইচ’একটি পাখির নাম খাবার নয়,

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩১:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২০
  • ২৩৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্যান্ডউইচ নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে, দুটি পাউরুটির মাঝখানে মাংসের পুরভরা লোভনীয় একটি স্ন্যাক্সের কথা। কিন্তু এখানে এই খাবারটির কথা চিন্তা করলে ভুল করবেন। কারণ আজকের প্রতিবেদনে খাবার নয়, আলোচনা করা হচ্ছে স্যান্ডউইচ নামের একটি শান্ত পাখি সম্পর্কে।

মাঝারি আকারের Thalasseus sandvicensis পরিবারের ভোকাল পাখি স্যান্ডউইচ। পিঠে, ডানায় ও উপরের অংশ ফ্যাকাশে ধূসর রঙের হলেও গলা-বুক ও দেহতলের পালক সাদা। ছোট কালো পায়ের স্যান্ডউইচের দু’পাশের পালকও কালো। এদের ঠোঁটটিও কালো। এরা লম্বায় ৩৫ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার।

আমাদের দেশ ছাড়াও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর-পশ্চিম আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, ভূমধ্য অঞ্চল ও গ্রেট ব্রিটেনে দেখা  মেলে স্যান্ডউইচদের। সাদা মুকুট, কালোক্যাপ ও কপালে সাদা জলজলে কালোটুপি এই তিন প্রকারের স্যান্ডউইচ দেখা যায় বিভিন্ন দেশে।

গড়নে ছোট-মাঝারি। ধূসর শান্ত স্বভাবের পাখি স্যান্ডউইচ। হাওর-বাঁওড়েও দেখা যায় এদের। তবে উপকূলীয় নদ-নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চর-মোহনায় কিংবা খোলা ডিঙ্গিতে বের হলেও দেখা মিলে এ পরিযায়ী পাখিটির। নিমিষেই আপনার চোখে প্রশান্তি দিবে গাছপালাশূন্য নদীর চড়া এলাকায়, আঁকাবাঁকা বয়ে যাওয়া খালে কিংবা ডুবোচরে পুতে রাখা বাঁশের খুটায় বসে থাকা ধূসর রঙের এই স্যান্ডউইচ পাখিটি।

স্যান্ডউইচ দেখতে গাংচিলের মতো মনে হলেও আকৃতিতে ছোট-মাঝারি। চালচলনে গাংচিলের চেয়ে শান্ত। এই পাখিরা খাবারের খোঁজে উপকূলীয় নদ-নদী, বালুকাবেলায়, জেলে পল্লীর আশপাশে কিংবা চরের কৃষি জমিতে ছুটে আসে। নদ-নদীর ছোট মাছ, ছোট কাঁকড়া, বালুচরের পোকামাকড় এদের প্রধান খাদ্য। এরা নোনা পানিতেই স্বাচ্ছন্দভাবে বিচরণ করতে ভালোবাসে। নরম ক্রিক-ক্রিক সুরে ডাকাডাকি করে। শান্ত বলেই হয়তো কেউ এদেরকে তেমন একটা বিরক্তও করে না।

‘স্যান্ডউইচ’ একটি শান্ত পাখি

‘স্যান্ডউইচ’ একটি শান্ত পাখি

দিন রাত ছোট-বড় হওয়া, সূর্য-তারাদের অবস্থান, ম্যাগনেটিক ফিল্ড, মেন্টাল ম্যাপ ও মানবসৃষ্ঠ পরিবেশ নিয়ামকের ওপর স্যান্ডউইচ পরিবারভূক্ত পাখিদের অভিগমন নির্ভর করে। আর এসব কারণে স্যান্ডউইচদের উপকূলীয় অঞ্চলে আগের তুলনায় কম দেখা যায় এমনই ধারণা পাখি বিশেষজ্ঞদের।

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে স্যান্ডউইচদের বাসা তৈরির দৃশ্য কারো চোখে পড়েনি। অঞ্চলভেদে হেরফের থাকলেও পাখি বিশেষজ্ঞরা মার্চ-সেপ্টেম্বর এদের প্রজনন মৌসুম চিহ্নিত করে থাকেন। আটলান্টিক উপকূলে নদ-নদী কিংবা জলাশয়ের কাছে বেলাভূমিতে ঘন জঙ্গলের ঘাস, লতা-পাতায় বাসা বাঁধে এমনটিই জানান পাখিপ্রেমী বিশেষজ্ঞরা। ডিম পাড়ে ১ থেকে ৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১ থেকে ২৫ দিন, আর বাচ্চা স্যান্ডউইচ স্বাবলম্বী হতে ৩০ থেকে ৩৫ দিন সময় লাগে। শীতে বাংলাদেশ ছাড়া পাশ্বর্বর্তী ভারত ও পাকিস্তানেও দেখা যায় পাখিটি।

খুলনা বিভাগীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, মাঝারি অবয়বের পাখি স্যান্ডউইচের ধূসর রঙের মাঝে লুকিয়ে থাকে দর্শনের লোভনীয় কমনীয়তা। পাখি প্রেমিরাই কেবল স্যান্ডউইচের রঙের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন। সুন্দরবন ঘেঁষা নদ-নদীতে কিংবা উপকূলীয় চর-মোহনায় চোখে পড়লেও আগের চেয়ে কমে গেছে এই পাখির সংখ্যা।

পাখি বিশেষজ্ঞ ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক পিযুষ কান্তি হরি বলেন, দিন রাতের হেরফের (ছোট-বড় হওয়া), সূর্য-তারাদের অবস্থান, ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড, মেন্টাল ম্যাপ ও মানবসৃষ্ঠ পরিবেশের ওপর পরিযায়ী পাখি স্যান্ডউইচ পরিবারভূক্ত পাখিদের অভিগমন নির্ভর করে। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে আরো আগেই নানাভাবে বৈশ্বয়িক আবহাওয়া পরিবর্তনের ধাক্কা লেগেছে। যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীব-বৈচিত্র রক্ষায় এসব পাখিদের অবাধ বিচরণে সবারই যত্নবান হতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

স্যান্ডউইচ’একটি পাখির নাম খাবার নয়,

আপডেট টাইম : ০৬:৩১:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্যান্ডউইচ নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে, দুটি পাউরুটির মাঝখানে মাংসের পুরভরা লোভনীয় একটি স্ন্যাক্সের কথা। কিন্তু এখানে এই খাবারটির কথা চিন্তা করলে ভুল করবেন। কারণ আজকের প্রতিবেদনে খাবার নয়, আলোচনা করা হচ্ছে স্যান্ডউইচ নামের একটি শান্ত পাখি সম্পর্কে।

মাঝারি আকারের Thalasseus sandvicensis পরিবারের ভোকাল পাখি স্যান্ডউইচ। পিঠে, ডানায় ও উপরের অংশ ফ্যাকাশে ধূসর রঙের হলেও গলা-বুক ও দেহতলের পালক সাদা। ছোট কালো পায়ের স্যান্ডউইচের দু’পাশের পালকও কালো। এদের ঠোঁটটিও কালো। এরা লম্বায় ৩৫ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার।

আমাদের দেশ ছাড়াও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর-পশ্চিম আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, ভূমধ্য অঞ্চল ও গ্রেট ব্রিটেনে দেখা  মেলে স্যান্ডউইচদের। সাদা মুকুট, কালোক্যাপ ও কপালে সাদা জলজলে কালোটুপি এই তিন প্রকারের স্যান্ডউইচ দেখা যায় বিভিন্ন দেশে।

গড়নে ছোট-মাঝারি। ধূসর শান্ত স্বভাবের পাখি স্যান্ডউইচ। হাওর-বাঁওড়েও দেখা যায় এদের। তবে উপকূলীয় নদ-নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চর-মোহনায় কিংবা খোলা ডিঙ্গিতে বের হলেও দেখা মিলে এ পরিযায়ী পাখিটির। নিমিষেই আপনার চোখে প্রশান্তি দিবে গাছপালাশূন্য নদীর চড়া এলাকায়, আঁকাবাঁকা বয়ে যাওয়া খালে কিংবা ডুবোচরে পুতে রাখা বাঁশের খুটায় বসে থাকা ধূসর রঙের এই স্যান্ডউইচ পাখিটি।

স্যান্ডউইচ দেখতে গাংচিলের মতো মনে হলেও আকৃতিতে ছোট-মাঝারি। চালচলনে গাংচিলের চেয়ে শান্ত। এই পাখিরা খাবারের খোঁজে উপকূলীয় নদ-নদী, বালুকাবেলায়, জেলে পল্লীর আশপাশে কিংবা চরের কৃষি জমিতে ছুটে আসে। নদ-নদীর ছোট মাছ, ছোট কাঁকড়া, বালুচরের পোকামাকড় এদের প্রধান খাদ্য। এরা নোনা পানিতেই স্বাচ্ছন্দভাবে বিচরণ করতে ভালোবাসে। নরম ক্রিক-ক্রিক সুরে ডাকাডাকি করে। শান্ত বলেই হয়তো কেউ এদেরকে তেমন একটা বিরক্তও করে না।

‘স্যান্ডউইচ’ একটি শান্ত পাখি

‘স্যান্ডউইচ’ একটি শান্ত পাখি

দিন রাত ছোট-বড় হওয়া, সূর্য-তারাদের অবস্থান, ম্যাগনেটিক ফিল্ড, মেন্টাল ম্যাপ ও মানবসৃষ্ঠ পরিবেশ নিয়ামকের ওপর স্যান্ডউইচ পরিবারভূক্ত পাখিদের অভিগমন নির্ভর করে। আর এসব কারণে স্যান্ডউইচদের উপকূলীয় অঞ্চলে আগের তুলনায় কম দেখা যায় এমনই ধারণা পাখি বিশেষজ্ঞদের।

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে স্যান্ডউইচদের বাসা তৈরির দৃশ্য কারো চোখে পড়েনি। অঞ্চলভেদে হেরফের থাকলেও পাখি বিশেষজ্ঞরা মার্চ-সেপ্টেম্বর এদের প্রজনন মৌসুম চিহ্নিত করে থাকেন। আটলান্টিক উপকূলে নদ-নদী কিংবা জলাশয়ের কাছে বেলাভূমিতে ঘন জঙ্গলের ঘাস, লতা-পাতায় বাসা বাঁধে এমনটিই জানান পাখিপ্রেমী বিশেষজ্ঞরা। ডিম পাড়ে ১ থেকে ৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১ থেকে ২৫ দিন, আর বাচ্চা স্যান্ডউইচ স্বাবলম্বী হতে ৩০ থেকে ৩৫ দিন সময় লাগে। শীতে বাংলাদেশ ছাড়া পাশ্বর্বর্তী ভারত ও পাকিস্তানেও দেখা যায় পাখিটি।

খুলনা বিভাগীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, মাঝারি অবয়বের পাখি স্যান্ডউইচের ধূসর রঙের মাঝে লুকিয়ে থাকে দর্শনের লোভনীয় কমনীয়তা। পাখি প্রেমিরাই কেবল স্যান্ডউইচের রঙের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন। সুন্দরবন ঘেঁষা নদ-নদীতে কিংবা উপকূলীয় চর-মোহনায় চোখে পড়লেও আগের চেয়ে কমে গেছে এই পাখির সংখ্যা।

পাখি বিশেষজ্ঞ ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক পিযুষ কান্তি হরি বলেন, দিন রাতের হেরফের (ছোট-বড় হওয়া), সূর্য-তারাদের অবস্থান, ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড, মেন্টাল ম্যাপ ও মানবসৃষ্ঠ পরিবেশের ওপর পরিযায়ী পাখি স্যান্ডউইচ পরিবারভূক্ত পাখিদের অভিগমন নির্ভর করে। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে আরো আগেই নানাভাবে বৈশ্বয়িক আবহাওয়া পরিবর্তনের ধাক্কা লেগেছে। যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ও জীব-বৈচিত্র রক্ষায় এসব পাখিদের অবাধ বিচরণে সবারই যত্নবান হতে হবে।