প্রখর রোদ ও প্রবল দাবদাহে ট্র্যাকে গড়ালো এবারের জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা। প্রচণ্ড গরমে শক্তি ও উদ্যম ধরে রাখতে ঘন ঘন খাবার স্যালাইন ও লেবু পানি গ্রহণ করছিল এর বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী অ্যাথলেটরা। একেএম শামসুজ্জোহা ফাউন্ডেশনর পৃষ্ঠপোষকতায় এবারের জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিস আসরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা আশা করছিল অংশগ্রহণকারী জেলা দলগুলো। কিন্তু বাস্তবে এবারের আসরের শুরুতেই অংশগ্রহণকারী দলগুলে শোনালো একগাদা অভিযোগ-অনুযোগ। গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে দুইদিনব্যাপী একেএম শামসুজ্জোহা স্মৃতি ৩১তম জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা। আসরে বালক-বালিকা ও কিশোর-কিশোরী বিভাগের ১৯ ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে দেশের ৬৪ জেলার পাঁচ শতাধিক অ্যাথলেট। গতকাল সকালে বালক বিভাগের ৪০০ মিটার হিটে প্রথমস্থান অধিকারী গাইবান্ধা আন্তঃস্কুল চ্যাম্পিয়ন আনিসুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড গরমে প্রথমে সমস্যা হচ্ছিল তার। পরে ঘন ঘন খাবার স্যালাইন ও লেবু পানি গ্রহণ করার পর স্বস্তি ফেরে তার। গাইবান্ধা জেলা দলের ম্যানেজার ফিরোজ খান বলেন, প্রচণ্ড গরমে অ্যাথলেটদের মাংসপেশিতে খিঁচ ধরাটা (ক্র্যাম্প) অস্বাভাবিক নয়। এমন গরমে অ্যাথলেটদের জন্য পর্যাপ্ত খাওয়ার বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ রাখা উচিত। আমরা নিজেদের উদ্যোগে বিশুদ্ধ পানি, ওরস্যালাইন সংগ্রহ করছি ছেলে-মেয়েদের জন্য। এবারের জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার বাজেট ১০ লাখ টাকা। কিন্তু আসরে দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত জুনিয়র অ্যাথলেটদের আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ অংশগ্রহণকারী জেলা দলগুলোর। গোপালগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে দম বন্ধ করা অস্বাস্থ্যকর ঘরে রাত্রি যাপন করতে হচ্ছে কোমলপ্রাণ অ্যাথলেটদের। প্রতিযোগিতার দিন ভেন্যুতে বিশুদ্ধ খাবার পানিও হাতে পাচ্ছে না তারা। আসরে অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা দেখেও নাখোশ অংশগ্রহণকারী জেলা দলগুলোর কর্মকর্তারা। খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অংশগ্রহণকারী ক্লান্ত শ্রান্ত ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঢাকায় পৌঁছে শুরুতেই। আমরা ঢাকায় পৌঁছে দল নিয়ে সরাসরি হাজির হই অ্যাথলেটিক ফেডারেশনে। মেডিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে সেখানে অ্যাথলেটদের বসে থাকতে হয় ৫ ঘণ্টা।
রেকর্ডে আলোকিত উজ্জ্বল
কিশোর বিভাগে লং জাম্পে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছে উজ্জ্বল চন্দ্র সূত্রধর। গতকাল লং জাম্পে প্রথম স্থান অর্জন করে নায়ায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই কিশোর অ্যাথলেট। এতে উজ্জ্বল চন্দ্র সূত্রধর লাফ দিয়ে পার করে ৭.০৯ মিটার। জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে এই ইভেন্টে আগের রেকর্ডটি ছিল ৭.০৭ মিটার। ৩১তম জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় গতকাল চূড়ান্ত হয় পাঁচটি ইভেন্টের। বালক বিভাগের হাই জাম্পে ১.৬৮ মিটার উচ্চতায় লাফিয়ে শিরোপা জেতেন শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার হাবিবুর রহমান সৈকত। এতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয় যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও আমিনুর রহমান। বালিকা শটপুট নিক্ষেপে প্রথম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) লাবনী আক্তার। লাবনী পার করে ৮.৭৯ মিটার। এতে পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার দুই প্রতিযোগী এমেলী ও হ্যামেলি অর্জন করেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান।
তৃণমূল পর্যায়ে কার্যক্রম চাই
গতকাল বিকালের আগে নিষ্পত্তি হয় পাঁচটি ইভেন্টের । এর ১৫ পদকের ১৪টিই জেলা দলগুলোর অ্যাথলেটদের গলায় ঝোলে। শুধু বালিকা শটপুটের প্রথম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাথলেট। আর বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসকে এগিয়ে নিতে তৃণমূল পর্যায়ে উদ্যোগ ছাড়া গতি নেই বলে মনে করেন এর কোচেরাও। সাবেক তারকা ও বর্তমানে নোয়াখালী জেলা দলের কোচ রফিকুল্লাহ আখতার মিলন বলেন, আপাত আন্তর্জাতিক মানের কথা ভাবা অবান্তর। তবে এশিয়ান মানে পৌঁছানো অবশ্যই সম্ভব। পাশের দেশ শ্রীলঙ্কার অ্যাথলেট সুশান্তিকা এর উদাহরণ। তবে এজন্য আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে নজর দিতে হবে। খেলাটিতে ছেলেমেয়েদের আগ্রহ তৈরি করতে উদ্যোগ নিতে হবে। এতে ভূমিকা নিতে হবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। জেলাগুলোর কার্যক্রমে মনিটরিং নেই বললেই চলে। নোয়াখালী জেলা এক সময় ক্রীড়া কার্যক্রমে মুখরিত থাকতো। জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৩ বছর চলছে। এ সময়ে অ্যাথলেটিকসের কার্যক্রম দেখতে পেয়েছি একবারই মাত্র। পরিকল্পিত নিয়মিত কার্যক্রম রয়েছে বিকেএসপির। তারা নতুন অ্যাথলেটও উপহার দিচ্ছে। তবে তা প্রত্যাশার তুলনায় কম। বিকেএসপি কোচ আবদুল্লাহ হেল কাফি বলেন, বিকেএসপিতে একটি কাঠামোর মধ্যে থাকে অ্যাথলেটরা। সেখান থেকে বেরিয়ে ভিন্ন কাঠামো ও পরিস্থিতিতে গিয়ে ঠিক নিজেদের ধরে রাখতে পারছে না তারা।