খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত বালিয়াকান্দির গাছিরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  শীতের আগমনে খেজুর রস-গুড় সংগ্রহের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর, বহরপুর, নারুয়া, জামালপুর, জঙ্গল, ইসলামপুর ও বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের শীত মৌসুমের শুরু থেকেই সুমিষ্ট খেজুর রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত সময় পার করে চলেছে গাছিরা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভীমনগর গ্রামের মৃত. আফছার মিয়ার ছেলে গাছি ওয়াজেদ আলী মিয়া গত রবিবার বিকালে জানান, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে রস থেকে গুড় সংগ্রহের জন্য শীত আসার সাথে সাথে খেজুর গাছ পরিষ্কার শেষে সাত দিন পর প্রথম চাঁচ দেয়া হয়। চাচের উপর থেকে নিচের দিকে নালী তৈরী করে বাঁশের নল বসিয়ে নলের দুই পাশে বাঁশের শলার খুটি বসিয়ে মাটির হাড়ি পেতে রাখতে হয়। পর দিন খুব সকালে প্রতিটি গাছ হতে রসের হাড়িগুলো নামিয়ে রস একত্র করে কড়াইতে জাল দিয়ে গুড় বা পাটালী তৈরি করা হয়।
খেজুর গাছ প্রতি সাত দিন পর পর চাচ দিয়ে এভাবে রস সংগ্রহ করতে হয়। তিনি আরো জানান, এ বছরে এক শত খেজুর গাছ ঝুরেছেন। প্রতিদিন খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে তা জ্বালানোর কাজ শেষে গুড়-পাটালী তৈরী করে বাজারে নিয়ে ভেজাল মুক্ত গুড় এবং পাটালী বানিয়ে ভাল দামে বিক্রয় করে তার সংসার চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ইন্দুরদী গ্রামের মৃত আচমত আলীর মৃধার ছেলে মো. হাসেম মৃধা জানান, তার পিতার পেশা আঁকড়ে ধরে তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে তা দিয়ে তার সংসার পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমান প্রজম্মের লোকেরা এই খেজুর গাছ ঝুরার কাজ করতে চায় না বলে অনেক খেজুর গাছ পরে আছে বলে দেখা যায়। ভীম কামার জানান, গাছিরা শীত মৌসুমে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য তাদের ব্যবহৃত নতুন ও পুরাতন ছেনদাগুলো মেরামত করার জন্য আসছেন। বর্তমান লৌহ, ইস্পাত ও কয়লার দাম বেশি হওয়ায় একখানা ছেনদা তৈরি করতে প্রায় এক হাজার হতে বার শত টাকা খরচ হচ্ছে। প্রভাত পাল জানান, এই মৌসুমে মাটির হাড়ি তৈরি করে সেটি পুড়িয়ে রাখলে হাড়ির চাহিদা এবং ভাল দামে বিক্রয় করে লাভবান হওয়া যায়।
উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ইন্দুরদী গ্রামের আসাদ মোল্লা জানান, এক সময় এ অঞ্চলে অনেক খেজুর গাছ ছিল কেটে ফেলার কারণে আগের তুলনায় বর্তমান খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। খেজুর রস, গুড়-পাটালীর স্বাদ ভাল এবং চাহিদা বেশি হওয়ায় খেজুর রসের ভিজাপিঠা, কাঁচা রসের ক্ষীর, পায়েস, ভাপা পিঠা, পাটালী সবার মুখে যেন শীতকালে নিত্য দিনের সঙ্গী হয়ে ছিল। খেজুর রসের গুড় এবং পাটালী তৈরী করে এলাকার মানুষের শীতের পিঠা খাওয়া, পরিবারের চাহিদা মিটানোসহ বাজারে বিক্রয় করে লাভবান হয়ে থাকতেন এলাকার গাছিরা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শাখাওয়াত হোসেন জানান, গাছিদের পর্যাপ্ত দিক নির্দেশনা ও নতুন গাছ রোপনে উদ্ভুদ্ধ করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর