২৫০ চ্যানেল নিয়ে চালু হচ্ছে ডিটিএইচ সেবা

রাস্তায় ডিশ ব্যবসায়ীদের তারের জটলা আর বাসায় টেলিভিশনে বিভিন্ন চ্যানেলের ঝিরঝির চিত্র মেনে নিয়ে আর বেশি দিন মোটা অঙ্কের বিল দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। হঠাৎ করে ডিশ লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়া কিংবা অল্প চ্যানেল দেখে মাস শেষে মোটা অঙ্কের বিল পরিশোধেও বাধ্য করতে পারবে না স্থানীয় মাস্তান ও ডিশ ব্যবসায়ীরা। কারণ, শিগগিরই বাংলাদেশে চালু হচ্ছে তারযুক্ত ডিশ ব্যবস্থার বিকল্প ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ব্যবস্থা, যাতে ২৫০টি চ্যানেল দেখা যাবে।

কোনো তার থাকবে না, ঝিরঝির হবে না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা বিব্রতকর অথবা অন্য কোনো কারণে দেখতে চান না, এমন চ্যানেলগুলো বন্ধ করে রাখতে পারবেন নিজেই। প্রতি মাসে ডিশ বিল বাবদ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা গোনারও দরকার হবে না। কারণ ডিটিএইচ ব্যবস্থায় বিলের পরিমাণ হবে আরো কম। এ বছরই রাশিয়ার একটি কম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ডিটিএইচ বাজারে নিয়ে আসার কথা রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেড ও আরেক প্রতিষ্ঠান বায়ার মিডিয়া লিমিটেডের।

তবে ডিশ ব্যবসায় কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না সরকার। গ্রাহকের জন্য বিদ্যমান ডিশ লাইন ব্যবস্থা ও ডিটিএইচ সেবা উভয়ই উন্মুক্ত থাকবে। গ্রাহক তার পছন্দমতো যেকোনোটি গ্রহণ করতে পারবে। তবে ডিটিএইচ ব্যবস্থায় কম খরচ ও কম জটিলতায় অধিকসংখ্যক চ্যানেল এবং স্বচ্ছ ছবি ও শব্দ পাওয়া নিশ্চিত হবে বিধায় এ সেবার দিকেই গ্রাহকের ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

ডিটিএইচ ব্যবস্থায় উচ্চ ক্ষমতাধর জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিভিশন সিগন্যালকে গ্রাহকের টেলিভিশনে নিয়ে যায় একটি ছোট অ্যান্টেনা ও একটি স্যাটেলাইট রিসিভার। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এ ব্যবস্থা চালু আছে। গ্রাহকদের নির্দিষ্ট মূল্যে অ্যান্টেনা ও স্যাটেলাইট রিসিভার কিনে বাসায় স্থাপন করতে হয়। এ ছাড়া নির্দিষ্ট মেয়াদে ডিটিএইচ সরবরাহকারী কম্পানির কার্ড কিনে তা ব্যবহার করতে হয়। এই কার্ডের মূল্য বর্তমানে গ্রাহকদের দেওয়া ডিশ বিলের চেয়েও কম হবে। তবে ডিটিএইচ ব্যবহারে সব সময় ভালো ছবি ও শব্দ পাওয়া গেলেও বৃষ্টির সময় ভালো ছবি ও শব্দ পাওয়া যায় না। বৃষ্টি যাতে এ সেবা বিঘ্নিত করতে না পারে, সে জন্য এখনো কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়নি।

তথ্যসচিব মর্তুজা আহমেদ বলেন, দুটি কম্পানিকে ডিটিএইচ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের ২০১৪ সালের মধ্যে এ সেবা চালুর শর্ত ছিল। তবে পরে আরো এক বছর বাড়িয়ে দিয়েছি। আশা করি, এ বছরের মধ্যে ডিটিএইচ সেবা চালু হবে। দুটি কম্পানিই একসঙ্গে কাজ করবে। তবে ডিটিএইচ সেবা চালু হলেও বিদ্যমান ডিশ ব্যবস্থা বাতিল হবে না। গ্রাহক তার সুবিধামতো কোনটি ব্যবহার করবে, সে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায় যে ডিটিএইচের দিকেই ঝুঁকবে মানুষ। কারণ, এতে কোনো তারের ঝামেলা নেই। ছবি ও শব্দ পরিষ্কার থাকবে। ২৫০টি চ্যানেল দেখতে পারবে এবং বিলও এখনকার ডিশ বিলের চেয়ে কম হবে। আর এতে নগরের পরিবেশ ও দুর্ঘটনাও কমবে। কারণ, রাস্তাঘাটের খুঁটিতে যে পরিমাণ তারের জটলা রয়েছে, তার ৭০ থেকে ৮০ ভাগই ডিশ ব্যবসায়ীদের। এগুলো তখন কমে যাবে।

বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেড সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো এক আবেদনে বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড ও সংসদ টেলিভিশন তাদের ডিটিএইচ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সম্প্রচারের অনাপত্তি চেয়েছে। গত ১৩ মে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এস এম মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তাতে বেক্সিমকোকে অনাপত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এসব বিষয়ে কথা বলতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। তবে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেডের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে তিন লাখ গ্রাহক নিয়ে ২০১৪ সালের শেষ দিকে এ সেবা শুরু করার কথা ছিল কম্পানিটির। চালুর পরের বছর থেকে বার্ষিক চার লাখ করে নতুন গ্রাহক সংযুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা তাদের। রাশিয়ার জিএস গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তাদের ডিটিএইচ সেবায় দেশীয় ও আঞ্চলিক চ্যানেলগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের বিখ্যাত টিভি চ্যানেলগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বেক্সিমকোর ডিটিএইচ সেবার নেটওয়ার্কের আওতায় থাকবে পুরো দেশ।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ডাউনলিংক করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রদর্শনের জন্য ডিটিএইচ প্রযুক্তি সংস্থাপন ও দর্শক-ভোক্তাদের সেবা দেওয়ার জন্য ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেড ও একই বছরের ২০ অক্টোবর বায়ার মিডিয়া লিমিটেডকে লাইসেন্স দেয় সরকার। লাইসেন্স ফি বাবদ এককালীন দুই কোটি টাকা এবং আরো দুই কোটি টাকা জামানত দিয়ে এ লাইসেন্স পায় তারা। লাইসেন্সের শর্তে প্রতিবছর এক কোটি টাকা করে লাইসেন্স নবায়ন ফি দেওয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে। গত বছরই প্রতিষ্ঠান দুটির ডিটিএইচ সেবা চালুর শর্ত ছিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের। তবে তা পারেনি প্রতিষ্ঠান দুটি। সময়মতো চালু করতে না পারায় ওই বছরের জন্য লাইসেন্স নবায়ন ফি মওকুফ না করে এ বছরের মধ্যে অবশ্যই চালুর শর্ত দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

লাইসেন্সের শর্তে বলা হয়েছে, ডিটিএইচ সেবাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার অনুমোদিত টিভি চ্যানেলসহ সর্বাধিক ২৫০টি চ্যানেল ডাউনলিংক করতে পারবে। ভবিষ্যতে এর অধিক চ্যানেল ডাউনলিংক করতে চাইলে সে জন্য কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমোদন নিতে হবে। ডিটিএইচ সেবা চালুর জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগের দরকার হলে তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় করতে হবে। তবে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীকে কোনোভাবেই ৪৯ শতাংশের বেশি শেয়ার দেওয়া যাবে না।

ডিটিএইচ সেবার ওপর সরকারের কর্তৃত্বের কমতি থাকবে না। লাইসেন্সিং শর্তের ১৩ নম্বরে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অথবা জরুরি অবস্থায় (যুদ্ধের সময় অথবা এই জাতীয় পরিস্থিতিতে) অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতাসহ লাইসেন্সের স্থাপনা অধিগ্রহণের ক্ষমতা লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করবে। লাইসেন্স গ্রহীতা এবং কনটেন্ট প্রোভাইডারের (টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ) মধ্যে যে চুক্তিই থাকুক না কেন লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বা অন্য যেকোনো আইনানুগ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই তাৎক্ষণিকভাবে টিভি চ্যানেল বা যেকোনো কনটেন্ট সম্প্রচার লাইসেন্স গ্রহীতা বন্ধ করবে।’

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর