হাওর বার্তা ডেস্কঃ আপনি নতুন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের খোঁজ করতে চান, তবে কোথা থেকে শুরু করবেন? এ জন্য কি কোনো জলাশয়ে অথবা দূরবর্তী দ্বীপে যাবেন? ভালো, তাহলে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানো যায় এমন দাড়ি হলে কেমন হয়? মাইকেল মোসলি এ ব্যাপারটি নিয়েই অনুসন্ধান করেছেন। দাড়ির সমালোচনাকারীরা বলে থাকেন যে দাড়ি যে শুধু বিরক্তিকর একটি ব্যাপার তাই নয়, অস্বস্তিকর ব্যাকটেরিয়ার আশ্রয়স্থলও বটে। তা হলে দেখা যাক যে দাড়িতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এমন কিছু কি রয়েছে?
যারা দাড়িকে ভয় পান তারা নিউ মেক্সিকোর গবেষণাটির কথা বলেন যেখানে দৈব চয়নে নির্ধারণ করা কিছু দাড়ির মধ্য মলে থাকা এন্টেরিক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে পেয়েছেন। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে কিছু দাড়িতে টয়লেটের চেয়ে বেশি দুর্গন্ধ রয়েছে। কিন্তু এতে কি দাড়ির মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে সঠিকভাবে প্রতিফলন ঘটেছে?
আমেরিকান একটি হাসপাতাল আগেরটার চেয়ে অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এমন একটি গবেষণা করেছে। হসপিটাল ইনফেকশন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দাড়িওয়ালা ও দাড়িহীন ৪০৮ জন হাসপাতাল কর্মচারীর মুখমণ্ডল পরীক্ষা করেন গবেষকেরা। এ গবেষণাটি করার তাদের যথেষ্ট কারণও ছিল। হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত সংক্রমণ পরে ‘রোগ ও মৃত্যুর’ একটি বড় কারণ। অনেক রোগী হাসপাতাল থেকে এমন কিছু রোগ পেয়ে থাকে হাসপাতালে প্রবেশের আগে তাদের দেহে ওই রোগগুলো ছিল না। হাসপাতাল পরিদর্শনে যাওয়া অথবা হাসপাতাল স্টাফদের হাতে, কোটে, টাইর মধ্যে এমনকি যন্ত্রপাতিতে এসব জীবাণু থাকে।
কিন্তু দাড়ির কি অবস্থা? গবেষকেরা বিষ্মিত হয়েছেন যে দাড়িওয়ালা ব্যক্তির চেয়ে ক্লিন শেভ করা ব্যক্তির মুখমণ্ডল অস্বস্তিকর কিছু বহন করতে দেখে। ক্লিন শেভ করা ব্যক্তিরা তাদের গালে তিন গুণের চেয়ে বেশি মেথিসিলিন রেজিস্ট্যান্ট স্ট্যাপস অরিয়াস (এমআরএসএ) প্রজাতির জীবাণু বহন করেন। মেথিসিলিন রেজিস্ট্যান্ট স্ট্যাপস অরিয়াস হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত জীবাণু। তাহলে কি হচ্ছে? গবেষকেরা সুপারিশ করেছেন যে দাড়ি শেভ করা হলে ত্বকের খুবই ক্ষুদ্র (মাইক্রো) অংশ কেটে যায় এবং এই অংশটুকুতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়, বেড়ে উঠে।
গবেষকেরা দাঁড়ি নিয়ে যুক্তি সঙ্গত একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে দাঁড়ি ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মাইক্রোবায়োলজিস্ট ড. এ্যাডাম রবার্টসের কাছে গবেষকেরা দাড়ি শোষণযুক্ত যন্ত্রের সাহায্যে কিছু অংশ পাঠিয়েছিলেন। ড. এ্যাডাম দাড়ি থেকে প্রাপ্ত ত্বকের কেটে যাওয়া অংশের মাইক্রোবস থেকে ১০০’র বেশি ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করেন। এর মধ্যে একটি ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে যা আমাদের ইনটেস্টাইনে (পাকস্থলির নিচে ছোট অংশ-ক্ষদ্রান্ত্র) পাওয়া যায়। এ্যাডাম জানান যে ব্যাকটেরিয়াটি মল থেকে এসেছে মনে করার কোনো কারণ নেই। দাঁড়িতে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার প্রাপ্তি খুবই স্বাভাবিক এবং এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
খুবই মজার ব্যাপার হলো দাড়িতে যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে তা অন্য ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। ব্যাকটেরিয়াকে আমাদের শত্রু হিসেবে ধরা হলেও এগুলো সেরকম নয়। দাড়ির মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজেদের সংখ্যা কমিয়ে থাকে। এরা সেখানে খাদ্য, রিসোর্স ও স্পেসের (নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য জায়গা) জন্য লড়াই করে।
এ্যাডাম বলেন, দাঁড়ির মধ্যে থাকা মাইক্রোবস টক্সিন উৎপাদন করে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করছে। এ্যাডাম দাড়ির ওই নমুনায় স্টেফাইলোকক্সাস এপিডারমিস প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার ঘাতক খুঁজে পেয়েছেন। এ্যাডাম গবেষণাগারে ওষুধ প্রতিরোধী কিছু ই-কোলির বিরুদ্ধে পরীক্ষা করলে দেখতে পান দাড়ির এইসব স্টেফাইলোকক্কাস এপিডারমিস ই-কোলির প্রজাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে প্রচুর পরিমাণে।
উল্লেখ্য ওষুধ প্রতিরোধি জীবানু প্রতি বছর বিশ্বে সাত লাখ মানুষকে হত্যা করে। ২০৫০ সালে এটা এক কোটিতে উন্নীত হবে। যেখানে গত ৩০ বছরে বিশ্বে নতুন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের জন্য আবিস্কার হয়নি। এ্যাডাম দাঁড়ি থেকে প্রাপ্ত এসব মাইক্রোবসকে মাউথওয়াশ ও টুথপেস্টে যোগ করতে চান। এটা মুখের এসিড উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করবে।