ঢাকা ০১:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় বাগদার ঘেরে মড়ক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৩:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৩৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার জালিয়াখালি গ্রামের চিংড়িচাষি রাকিবুল ইসলাম শেখ। এবার তিনি ৭ বিঘা ও ২ বিঘা জমির দুটি ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। গত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ঘেরে রেণু পোনা ছাড়েন তিনি। কিন্তু এপ্রিল মাসের প্রথম দিক থেকে ঘেরের চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। এভাবে চিংড়ি মরে যাওয়ার কারণ জানা নেই তার। একই অবস্থা বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালি গ্রামের শাহাদাত হোসেনের। তিন বিঘা আয়তনের ঘেরে এবার ২৩ হাজার টাকার রেণু পোনা ছেড়েছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ চিংড়ি মরে ভেসে উঠেছে। তাই পোনার জন্য খরচ করা টাকাই তুলতে পারছেন না তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার ৬ উপজেলায় বাগদা চিংড়ির অধিকাংশ ঘেরেই মড়ক লেগেছে। এতে অধিকাংশ চাষিই লোকসানের মুখে পড়েছেন। অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। চাষিরা বলছেন, ভাইরাসের কারণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। তবে মৎস্য বিভাগের দাবি, ঘেরের গভীরতা কম হওয়া ও গরমে পানির অক্সিজেন কমে যাওয়ায় এ অবস্থা হচ্ছে।

জেলা মৎস্য অফিস জানায়, খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা ও রূপসা উপজেলায় বাগদা চিংড়ি ঘের রয়েছে মোট ২৪ হাজার ৮২৫টি। যার আয়তন ৫৪ হাজার ২৯৯ হেক্টর। রূপসা উপজেলায় মড়ক কিছুটা কম হলেও অন্য উপজেলাগুলোয় চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে ব্যাপকহারে মারা যাচ্ছে চিংড়ি।

বটিয়াঘাটার সুরখালি গ্রামের চিংড়িচাষি আজাদ হোসেন বলেন, তাদের এলাকায় কয়েকশ’ ঘের রয়েছে। বেশিরভাগ ঘেরের বাগদা চিংড়ি মারা গেছে। ঘেরে জাল টেনে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক বছর ধরে গরমের সময় মাছ মারা যাচ্ছে। এ বছর এ হার বেশি। ডুমুরিয়ার জালিয়াখালি গ্রামের মাহাবুবুর রহমান শেখ বলেন, তার ঘেরের সব মাছ মারা গেছে। পরে যে আবার মাছ ছাড়বেন সে পুঁজিও নেই। চিংড়ি ঘেরে মড়ক লাগায় তারা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, চলতি মাসের প্রথম থেকে অব্যাহতভাবে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ঘেরে আসেননি বা খোঁজখবরও নেননি।

কয়রা সংবাদদাতা জানান, কয়রা উপজেলারও অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। উপজেলার মেঘারাইট গ্রামের আবু সাইদ সরদার, জয়পুর গ্রামের জামির খাঁ ছাড়াও অন্য চিংড়িচাষিরা জানান, মৌসুমের মাঝামাঝি

সময়ে ঘের থেকে যে চিংড়ি পাওয়া যায় তাতে

বিনিয়োগের বেশিরভাগ টাকাই উঠে আসে। এ বছর মাছ মরে যাওয়ায় তাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে।

কয়রা উপজেলা চিংড়িচাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বিশ্বাস বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে মড়কের কারণে মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কম। মাছের আড়তগুলোতে গতবারের তুলনায় মাছ উঠছে অর্ধেক। তিনি চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার দাবি জানান। কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলাউদ্দিন

হোসেন বলেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ঘেরের পানি ও মাটিতে প্রভাব পড়েছে। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। ঘের তৈরির সময় চাষিরা মাটির সঠিক পরিচর্যা করেন না। নিয়মিত প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ না করাসহ বিভিন্ন কারণে মাছ মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে চিংড়িচাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ছাইদ সাংবাদিককে বলেন, চিংড়ি মারা যাওয়ার কারণ ভাইরাস নয়। ঘেরে পানির গভীরতা থাকা প্রয়োজন ৩-৪ ফুট। বেশিরভাগ ঘের গরমে শুকিয়ে গেছে। সেখানে মাত্র এক-দেড় ফুট পানি আছে। প্রচণ্ড গরমে পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়াসহ অক্সিজেন কমে গেছে। এ কারণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত ঘের পরিদর্শন ও চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

খুলনায় বাগদার ঘেরে মড়ক

আপডেট টাইম : ০৬:০৩:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার জালিয়াখালি গ্রামের চিংড়িচাষি রাকিবুল ইসলাম শেখ। এবার তিনি ৭ বিঘা ও ২ বিঘা জমির দুটি ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। গত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ঘেরে রেণু পোনা ছাড়েন তিনি। কিন্তু এপ্রিল মাসের প্রথম দিক থেকে ঘেরের চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। এভাবে চিংড়ি মরে যাওয়ার কারণ জানা নেই তার। একই অবস্থা বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালি গ্রামের শাহাদাত হোসেনের। তিন বিঘা আয়তনের ঘেরে এবার ২৩ হাজার টাকার রেণু পোনা ছেড়েছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ চিংড়ি মরে ভেসে উঠেছে। তাই পোনার জন্য খরচ করা টাকাই তুলতে পারছেন না তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার ৬ উপজেলায় বাগদা চিংড়ির অধিকাংশ ঘেরেই মড়ক লেগেছে। এতে অধিকাংশ চাষিই লোকসানের মুখে পড়েছেন। অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। চাষিরা বলছেন, ভাইরাসের কারণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। তবে মৎস্য বিভাগের দাবি, ঘেরের গভীরতা কম হওয়া ও গরমে পানির অক্সিজেন কমে যাওয়ায় এ অবস্থা হচ্ছে।

জেলা মৎস্য অফিস জানায়, খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা ও রূপসা উপজেলায় বাগদা চিংড়ি ঘের রয়েছে মোট ২৪ হাজার ৮২৫টি। যার আয়তন ৫৪ হাজার ২৯৯ হেক্টর। রূপসা উপজেলায় মড়ক কিছুটা কম হলেও অন্য উপজেলাগুলোয় চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে ব্যাপকহারে মারা যাচ্ছে চিংড়ি।

বটিয়াঘাটার সুরখালি গ্রামের চিংড়িচাষি আজাদ হোসেন বলেন, তাদের এলাকায় কয়েকশ’ ঘের রয়েছে। বেশিরভাগ ঘেরের বাগদা চিংড়ি মারা গেছে। ঘেরে জাল টেনে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক বছর ধরে গরমের সময় মাছ মারা যাচ্ছে। এ বছর এ হার বেশি। ডুমুরিয়ার জালিয়াখালি গ্রামের মাহাবুবুর রহমান শেখ বলেন, তার ঘেরের সব মাছ মারা গেছে। পরে যে আবার মাছ ছাড়বেন সে পুঁজিও নেই। চিংড়ি ঘেরে মড়ক লাগায় তারা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, চলতি মাসের প্রথম থেকে অব্যাহতভাবে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ঘেরে আসেননি বা খোঁজখবরও নেননি।

কয়রা সংবাদদাতা জানান, কয়রা উপজেলারও অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। উপজেলার মেঘারাইট গ্রামের আবু সাইদ সরদার, জয়পুর গ্রামের জামির খাঁ ছাড়াও অন্য চিংড়িচাষিরা জানান, মৌসুমের মাঝামাঝি

সময়ে ঘের থেকে যে চিংড়ি পাওয়া যায় তাতে

বিনিয়োগের বেশিরভাগ টাকাই উঠে আসে। এ বছর মাছ মরে যাওয়ায় তাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে।

কয়রা উপজেলা চিংড়িচাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বিশ্বাস বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে মড়কের কারণে মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কম। মাছের আড়তগুলোতে গতবারের তুলনায় মাছ উঠছে অর্ধেক। তিনি চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার দাবি জানান। কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলাউদ্দিন

হোসেন বলেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ঘেরের পানি ও মাটিতে প্রভাব পড়েছে। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। ঘের তৈরির সময় চাষিরা মাটির সঠিক পরিচর্যা করেন না। নিয়মিত প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ না করাসহ বিভিন্ন কারণে মাছ মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে চিংড়িচাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ছাইদ সাংবাদিককে বলেন, চিংড়ি মারা যাওয়ার কারণ ভাইরাস নয়। ঘেরে পানির গভীরতা থাকা প্রয়োজন ৩-৪ ফুট। বেশিরভাগ ঘের গরমে শুকিয়ে গেছে। সেখানে মাত্র এক-দেড় ফুট পানি আছে। প্রচণ্ড গরমে পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়াসহ অক্সিজেন কমে গেছে। এ কারণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত ঘের পরিদর্শন ও চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন।