বাংলাদেশ জলসীমায় রাজত্ব করছে ভারতীয় জেলেরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘সাগরের বিশাল জলরাশির সাথে জীবন-মরণ যুদ্ধ করি প্রতিনিয়ত। কখনো ট্রলারসহ ডুবে যাই আবার কখনো ট্রলারের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে ভাসতে ভাসতে চলে যাই গভীর থেকে গভীর সাগরে। তখন নির্ভর করি ভাগ্য বিধাতার ওপরে। কখনো ভাসা ধরে ভাসতে ভাসতে উঠে যাই সুন্দরবন।

আবার ক্লান্ত শরীর নিয়ে হিংস্র বাঘের তাড়া খেয়ে উঠে যাই গাছের মগ ডালে। সব কিছু মানতে পারি। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতেই পারে। তবে মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগে পড়লে সেটা কেমন লাগবে। আপনার রিজিক কেউ নষ্ট করলে আপনি তাকে ছেড়ে দেবেন? না দেবেন না। কিন্তু আমরা ছেড়ে দিয়ে আসি। কারণ বাঘ-বিড়ালের লড়াইয়ে কে জিতবে সবার জানা, বিশাল আকৃতির ট্রলিং জাহাজ ও বড় ফিশিং বোর্ডের সাথে আমাদের ছোট ছোট ট্রলার পারবে কিভাবে। নির্যাতিত হয়ে যখন কোষ্টগার্ড বা নৌবাহিনীর কাছে বলতে যাই তখন আবার ধমক খেয়ে চলে আসি।

একবুক কষ্ট নিয়ে সাংবাদিককে কথাগুলো বললেন বরগুনার মাছের খাল এলাকার এফ বি জয়নাল ট্রলারের মাঝি বাবুল মিরা (৬৬)।

তিনি অভিযোগ করে প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিন শত শত ভারতীয় ট্রলিং জাহাজ ও বড় ফিশিং ট্রলার প্রবেশ করে বাংলাদেশ জল সীমায়। রাজত্ব করে ইলিশ শিকার করে। গভীর সমুদ্রে ছোট ফাঁসের জাল টেনে মাছ ধরে তারা। আর যদি গভীর সমুদ্রে মাছ কম থাকে তবে চলে আসে ২৫ থেকে ৩০ বামের মধ্যে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাবুল মিরা বলেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় ইলিশ শিকার করছিলেন তারা। এমন সময় ভারতীয় একটি অত্যাধুনিক ট্রলিং জাহাজ এসে ট্রলারটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে তাদের জাল-দড়ি টেনে নিয়ে যায়। পরে তারা ঘটনাটি কোষ্টগার্ডকে জানালে তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

ভারতীয় ট্রলারের অত্যাচারের ব্যাপারে অতিষ্ঠ বাংলাদেশের সব জেলেরা। পাথরঘাটার বিভিন্ন ট্রলারের একাধিক জেলেদের সাথে কথা বললে তারা সাংবাদিককে জানান, ভারতের কাকদ্বীপের জেলেরা যখন ভারতীয় জল সীমায় মাছ কম পায় তখনই প্রবেশ করে বাংলাদেশ জল সীমায়। আর তাদের ট্রলিং জাহাজে রয়েছে মাছের স্থান নির্ণয়কারী যন্ত্রসহ অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। তাই তাদের সাথে কোন ভাবেই পেরে উঠছেন না তারা।

এদিকে, বরগুনার তালতলীর খবির মোল্লার মালিকানাধীন এফ বি নাজমা-১ ট্রলারের একাধিক জেলেরা সাংবাদিককে বলেন, সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তীসব এলাকায় সব থেকে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। তাই ওই সব এলাকায় বাংলাদেশি জেলেরা মাছ বেশি ধরেন। তবে থেমে নেই ভারতীয় জেলেরাও।

তারা ট্রলিং জাহাজ ও অত্যাধুনিক ট্রলার দিয়ে বাংলাদেশি জেলেদের ট্রলার সরিয়ে জাল-দড়ি টেনে নিয়ে যায়। তবে যদি তারা প্রতিবাদ করে তবে তাদের ট্রলারে পাথর নিক্ষেপ করে ভারতীয়রা।

এ বিষয়ে বরগুনা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী চ জানান, ভারতের কাকদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের জল সীমায় খুব সহজেই অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করেন ভারতীয় জেলেরা। ফেয়ারওয়ে বয়ার কোষ্টগার্ড ও নৌবাহিনী কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়না।

যদি কখনো বাংলাদেশের জেলেরা ভারতের জলসীমায় ঢুকে যায়, তবে বছরের পর বছর জেল খাটতে হয় তাদের। কিন্তু বাংলাদেশের জেলেদের জোর দাবিতে যদি কখনো কোন ভারতীয় জেলেদের আটক করে কোষ্টগার্ড বা নৌবাহিনী, তবে তাদের পুশ ব্যাক করে দেয় তারা। তবে এ নিয়ে বরগুনার জেলেরা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ অনেক আন্দোলন পর্যন্ত করেছেন তারা। স্মারকলিপিও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরাবর। তবে সমাধান হয়নি সমস্যার।

এ বিষয়ে বরগুনার পাথরঘাটা কোষ্টগার্ডের সাব লেঃ কমান্ডার মো. জহিরুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, বরগুনার আওতায় কোনো ভারতীয় জেলে প্রবেশ করতে দেননা তারা। আর সব সময় সজাগ দৃষ্টিতে থাকেন তারা। তবে ভারতীয় জেলেদের প্রবেশ করার সহজ পথ ফেয়ারওয়ে বয়া। সেখান থেকে ভারতীয় জেলেরা প্রবেশ করলে তাদের কিছু করার নাই। কারণ সেটা কোষ্টগার্ড পশ্চিম জোনের আওতায়।

তবে এ ব্যাপারে কোষ্টগার্ড পশ্চিম জোনের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা লে. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মুঠোফোনে সাংবাদিককে বলেন, বাংলাদেশের জেলেদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ভারতীয় কোন জেলে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেন না। উল্টো বাংলাদেশের জেলেরা বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করেন।

তবে এর আগে একাধিক বার ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় নৌবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ঘটনাগুলোও কী মিথ্যে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে ভুলক্রমে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করেন তবে তাদের আটকের পর পুশ ব্যাক করা হয়।

ইলিশ মৌসুম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ উপকূলে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ। বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার প্রায় ১৫০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ ধরছে ভারতীয় জেলেরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর