ঢাকা ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের মিঠাপানি বদলে দিতে পারে ভাটির অর্থনীতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪১:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৫৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের হাওরে মিঠাপানি ১২ মাসই পাওয়া যায়। এই পানি প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বাজারজাত করে মোটা অংকের রাজস্ব প্রাপ্তির বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সেদিকে কারো নজর নেই। ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের প্রাক্তন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তার বদলির পর বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। তিনি হাওরের মিঠাপানি ব্যবহার করতে মন্ত্রণালয়কে ডিও লেটার দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় ও জাতীয় উন্নয়নেও হাওর বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সুধীজন।

জানা গেছে, ২০১৭ সনের আগস্ট মাসে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হাওরের মিঠা পানি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিক্রি করার জন্য একটি ডিও লেটার দিয়েছিলেন। ওই লেটারে জানানো হয়েছিল, সুনামগঞ্জের হাওর-জলাশয়ে সারা বছরই প্রাকৃতিকভাবে নীলাভ স্বচ্ছ মিঠাপানি সংরক্ষিত হয়। এটি প্রক্রিয়াজাত করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

কৃষকরা জানান, জেলার অন্যতম বৃহত্তম নীলজলের টাঙ্গুয়ার হাওরে ১২ মাসই পানি থাকে। জেলায় দেড় হাজারেরও অধিক জলমহালও বছরব্যাপী পানি ধরে রাখে। তাছাড়া মওসুমে প্রায় ১২-১৫ বিলিয়ন কোটি মিটার কিউ পানি ধারণ করে জেলার সকল হাওর। প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত শেষে একই নিয়মে শুকিয়েও যায়। এই মিঠাপানি বাজারজাতের সম্ভাবনা থাকলেও বাজারজাতের কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছেনা। পানি সংরক্ষণের কোন উদ্যোগও নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে হাওরের পানি বিক্রি করেই এই অঞ্চলের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। সুধীজন সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে এ বিষয়ে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, বৈচিত্র্যময় হাওর নানা সম্পদেই ভরপুর। একমাত্র ধান উৎপাদন ছাড়া হাওরের অন্য সম্পদ এখনো ফেলনা রয়েছে। এই সম্পদ কাজে লাগানোর বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।

হাওরের প্রাণবৈচিত্র্য গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, সম্পদ ও রূপবৈচিত্র্যে অনন্য হাওর। কিন্তু হাওরের রূপ দেখানোর তেমন উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, মিঠাপানির আধার হাওর নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন ভাবনাও নেই। রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে হাওরের পানি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বাজারজাত করতে পারে। এই পানি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ আছে। স্থানীয় বিরাট জনগোষ্ঠীকেও কাজে লাগানোর একটা সুযোগ তৈরি হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, হাওরের মিঠাপানিও বিশাল সম্পদ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এখানে শুধু ধানই উৎপাদন হয় এবং প্রাকৃতিকভাবে কিছু মাছ উৎপাদন ছাড়া আর কিছুই হয়না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরের সুস্বাদু মিঠাপানিও একটি সম্পদ। এই সম্পদ কাজে লাগানোর সম্ভাবনা আছে। হাওরে বর্ষা শেষে যে পানি দেখা যায় তা খুবই স্বচ্ছ। কেবল সামান্য প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বাজারজাত করলে অর্থনীতিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে হাওর।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরের মিঠাপানি বদলে দিতে পারে ভাটির অর্থনীতি

আপডেট টাইম : ১২:৪১:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের হাওরে মিঠাপানি ১২ মাসই পাওয়া যায়। এই পানি প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বাজারজাত করে মোটা অংকের রাজস্ব প্রাপ্তির বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সেদিকে কারো নজর নেই। ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের প্রাক্তন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তার বদলির পর বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। তিনি হাওরের মিঠাপানি ব্যবহার করতে মন্ত্রণালয়কে ডিও লেটার দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় ও জাতীয় উন্নয়নেও হাওর বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সুধীজন।

জানা গেছে, ২০১৭ সনের আগস্ট মাসে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হাওরের মিঠা পানি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিক্রি করার জন্য একটি ডিও লেটার দিয়েছিলেন। ওই লেটারে জানানো হয়েছিল, সুনামগঞ্জের হাওর-জলাশয়ে সারা বছরই প্রাকৃতিকভাবে নীলাভ স্বচ্ছ মিঠাপানি সংরক্ষিত হয়। এটি প্রক্রিয়াজাত করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

কৃষকরা জানান, জেলার অন্যতম বৃহত্তম নীলজলের টাঙ্গুয়ার হাওরে ১২ মাসই পানি থাকে। জেলায় দেড় হাজারেরও অধিক জলমহালও বছরব্যাপী পানি ধরে রাখে। তাছাড়া মওসুমে প্রায় ১২-১৫ বিলিয়ন কোটি মিটার কিউ পানি ধারণ করে জেলার সকল হাওর। প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত শেষে একই নিয়মে শুকিয়েও যায়। এই মিঠাপানি বাজারজাতের সম্ভাবনা থাকলেও বাজারজাতের কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছেনা। পানি সংরক্ষণের কোন উদ্যোগও নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে হাওরের পানি বিক্রি করেই এই অঞ্চলের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। সুধীজন সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকে এ বিষয়ে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, বৈচিত্র্যময় হাওর নানা সম্পদেই ভরপুর। একমাত্র ধান উৎপাদন ছাড়া হাওরের অন্য সম্পদ এখনো ফেলনা রয়েছে। এই সম্পদ কাজে লাগানোর বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।

হাওরের প্রাণবৈচিত্র্য গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, সম্পদ ও রূপবৈচিত্র্যে অনন্য হাওর। কিন্তু হাওরের রূপ দেখানোর তেমন উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, মিঠাপানির আধার হাওর নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন ভাবনাও নেই। রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে হাওরের পানি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বাজারজাত করতে পারে। এই পানি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ আছে। স্থানীয় বিরাট জনগোষ্ঠীকেও কাজে লাগানোর একটা সুযোগ তৈরি হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, হাওরের মিঠাপানিও বিশাল সম্পদ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এখানে শুধু ধানই উৎপাদন হয় এবং প্রাকৃতিকভাবে কিছু মাছ উৎপাদন ছাড়া আর কিছুই হয়না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরের সুস্বাদু মিঠাপানিও একটি সম্পদ। এই সম্পদ কাজে লাগানোর সম্ভাবনা আছে। হাওরে বর্ষা শেষে যে পানি দেখা যায় তা খুবই স্বচ্ছ। কেবল সামান্য প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বাজারজাত করলে অর্থনীতিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে হাওর।