হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় ২৮ জাতের ধান অগ্রিম চাষ করে সর্বনাশ হয়ে গেছে কৃষকদের। উপজেলার চার ভাগের এক ভাগ জমিতে শীষে ধান নয়, কেবল চিটা হয়েছে। শাল্লার একাধিক কৃষক বলেছেন, ‘এই ধানের ফলন যা হবার কথা ছিল, এর চেয়ে ২৫ ভাগ কম হবে।’
উপজেলার কান্দিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাত্তার মিয়া বলেন, ‘শাল্লা উপজেলায় ১৬ লাখ কৃষক পরিবার রয়েছে। গত বছর ২৮ ধান চাষাবাদ করে কৃষকরা বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এই ধান একটু লম্বা হয়, হাওরের নীচু জমিতে করলে ডুবরায় (বৃষ্টিতে) কিছু জলাবদ্ধতা হলেও ধানের মাথা ভেসে থাকে। কৃষি কর্মকর্তারা ২৮ ধান করতে তাগিদ দিয়েছিলেন। এজন্য নীচু এলাকার কৃষকদের সবাই আগ্রহ নিয়ে কম বেশি ২৮ জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন।
একরে ৫০-৬০ মণ ধান পেয়েছেন। এবার একরে হয়েছে ৫ থেকে ১৫ মণ। দুটি কারণে কৃষকদের আশায় সর্বনাশ ঘটেছে। একটি হচ্ছে ২৮ জাতের ধানের বীজ বপন করতে হয় নভেম্বরের ১৫ তারিখে। এক মাস পর জমিতে চারা রোপণ করতে হয়। এরপর ৫২ থেকে ৫৪ দিন পর গাছে ধান গর্ভ (কাইস তোড়) হয়। এবার হাওরের নীচু জমি থেকেও ১৫ দিন আগে পানি নামায় নভেম্বরের প্রথম দিকেই বীজ বপন শুরু করেন কৃষকরা। আগাম লাগানো ধান গর্ভ হওয়া শুরু হতেই কয়েকদিন এক নাগারে ঠা আবহাওয়া থাকায় গর্ভের ধান নষ্ট হয়ে গেছে।’ তিনি জানালেন, এ কারণে শাল্লায় এবার গড়ে উৎপাদন যা হবার কথা ছিল, এর চাইতে ২৫ ভাগ কম হবে।
উপজেলার ছায়ার হাওরপাড়ের নাইন্দা গ্রামের কৃষক প্রবোধ কুমার সরকার বলেন, ‘আগুল (আগে) চাষাবাদ করায় আর ফাল্গুনের ২০ তারিখের পরে হঠাৎ কইরা ঠান্ডা পড়ায় এমন অবস্থা অইছে (হইছে)।’ উপজেলার ভান্ডা বিলের পাড়ের গ্রাম নারায়ণপুরের অভিনাষ দাস বলেন, ‘আমার ১০ (৩ একর ১ কেয়ার) কেয়ার জমি আছে, এরমধ্যে
৪ কেয়ার (১ একর ১ কেয়ার) ২৮ ধান করেছি, ধানের এমন অবস্থা এই ধান কাটবো কী-না চিন্তা করছি।’ তিনি জানালেন, নারায়নপুর গ্রামে ৩০০ জনের মতো কৃষক রয়েছে, এরমধ্যে ১০০ জন কৃষক এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’
আনন্দপুরের রাজেশ দাস বলেন,‘১৬ কেয়ার (৫ একর এক কেয়ার) জমির মধ্যে ৬ কেয়ার ( ২ একর) ২৮ জাতের ধান করছিলাম। ২ কেয়ার কাটছিলাম, পরিবারের অন্যরা আর না কাটতে বলতেছে। যদি পানি আসতে বিলম্ব হয়, তাহলে পারলে গরুর ঘাসের জন্য কেটে আনবো।’
ছায়ার হাওরপাড়ের সিমের কান্দার কৃষক মো. জামাল মিয়া বললেন, ‘শাল্লার নীচু জমিতে ২৮ জাতের ধানের মাথা নুয়েই পড়েনি। ধান হলে গাছের মাথা ধানের ভারে নুয়ে পড়ে। ছায়ার হাওরপাড়ের কৃষ্ণপুরের একজন কৃষক ১০ কেয়ার ২৮ জাতের ধান করেছিলেন। জমিতে ধানের অবস্থা দেখে তিনি অসুস্থ হয়ে পরে মারাই গেছেন। আমি দরিদ্র মানুষ ২ কেয়ার জমি করেছিলাম, ধানের অবস্থা দেখে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
জেলার অন্যান্য উপজেলার কোন কোন হাওরেও ২৮ ধানে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে শাল্লা উপজেলার মতো নয়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরপাড়ের কৃষক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘২৮ ধানে চিটা হয়েছে দেখার হাওরেও। তবে আগে ধান ওঠায় এবং ক্ষতির পরিমাণ কম হওয়ায়, কৃষকরা এই নিয়ে বেশি চিন্তিত নয়।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বশির আহমদ বলেন, ‘মওসুমের আগে ধানের বীজ বপন করায় এবং কাইসতোড় বের হবার সময় তাপমাত্রা কম থাকায় শাল্লাসহ হাওরাঞ্চলের আরও কিছু এলাকায় ২৮ জাতের ধানে এমন ক্ষতি হয়েছে।’
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বললেন, ‘এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে যত ধানের জাত আবিস্কার হয়েছে। এরমধ্যে ২৮ ও ২৯ ’এর চেয়ে ভালো কোন জাত আবিস্কার হয়নি। কৃষকদের নিজেদের প্রয়োজনেই এই ধান চাষাবাদ করতে হবে। তবে কৃষিবিদদের নির্দেশনা মানতে হবে।