ঢাকা ০২:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেয়ারার বাগান করে মাসে আয় দেড় লাখ টাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:১৩:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৩১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পেয়ারার বাগান করে মাসে আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। কথাটি শুনে অবাস্তব মনে হলেও সেটিকে বাস্তবতায় পরিণত করেছেন মানিকগঞ্জের পেয়ারা চাষি নূর মোহাম্মদ। তিনি মাত্র দেড় একর জমিতে পেয়ারার বাগান করে মাসে আয় করছেন দেড় লক্ষাধিক টাকা। অল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা হওয়ায় পেয়ারার বাগানে খুব লাভবান হয়েছেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ওই চাষি। কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নজুমুদ্দিনের ছেলে নূর মোহাম্মদ। স্ত্রী, ছোট দুই মেয়ে ও বড় ছেলে নূর মোহাম্মদকে নিয়ে নজুমুদ্দিনের পরিবার। কৃষি প্রধান পরিবারে জন্ম নেওয়া নূর মোহাম্মদের পড়াশুনা করেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর থেকেই বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হন তিনি।

শুরু থেকেই ধান চাষে আগ্রহী নজুমুদ্দিন। তবে নূর মোহাম্মদের আগ্রহ সবজি চাষে। অল্প পরিসরে নিজেদের কিছু জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। সবজি চাষে লাভবান হলেও সবজির পাশাপাশি কিছু জমিতে বরই’র চাষের পরিকল্পনা করেন তিনি। এরপর বরই চাষ বাদ দিয়ে শুরু করেন পেয়ারা চাষের।

অল্প খরচে অধিক মুনাফা হওয়ায় দিন দিন বাড়তে থাকে পেয়ারা চাষের জমি। পাঁচ বছর ধরে তিনি পেয়ারার বাগান করে যাচ্ছেন। এখন আলাদা দুইটি প্লটে মোট সাড়ে তিনশো ডেসিমেল জমিতে ১৫০০ পেয়ারার গাছ রয়েছে তার। অন্যান্য ফসলের সঙ্গে পেয়ারার চাষে বেশ লাভবান তিনি।

১৫০ ডেসিমেল জমির পেয়ারা গাছ থেকে পুরোদমে ফল পেলেও নতুন করে লাগানো ২০০ ডেসিমেল জমির পেয়ারা গাছে ফলন শুরু হয়েছে মাত্র। শুরুতে ঝিনাইদহ থেকে প্রতিটি পেয়ারা গাছের চারা ৫০ টাকা ধরে ক্রয় করে মোট ৫৫০টি চারা লাগান তিনি। তবে এখন আর চারা ক্রয় না করে পেয়ারা গাছ থেকে কলমের মাধ্যমে নিজেই চারা তৈরি করেন তিনি। পেয়ারা চারা লাগানোর পর প্রায় ছয়মাস পর থেকেই ফল দেওয়া শুরু হয়। একটানা ছয় বছর পেয়ারা পাওয়া যায়। বিকেলে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পারমত্ত মৌজার পেয়ারা বাগানে আলাপ হয় নূর মোহাম্মদের সঙ্গে।

তিনি জানান, পেয়ারা গাছের চারা লাগানোর পর দেখাশুনা করতে তেমন আর খরচের প্রয়োজন হয় না। অল্প পরিমাণে সার, কীটনাশক ও ভিটামিন প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফল আসার আগে বাইসাইকেলের পরিত্যক্ত টায়ার ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছগুলোকে আগলে রাখতে হয়। আর পোকামাকড়ের হাত থেকে পেয়ারা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে পেয়ারা মুড়িয়ে দিতে হয়।

প্রতিটি পেয়ারা গাছ থেকে গড়ে প্রতিবছর ৩৫ কেজি করে পেয়ারা সংগ্রহ করা যায় অনায়াসে। প্রতিকেজি পেয়ারার পাইকারী বাজারদর ৭৫ টাকা। আর খুচরা বাজারদর প্রতিকেজি ১শ টাকা। পাইকারী-খুচরা উভয়ভাবেই পেয়ারা বিক্রি করেন তিনি।

নূর মোহাম্মদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিবছর একটি পেয়ারা গাছ থেকে পাইকারী বাজারদর হিসাবে দুই হাজার ৬২৫ টাকার পেয়ারা সংগ্রহ করেন তিনি। এভাবে দেড় জমির ৭শ পেয়ারা গাছ থেকে প্রতিবছর প্রায় ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫শ টাকার পেয়ারা সংগ্রহ করেন তিনি। পেয়ারা গাছের চারা লাগানোর পর প্রতিবছর দেড় এক একর (১৫০ ডেসিমেল) জমির পেয়ারা বাগানে তার খরচ হয় ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা।

বাকী প্রায় ১৮ লাখ টাকা ওই পেয়ারা জমি থেকে তার বার্ষিক আয়। যার মাসিক আয় হয় প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো। তবে বাকি দুই একর জমি থেকে পুরোদমে পেয়ারা পাওয়া শুরু হলে তার বার্ষিক আয় দ্বিগুণ হবে। এজন্য তাকে আরও প্রায় মাস দুয়েক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পেয়ারার বাগান ছাড়াও ১০ বিঘা জমিতে লেবু বাগান রয়েছে তার। এছাড়াও ধান ও সবজির চাষাবাদ করেন তিনি। রয়েছে নিজস্ব পুকুরও।

নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, পেয়ারার বাগানে বেশ লাভবান হলেও মাঝে মধ্যে কিছু পেয়ারার গাছ মরে যায়। এতে করে নতুন চারা লাগাতে হয়। কয়েকবার কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া না পাওয়ার কারণে এখন আর কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেন না তিনি। তবে মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তা পেলে চাষাবাদে আরও এগিয়ে যাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন নূর মোহাম্মদ।

মানিকগঞ্জ কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান চৌধুরী জানান, জেলা সদর উপজেলার পেয়ারা চাষি নূর মোহাম্মদের পেয়ারা চাষাবাদ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই তাকে কৃষি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি। তথ্যসূত্র:বাংলানিউজ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পেয়ারার বাগান করে মাসে আয় দেড় লাখ টাকা

আপডেট টাইম : ০৮:১৩:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পেয়ারার বাগান করে মাসে আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। কথাটি শুনে অবাস্তব মনে হলেও সেটিকে বাস্তবতায় পরিণত করেছেন মানিকগঞ্জের পেয়ারা চাষি নূর মোহাম্মদ। তিনি মাত্র দেড় একর জমিতে পেয়ারার বাগান করে মাসে আয় করছেন দেড় লক্ষাধিক টাকা। অল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা হওয়ায় পেয়ারার বাগানে খুব লাভবান হয়েছেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ওই চাষি। কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নজুমুদ্দিনের ছেলে নূর মোহাম্মদ। স্ত্রী, ছোট দুই মেয়ে ও বড় ছেলে নূর মোহাম্মদকে নিয়ে নজুমুদ্দিনের পরিবার। কৃষি প্রধান পরিবারে জন্ম নেওয়া নূর মোহাম্মদের পড়াশুনা করেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর থেকেই বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হন তিনি।

শুরু থেকেই ধান চাষে আগ্রহী নজুমুদ্দিন। তবে নূর মোহাম্মদের আগ্রহ সবজি চাষে। অল্প পরিসরে নিজেদের কিছু জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। সবজি চাষে লাভবান হলেও সবজির পাশাপাশি কিছু জমিতে বরই’র চাষের পরিকল্পনা করেন তিনি। এরপর বরই চাষ বাদ দিয়ে শুরু করেন পেয়ারা চাষের।

অল্প খরচে অধিক মুনাফা হওয়ায় দিন দিন বাড়তে থাকে পেয়ারা চাষের জমি। পাঁচ বছর ধরে তিনি পেয়ারার বাগান করে যাচ্ছেন। এখন আলাদা দুইটি প্লটে মোট সাড়ে তিনশো ডেসিমেল জমিতে ১৫০০ পেয়ারার গাছ রয়েছে তার। অন্যান্য ফসলের সঙ্গে পেয়ারার চাষে বেশ লাভবান তিনি।

১৫০ ডেসিমেল জমির পেয়ারা গাছ থেকে পুরোদমে ফল পেলেও নতুন করে লাগানো ২০০ ডেসিমেল জমির পেয়ারা গাছে ফলন শুরু হয়েছে মাত্র। শুরুতে ঝিনাইদহ থেকে প্রতিটি পেয়ারা গাছের চারা ৫০ টাকা ধরে ক্রয় করে মোট ৫৫০টি চারা লাগান তিনি। তবে এখন আর চারা ক্রয় না করে পেয়ারা গাছ থেকে কলমের মাধ্যমে নিজেই চারা তৈরি করেন তিনি। পেয়ারা চারা লাগানোর পর প্রায় ছয়মাস পর থেকেই ফল দেওয়া শুরু হয়। একটানা ছয় বছর পেয়ারা পাওয়া যায়। বিকেলে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পারমত্ত মৌজার পেয়ারা বাগানে আলাপ হয় নূর মোহাম্মদের সঙ্গে।

তিনি জানান, পেয়ারা গাছের চারা লাগানোর পর দেখাশুনা করতে তেমন আর খরচের প্রয়োজন হয় না। অল্প পরিমাণে সার, কীটনাশক ও ভিটামিন প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফল আসার আগে বাইসাইকেলের পরিত্যক্ত টায়ার ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছগুলোকে আগলে রাখতে হয়। আর পোকামাকড়ের হাত থেকে পেয়ারা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে পেয়ারা মুড়িয়ে দিতে হয়।

প্রতিটি পেয়ারা গাছ থেকে গড়ে প্রতিবছর ৩৫ কেজি করে পেয়ারা সংগ্রহ করা যায় অনায়াসে। প্রতিকেজি পেয়ারার পাইকারী বাজারদর ৭৫ টাকা। আর খুচরা বাজারদর প্রতিকেজি ১শ টাকা। পাইকারী-খুচরা উভয়ভাবেই পেয়ারা বিক্রি করেন তিনি।

নূর মোহাম্মদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিবছর একটি পেয়ারা গাছ থেকে পাইকারী বাজারদর হিসাবে দুই হাজার ৬২৫ টাকার পেয়ারা সংগ্রহ করেন তিনি। এভাবে দেড় জমির ৭শ পেয়ারা গাছ থেকে প্রতিবছর প্রায় ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫শ টাকার পেয়ারা সংগ্রহ করেন তিনি। পেয়ারা গাছের চারা লাগানোর পর প্রতিবছর দেড় এক একর (১৫০ ডেসিমেল) জমির পেয়ারা বাগানে তার খরচ হয় ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা।

বাকী প্রায় ১৮ লাখ টাকা ওই পেয়ারা জমি থেকে তার বার্ষিক আয়। যার মাসিক আয় হয় প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো। তবে বাকি দুই একর জমি থেকে পুরোদমে পেয়ারা পাওয়া শুরু হলে তার বার্ষিক আয় দ্বিগুণ হবে। এজন্য তাকে আরও প্রায় মাস দুয়েক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পেয়ারার বাগান ছাড়াও ১০ বিঘা জমিতে লেবু বাগান রয়েছে তার। এছাড়াও ধান ও সবজির চাষাবাদ করেন তিনি। রয়েছে নিজস্ব পুকুরও।

নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, পেয়ারার বাগানে বেশ লাভবান হলেও মাঝে মধ্যে কিছু পেয়ারার গাছ মরে যায়। এতে করে নতুন চারা লাগাতে হয়। কয়েকবার কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া না পাওয়ার কারণে এখন আর কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেন না তিনি। তবে মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তা পেলে চাষাবাদে আরও এগিয়ে যাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন নূর মোহাম্মদ।

মানিকগঞ্জ কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান চৌধুরী জানান, জেলা সদর উপজেলার পেয়ারা চাষি নূর মোহাম্মদের পেয়ারা চাষাবাদ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই তাকে কৃষি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি। তথ্যসূত্র:বাংলানিউজ।