শিক্ষিকা থেকে যেভাবে ব্যাবসায়ী বনে গেলেন ড. রুবানা হক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শিক্ষিকা থেকে যেভাবে–ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক তাঁর সফলতার পেছনে সবসময় যে নামটি নিতেন, তিনি তার স্ত্রী রুবানা হক। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি হলেন রুবানা হক। পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠনটির প্রথম নারী সভাপতি মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা। বিজিএমইএতে আগামী দুই বছর নেতৃত্ব দেবেন তিনি।

জন্ম ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪। পড়াশুনা করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল, হলিক্রস কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরুষোত্তম লালের প্রকাশনা সংস্থা ও রাইটারস ওয়ার্কশপের ওপর ‘রাইটারস ওয়ার্কশপ: এজেন্ট অব চেঞ্জ’ বিষয়ে পিএইচডি শেষ করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল নিয়ে এমএ শেষ করেন।

মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা রুবানা ১৫ বছর বয়স থেকে টিউশনি করে নিজের পড়াশুনার খরচ চালাতেন। মেধাবী এই মেয়েটি এসএসসি, এইচএসসি- দুবারই বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছিলেন।

পড়ালেখার দিকেই ছিল রুবানা হকের আগ্রহ। ব্যাবসার প্রতি কখনোই আগ্রহ ছিলো না। স্বামী আনিসুল হকও কখনো চাইতেন না তিনি ব্যাবসায় আসুক। রুবানা হক তখন একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াতেন। পড়ানোটা উপভোগ করতেন। আনিসুল হকের ব্যবসাও ভালোই চলছিল। কিন্তু অতিরিক্ত কাজের চাপে আনিসুল হকের উচ্চ রক্তচাপ কমছিল না। দুজনে একদিন চিকিৎসকের কাছে গেলেন। চিকিৎসক বললেন, আনিস ভাই ভাবিকে কিন্তু ব্যবসার কিছু দায়িত্ব দিতে পারেন। তাতে চাপটা কমতো। ভালো বুদ্ধি দিলাম ফ্রিতে। তখন রুবানা হক তা হেসে উড়িয়ে দিলেন। কিন্ত কথাটি বেশ মনে ধরল আনিসুল হকের। বাড়িতে ফিরেই রুবানার সাহায্য চাইলেন আনিসুল হক। সে সময় আনিসুল হকের ব্যবসায়িক অংশীদারদের কারও স্ত্রী ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন না। তারা কখনো অফিসেও আসতেন না। রুবানা শুরুতে মতিঝিলের অফিসে গিয়ে বসে থাকতেন, টুকটাক কাজ করতেন। ধীরে ধীরে ব্যবসার কাজে যুক্ত হলেন। বর্তমানে ২১ টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।

কিন্তু এই ব্যাবসায়ী হওয়ার আগে স্বামীকে শর্ত দিয়েছিলেন, যতই ব্যবসা দেখি না কেন, আমি কিন্তু পিএইচডি করবই। সেটা তিনি এই ব্যবসা সামলানোর সঙ্গেই করেছিলেন। তাকে কেউ ড. রুবানা বললে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হন। তবে রুবানার সবচেয়ে বড় যে গুন, ব্যবসায়িক বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এমনকি আনিসুল হকও অবাক হয়ে বলতেন, ‘এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নাও কী করে?’ প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীদের কাছে তিনি মায়ের মতো। কার কী প্রয়োজন, কার কোথায় সমস্যা, সেগুলো তার চেয়ে বেশি কেউ জানে না। এমনকি পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যাতে তাঁরা সময়মতো বেতন পান, সেটাও গুরুত্ব দিয়ে তিনি নিজে বিবেচনা করেন। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এভাবেই চলছে। একের পর এক ব্যবসায়িক সফলতা আসতে থাকল, একসময় অংশীদারি ব্যবসা থেকে বেরিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়লেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বত্বাধিকারী তখন তাঁরাই। ছেলে নাভিদও এখন মা রুবানা হকের সঙ্গে ব্যবসা দেখভাল করছেন। সন্তানরাও যোগ্য হয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।

রুবানা হক একজন সৃজনশীল মানুষও। কবিতা লেখেন, প্রবন্ধ লেখেন, কবিতা লিখে পেয়েছেন সার্ক সাহিত্য পুরস্কার। সময় পেলে মোমবাতি তৈরী করেন। এটা তার বিশেষ শখ সেই ছোটবেলা থেকে। কবিতায় বুঁদ হয়ে থাকা খানিকক্ষণ। সন্তান সংসার সামলায়। নাভিদ, ওয়ামিক, তানিশা তিন সন্তান নিয়ে সংসার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর