হাওর বার্তা ডেস্কঃ চৈত্রের প্রায় শেষ। অনুকূল আবহাওয়ায় বৈশাখের শুরুতেই পাঁকা ধান কেটে ঘরে তুলার অপেক্ষায় ‘হাওরের উঠান’ খ্যাত দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সাধারণ কৃষকেরা। ইতোমধ্যে কৃষাণ কৃষাণীরা মিলে তৈরি করেছেন ধান শুকানোর জন্য খলা বা চাতাল। আবার কোনো কোনো কৃষক ধান কাটার শ্রমিকের সাথে কথা করে রেখেছেন পাঁকা ধান কাটার জন্য।
প্রথম দিকে বৃষ্টির জন্য কৃষকের মাঝে হাহাকার থাকলেও পরে সে চিন্তা কেটে গিয়ে নিয়মিত বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তিতে দিন কাটিয়েছেন কৃষকেরা। অতিবৃষ্টি আর শীলাবৃষ্টির জন্য কিছুটা শংকা থাকলেও ধান পাঁকতে শুরু করায় সব শংকা কেটে যাচ্ছে তাদের। বুধবার দেখার হাওর ঘুরে দেখা মিলে ধান হলদে হওয়ার দৃশ্য। এমন দৃশ্য শুধু দেখার হাওরে নয় উপজেলার সাংহাইর হাওর, পাখিমারার হাওর, নাগডরা, জামখলার হাওর, বীরগাঁও-এর দক্ষিণের হাওরসহ ছোট বড় সকল হাওরেই এমন অবস্থা। ধান পাকার জন্য কৃষকের অপেক্ষা। এনিয়ে খুশি কৃষকেরা। প্রতিদিনই একবার জমিতে গিয়ে ধান দেখে আসেন কোনো কোনো কৃষক।
দেখার হাওরের কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, অকাল বন্যায় তাদের স্বপ্নের ফসল তলিয়ে যাবে সে ভয় তারা করছেন না। তাদের এখন একটাই ভয়, যদি অতিবৃষ্টি আর শীলাবৃষ্টি হয় তাহলেই তাদের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। হাওরে বাঁধের কারণে বন্যার কবল থেকে ধান এখন নিরাপদ। মঙ্গলবার দিনের বেশিরভাগ সময় ছিলো বৃষ্টি। সাথে শীলাবৃষ্টিও। বাড়ির উঠান, বাজার আর কিছু কিছু গ্রামের দিকে পাথর পড়লেও হাওরের দিকে খুব একটা দেখা যায়নি। ধানের ক্ষতি হয়নি। বুধবার থেকে রোদেরদেখা মিলেছে। তাই কৃষকরা অপেক্ষা করছেন কবে ধান পাঁকবে। আর পাঁকা ধান ঘরে তুলে স্বস্তিতে বছর কাটাবেন তারা।
ধান কাটার অপেক্ষার পাশাপাশি বৈশাখ মাস নিয়ে তাদের নানান প্রস্তুতিও সেরে নিচ্ছেন। প্রস্তুত করছেন সকল বৈশাখী জিনিসপত্র। এদিকে, উপজেলার দেখার হাওরে কেউ কেউ ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন। আবার অনেক কৃষকেই আশংকা প্রকাশ করছেন যে, ধান কাটার ধুম পড়লে শ্রমিকের অভাব পড়বে। দেখার হাওরের সাধারণ কৃষক মুজিব মিয়া। নিজের জমি চাষ করার পাশাপাশি চাষ করেন অন্যের জমিও। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ‘আমি সাধারণ কৃষক। নিজের জমিনের লগে মাইনষের জমিনও করি। ফয়লা ডরাইছলাম, যদি মেঘ দেইন না আল্লায়? মেঘ অইছে পরে পাত্তরের ডর আছিল। অনে তো ধান মুটামুটি পাঁকিগেছে। আর ডরাইরাম না। তবুও আসমানি গজবের ডর মনো আছেই। এখন আল্লা ভরসা।’
বীরগাঁওয়ের কৃষক মিজান মিয়া জানান, প্রথম দিকে পোঁকার ভয়, খরার ভয় এবং অতি বৃষ্টির ভয় থাকলেও এখন আর সে ভয় নাই। ধান পাঁকতে শুরু করেছে। অপেক্ষা করছি। ধান পাঁকলেই কয়েকদিনের মধ্যে কাটা ধরাকে পারবো।’