হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে বসবাস করছে এক কোটি ৯০ লাখেরও বেশি শিশু। তারা ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকিতে রয়েছে। অনেকে আবার বাস্তুচ্যুত হয়ে পরিবারের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে। সেখানে তারা আবার মুখোমুখি হচ্ছে নতুন ঝুঁকির। আজ শুক্রবার (৪ এপ্রিল) জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। ঝুঁকি মোকাবিলায় আরও বেশি করে উদ্যোগী হওয়ার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সুনির্দিষ্ট সময় পর পর প্রাকৃতিক ধারাবাহিকতায় বদলে যায় জলবায়ু। মানুষ সৃষ্ট কারণেই এই স্বাভাবিক বদলের ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়েছে,বিশ্ব বহুদিন থেকে এক আকস্মিক পরিবর্তনের মুখোমুখি। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, শিল্পবিপ্লব পরবর্তী যুগে উন্নত দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রাকে ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। উষ্ণায়নের কারণে গলছে হিমবাহের বরফ,উত্তপ্ত হচ্ছে সমুদ্র, বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ,ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক ঋতুচক্র। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি,স্থানচ্যুত হচ্ছে মানু্ষ। অভিবাসী কিংবা শরণার্থীতে রূপান্তরিত হচ্ছে তারা। এরইমধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে,জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই সামনের কাতারে।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নতুন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশি শিশুদের কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১ কোটি ৯৪ লাখ শিশুর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু নদী ভাঙনের এলাকা কিংবা এর কাছাকাছি থাকে। ৪৫ লাখ শিশুর বসবাস উপকূলীয় এলাকায়, সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের হুমকিতে থাকতে হয় তাদেরকে। তাছাড়া খরার ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৩০ লাখ শিশু। এসব ঝুঁকির কারণে গ্রাম এলাকার মানুষেরা শহরের দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হচ্ছে। আর সেখানে যাওয়ার পর নতুন ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে শিশুদেরকে। তাহলো: জোরপূর্বক শ্রম কিংবা বাল্য বিয়ের ঝুঁকি।
ইউনিসেফের গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সিমন ইনগ্রাম। তার ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের শহরগুলোতে প্রায় ৬০ লাখ জলবায়ু উদ্বাস্তু রয়েছে এবং এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘বন্যাজনিত বিপর্যয়গুলো চরম পর্যায়ের হয়ে থাকে এবং প্রায় প্রতি বছরই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশে সর্বশেষ বড় ধরনের বন্যা হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই বছর একের পর এক বন্যায় ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশের কারণে গর্ভবতী নারীরাও বড় ধরনের হুমকিতে রয়েছেন। এতে সেখানকার বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে লবণাক্ত পানি মিশে যাচ্ছে এবং গর্ভবতী নারীরা প্রিএক্লেমশিয়া ও হাপারটেনশনসহ নানা ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০১৯-এ নবম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ওই তালিকা অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ওই সময়ের মধ্যে তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউনিসেফ বলছে, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য হুমকি থেকে দরিদ্রদেরকে বাঁচাতে এরইমধ্যে অনেক কিছু করেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের হুমকিতে থাকা শিশুদের সুনির্দিষ্ট চাহিদার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। বন্যাপ্রবণ এলাকার স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে আরও দায়িত্বশীল করে তোলা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের ওপর যেন কোনও শোষণ-নিপীড়ন না হয় তা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংস্থাটির গবেষক ইনগ্রাম।