উঁচু এলাকার কৃষকরা বাদাম চাষে স্বাবলম্বী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জেলায় গতবারের চেয়ে এবার বাদামের চাষ বেশি হয়েছে। বাদাম চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। একই জমিতে বছরে দুইবার বাদাম চাষ করা সম্ভব। জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার পাহাড়ী এলাকায় (অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা) এবার বাদামের চাষ বেশি হয়েছে।

সুনামগঞ্জের সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা এবং তাহিরপুর উপজেলায় বাদাম চাষের উপযোগি মাটি রয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত বছর বাদামের চাষ হয়েছিল সাড়ে ৩ শত হেক্টর জমিতে। এবার চাষ হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। বছরে ২ বার একই জমিতে বাদামের চাষ করা যায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সলুকাবাদ ইউনিয়নের বেড়েরগাঁও গ্রামের একাধিক চাষী জানান, ১ কেয়ার জমিতে বাদামের চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা। বাদাম উৎপাদন হয় প্রায় ২৮ হাজার টাকার। একই জমিতে বছরে দুইবার চাষ হয় বাদামের। পরিমাণ মতো বৃষ্টি হলে বাদামের ফলন খুবই ভাল হয়। গতবারের চেয়ে এবার চাষীরা বেশি করে বাদামের চাষ করেছেন।

জেলায় দুই প্রকারের বাদামের চাষ হচ্ছে। একটি চিনাবাদাম, অপরটি দেশীয় বাদাম। দেশীয় বাদামের ২-৩টি দানা বা বীজ অথবা গোটা থাকে, চিনাবাদামের থাকে ৪-৬ টি দানা বা বীজ অথবা গোটা। তবে দেশীয় বাদাম চাষের উৎপাদন ভাল হয় বলে জানান একাধিক চাষী।

চাষীরা জানান, বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষের দিকে বাদাম রোপন করলে আশিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ মাসে অর্থ্যাৎ চার মাসে বাদামের গাছ ও বাদাম বড় হয়। তখন বাদাম ঘরে তোলে নিতে পারেন তাঁরা। বাদাম তোলার পর একই জমিতে পুনরায় বাদামের চারা রোপন করা হয়। পৌষ মাসে বাদাম গাছের চারা রোপন করলে ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ শেষে জ্যৈষ্ঠের প্রথম দিকে পুনরায় দ্বিতীয় ধাপের বাদাম ঘরে তোলতে পারেন চাষীরা। এভাবে বছরে দুইবার বাদামের উৎপাদন হয়।

সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মুসলিমপুর, সৈয়দপুর, কৃষ্ণনগর, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের চৌমুহনী, ঝরঝরিয়া, গোদীগাঁও, সাহেবনগর, ইসলামপুর, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের জিনারপুর, মহাকুড়া, ভাদেরটেক, বেড়েরগাঁও, মথুরকান্দি, বাঘবেড়, গুলগাঁও, ধনপুর ইউনিয়নের সিলডোয়ার, কাইতকোনা, চিনাকান্দি, দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন ও পলাশ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাবে বাদাম চাষ করেছেন চাষীরা। এছাড়া তাহিরপুর উপজেলার বিন্নাকুলি, লাউড়েরগড়, বাদাঘাট, ঘাগটিয়া, বালিজুরী ইত্যাদি এলাকায় বাদামের চাষ হয়েছে।

সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ঝরঝরিয়া গ্রামের রহিম আলী বলেন,‘বাদামের চাষ উপযোগি এখানকার মাটি। তাই বাদামের ফলন ও ভাল হয়।’ তাহিরপুর উপজেলার পুরানলাউড় গ্রামের শহীদুল মিয়া বলেন,‘বাদাম চাষ লাভজনক। তাই প্রতিবছর আমি বাদামের চাষ করি। এলাকার অনেক চাষী বাদাম চাষ করেন।’
বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের বেড়েরগাঁও গ্রামের চাষী স্বাধীন মিয়া বলেন,‘প্রতি বছর ১ কেয়ার জমিতে আমরা বাদামের চাষ করি। এবার করেছি আড়াই কেয়ার জমিতে। বাদামের ফলন ভাল হয়। একই জমিতে বছরে ২ বার বাদাম চাষ করা যায়।’

একই গ্রামের শামীম আহমদ বলেন,‘বাদামের চাষে যে খরচ হয়। খরচ বাদে লাভ হয় অনেক বেশি। এবার আমি চাষ করেছি ৫ কেয়ার জমিতে। প্রতি কেয়ারে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা করে। প্রতি কেয়ারের বাদাম বিক্রি হবে প্রায় ২৮ হাজার টাকা করে। গত বারের চেয়ে এবার ২ কেয়ার বেশি করেছি বাদাম চাষ।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. বশির আহমদ বলেন,‘বাদাম চাষ খুবই লাভজনক। বছরে দুইবার একই জমিতে বাদামের চাষ করা যায়।

জেলার সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলায় বাদাম উৎপাদন উপযোগি মাটি রয়েছে। এসব উপজেলার মাটি ভাল থাকায় এখানে ভুট্টা চাষ, তরমুজ চাষও ভাল হচ্ছে। গত বছর বাদামের চাষ হয়েছিল সাড়ে ৩শ’ হেক্টর জমিতে। এবার হয়েছে ১ হাজার ৪ শত ৫০ হেক্টর জমিতে। এবার বাদাম চাষে চাষীদের আগ্রহ বেড়েছে। এসব অঞ্চলের কৃষকরা ধানের বদলে বাদাম ও তরমুজ চাষে আগ্রহী বেশি।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর