হাওর বার্তা ডেস্কঃ যথাসময়ে খননের অভাবে বছরের পর বছর ধরে পলি জমে নাব্যতা হারাচ্ছে ভৈরবের মেঘনা ও ব্রক্ষ্মপুত্রসহ শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি, কালিনদী, কোদালকাটি নদী। এসব নদীতে এখন প্রায় পানি শূন্য হয়ে বন্ধ রয়েছে নৌযান-চলাচল। বিগত বছর ছয়েক আগেও এসব নদীর দু’পাড়ে হাজার হাজার কৃষক নদীর পানি দিয়ে শত শত হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করতো। ছোট-বড় নানান জাতের মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই নদীগুলো। কালের স্বাক্ষী হয়ে কোন রকম টিকে থাকা নদীগুলো এখন ভরা যৌবন হারিয়ে যেন পরিণত হয়েছে মরাখালে। দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন না করায় নাব্যতা কমে গিয়ে নদী গুলো এখন প্রায় অস্তিত্ব বিলীনের পথে। পুনরায় খননের মধ্য দিয়ে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরে আনা সম্ভব বলে ধারনা করছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দারা।
নদী বন্দর হিসেবে খ্যাত ভৈরবের পরিচিত আর আগের মতো নেই। এক সময় এসকল নদী বন্দরকে ঘিরে যে প্রাণচাঞ্চল্যতা বিরাজ করতো বর্তমানে সেই নদীবন্দরে চলছে ইরি-বুরো ধানের আবাদ। বিগত দিনে খরা স্রোতা এ নদীগুলো দিয়ে ৫শ মনি নৌকা, লঞ্চ আর ট্রলারের চলাচল থাকলেও বর্তমানে ড্রিজিংয়ের অভাবে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ভৈরবের এই পাচঁটি জনউপকারি নদী।
অতীতে নদীগুলোকে ঘীরে নদীরপাড়ে গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ ও হাট-বাজার। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ওইসব হাট-বাজারে ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে লক্ষাধীক মানুষ খুঁজে পেয়েছিল জীবন-জীবিকার পথ। তবে বর্তমানে যথসময়ে খননের অভাবে শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলোতে মাছ ধরতে না পেরে পেট বাচাতে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় জেলেরাও। আর এভাবেই নদীর পাড়ের জমজমাট হাট-বাজারের সেই চিত্র পাল্টে স্থবির হয়ে পড়েছে নদী কেন্দ্রীক লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা। ফলে ভৈরবের মানচিত্র থেকে দিন দিন মুছে যাচ্ছে একসময়ের লাখো মানুষের জীবিকা নির্ভর এসব নদীর নাম। ছোট-বড় নানান প্রজাতির দেশী-বিদেশী মাছের প্রধান উৎস এসব নদী এখন যেন কেবলই কালের স্বাক্ষী!
অপরদিকে বিভিন্ন নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ইতোপূর্বে স্থাপিত সেচ যন্ত্রগুলোও এখন পানির সঙ্কটে পড়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট সেচ যন্ত্রের আওতাধীন বোরো জমি গুলোও পানির অভাবে প্রতি বছর এ সময়ে শুকিয়ে যায়। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের বুরো আবাদ।
তবে প্রতীকার সরুপ ব্রক্ষ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের অধীনে গত বছর ভৈরবে খনন কাজ শুরুকরে কটিয়াদি পর্যন্ত ব্রক্ষ্মপুত্রের নদের ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করা হয়। তবে বর্তমানে ভৈরব জগন্নাথপুর, লক্ষীপুর, গাজীরটেক ও কালিকাপ্রসাদ এলাকায় এই নদ প্রায় পানিশূন্য। আর তাই কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এদিকে খননের অভাবে সুবিশাল মেঘনা নদীর আশুগঞ্জ ও ভৈরবের মাঝামাঝিতে প্রায় তিন কিলোমিটার নদী জুড়ে চড় জেগে উঠেছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে চড়সোনারামপুর। বর্তমানে জনবসতির পাশাপাশি, স্কুল-কলেজসহ হাট-বাজারে জমজমাট এই চড়।
অন্যদিকে মেঘনা নদীর ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দীপুর থেকে প্রবাহিত হয়েছে কালিনদী। নদীটির সাদেকপুর, রসুলপুর, মানিকদি অংশে বালুর চড় জমেছে। আবার ওই চড়ের কিছু অংশে বুরোর আবাদ হয়েছে। বলতে গেলে শত বছরের কালিনদী এখন প্রায় মৃত।
একই চিত্র ভৈরবের শীতলপাটি নদীর। উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের মহেশপুর থেকে মেঘনা নদীর মোহনায় শুরু লুন্দিয়া, বধুনগর, জাফরনগর, শ্রীনগর ও মাধপপুর পর্যন্ত এক সময়ের সুগভীর শীতলপাটি নদীর দশ কিলোমিটার জুড়ে এখন শুধুই হাটু পানি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ওই অঞ্চলের তিনটি বাজারের পন্য পরিবহন। এছাড়াও বছরের পর বছর ধরে বন্ধ রয়েছে শীতলপাটি নদীর দুইপাড়ের সেচ কাজ।
এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী কোদালকাটি নদী ছিল যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের অন্যতম প্রধান নদীপথ। এই নদীটিই ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলি, অষ্ট্রগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনার হাওর অঞ্চলের মানুষদের পন্য পরিবহন ও যাত্রী চলাচলের বিগত দিনের নিরাপদ নদীপথ এটি। যথাসময়ে নদী খনন না করায় কালের বিবর্তনে কোদালকাটি নদীতে এখন চাষাবাদ করছেন কৃষকরা।
যথাযথ কর্তৃপক্ষ পুনরায় নদীগুলোতে খননের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি জমিতে সেচ কাজেরও সুবিধা সৃষ্টি করে বহুলোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবেন এমনটাই প্রত্যাশা নদীর পাড়ের মানুষের।
এই বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভৈরবের কালিনদী, কোদালকাটি ও শীতলপাটি নদীর নাব্যতা যাতে বজায় থাকে এব্যাপারে অচীরেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ভৈরব অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহনের পরিদশর্ক মো: শাহ আলম জানান, বড় দুটি নদী মেঘনা ও ব্রক্ষ্মপুত্র নদ খননের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। অতি শীঘ্রই নদী খননের জন্যে প্রতিনিধিদল পর্যবেক্ষণে আসবেন।