রাজনীতিতে মিমি-নুসরাত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজনীতির সাথে শোবিজের সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। এবার ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও দেখা যাচ্ছে শোবিজ তারকাদের সরব উপস্থিতি। তবে সবচেয়ে বড় চমক দেখালেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী!

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এমন ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের পার্টির নেত্রী মমতা। সেখানে প্রার্থী হিসেবে নাম আছে টলিউডের এই মুহূর্তে জনপ্রিয় দুই নায়িকা নুসরাত জাহান ও মিমি চক্রবর্তী।

টলিগঞ্জের এই দুই গ্ল্যামার কন্যা এবার লোকসভা নির্বাচনে অংশ নিবেন। আসন্ন লোকসভা নিবার্চনে প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল। আর তাতেই ঠাঁই পেয়েছেন এই দুই নায়িকা। যাদবপুর থেকে তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন মিমি চক্রবর্তী। অন্যদিকে বসিরহাট থেকে প্রার্থী হচ্ছেন নুসরাত জাহান।

এর আগে বশিরহাট থেকে নির্বাচণ করেছে ইদ্রিশ আলি। সেখানে এবার তার জনপ্রিয়তা নিয়ে কিছুটা সন্দিহান ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেকারণেই সেখানে তারকা চমক দিতে নুসরাত জাহানকে প্রার্থী করেছে দলটি। এছাড়াও যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম জিতেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে গতবারের প্রার্থী ছিলেন সুগত বসু। পেশাগত ব্যস্ততার কারণেই তিনি এবার দাঁড়াতে পারছেন না বলে সেখানে প্রার্থী হলেন মিমি।

এ বছরও ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে থাকছেন গতবারের প্রার্থী অভিনেতা দেব। কেন্দ্র বদল হয়েছে মুনমুন সেনের। বাঁকুড়ার পরিবর্তে এবার তিনি আসানসোল কেন্দ্র থেকে লড়বেন। এছাড়াও ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে এ বছর উমা সোরেনের পরবর্তে প্রার্থী হলেন জনপ্রিয় আদিবাসী নায়িকা বীর বাহা সোরেন।

মমতার চমক মিমি-নুসরাত, বাদ সন্ধ্যা-তাপস : লোকসভার প্রার্থী তালিকায় কমবে তারকা, বাড়বে রাজনৈতিক মুখের সংখ্যা— তৃণমূল সূত্রে ইঙ্গিত মিলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। সে পূর্বাভাস খানিকটা মিলল। তৃণমূলের যে প্রার্থী তালিকা মঙ্গলবার ঘোষিত হল, তা থেকে স্পষ্ট যে, অন্তত দুই তারকা সাংসদের উপরে এ বার আর ভরসা রাখেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক তারকাকে জেতা আসন থেকে পাঠিয়ে দিয়েছেন হারা কেন্দ্রে। তবে তারকা-তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরাত জাহান।

উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে অভিনেত্রী নুসরাত জাহানকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। বসিরহাটের বিদায়ী সাংসদ ইদ্রিস আলিকে টিকিট দেওয়া হয়নি। বসিরহাট মূলত গ্রামীণ এলাকা। সংখ্যালঘু প্রধানও। গ্রামীণ এলাকায় সেলিব্রিটি প্রার্থীদের ঘিরে উন্মাদনা তৈরি হয় অপেক্ষাকৃত বেশি। তার পাশাপাশি নুসরাত সংখ্যালঘু মুখও। ফলে বসিরহাটে নুসরাতের আশু সাফল্য নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।

তবে নুসরাত জাহানের চেয়েও বড় চমক মিমি চক্রবর্তী। নুসরাত যে প্রার্থী হতে পারেন, সে জল্পনা রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল। কিন্তু মিমি চক্রবর্তীর নাম সে ভাবে আলোচনায় আসেনি। যাদবপুরের মতো আসনে সেই মিমিকে প্রার্থী করে বেশ চমকে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের গুরুত্ব ঐতিহাসিক ভাবেই বেশি তৃণমূলের কাছে। ১৯৮৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বার সাংসদ হয়েছিলেন এই যাদবপুর থেকেই। তখন অবশ্য তিনি কংগ্রেসে। কিন্তু তৃণমূল তৈরি হওয়ার পরে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে অর্থাৎ ১৯৯৮ সালেই যাদবপুর তৃণমূলের কৃষ্ণা বসুর দখলে গিয়েছিল। ১৯৯৯ সালেও তাই। ২০০৪ সালে সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর কাছে হারেন কৃষ্ণা। তবে ২০০৯ সালে ফের তৃণমূলের কবীর সুমন এবং ২০১৪ সালে তৃণমূলেরই সুগত বসু যাদবপুর থেকে জিতে সংসদে গিয়েছেন। মিমির মতো তরুণ এবং প্রায় সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কোনও মুখ সেই যাদবপুরে তৃণমূলের প্রার্থী হবেন, এমনটা অনেকেই ভাবতে পারেননি।

মেদিনীপুরের সাংসদ সন্ধ্যা রায় এবং কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল যে বাদ পড়বেন, সে জল্পনা আগে থেকেই ছিল। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে সন্ধ্যা রায়কে পাশে নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান যে, তাঁকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না এবং দল তাঁকে অন্য রকম কাজে লাগাবে। আর তাপস পাল শারীরিক কারণে টিকিট পেলেন না বলে তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে।

মুনমুন সেনের উপরে কি ভরসা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এ প্রশ্ন নিয়ে নানা মত তৃণমূলের অন্দরেই। বাঁকুড়ার বিদায়ী সাংসদ মুনমুন সেন এ বার আর টিকিট পাচ্ছেন না বলে জল্পনা বেশ কিছু দিন ধরেই ছিল। নিজের কেন্দ্রে গত পাঁচ বছরে মুনমুন সেন ঠিক কতটা সময় দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে কোনো কোনো মহলের। শেষ পর্যন্ত বাঁকুড়ায় তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হল রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাম। তবে মুনমুন প্রার্থী তালিকা থেকে বাদও পড়লেন না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে টক্কর নেওয়ার জন্য মুনমুনকে পাঠিয়ে দেওয়া হল আসানসোলে।

ঘাটাল, হাওড়া, বীরভূম এবং বালুরঘাট কেন্দ্রের সেলিব্রিটি সাংসদরা অবশ্য নেত্রীর আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। ঘাটালে দেব, হাওড়ায় প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরভূমে শতাব্দী রায় এবং বালুরঘাটে অর্পিতা ঘোষ এ বারও টিকিট পেলেন।

সব মিলিয়ে তৃণমূলের এ বারের প্রার্থী তালিকায় তারকা বা সেলিব্রিটি মুখের সংখ্যা ৭। গত বার কিন্তু সংখ্যাটা অন্তত ১০ ছিল। সে বার বহরমপুরে প্রার্থী করা হয়েছিল গায়ক ইন্দ্রনীল সেনকে, উত্তর মালদহে প্রার্থী করা হয়েছিল আর এক গায়ক সৌমিত্র রায়কে। আর দার্জিলিঙে প্রার্থী ছিলেন ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়া। এ বার ওই সব আসনে রাজনৈতিক মুখের উপরেই ভরসা রেখেছে তৃণমূল। বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে এককালে অধীরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অনুচর হিসেবে পরিচিত অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিডকে। কান্দি থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হওয়া বিধায়ক ডেভিড এখন রয়েছেন তৃণমূলে। উত্তর মালদহে বিদায়ী সাংসদ মৌসম নূর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন আগেই। সেখানে মৌসমই তৃণমূলের প্রার্থী হলেন। আর দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী করা হল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার টিকিটে দার্জিলিং শহরের সংসদ সদস্য হওয়া অমর সিংহ রাইকে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর