ঢাকা ০৭:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

থমকে আছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০১৯
  • ৪৪৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডিসেম্বরের শুরু থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কোনো শ্রমিক যাচ্ছে না। কিন্তু বাধাহীনভাবে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও চীন থেকে নিয়মিতই শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে দেশটি। বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় এ দেশটিতে ক্রমেই শ্রমবাজার হারাতে বসেছে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এরই মধ্যে বাংলাদেশি ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করেছে মালয়েশিয়া সরকার। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি হাইকমিশন অফিসের স্বেচ্ছাচারিতা ও অবহেলার কারণেই আপাতত শ্রমিক নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। তবে এটা নির্ভর করছে বাংলাদেশ সরকারের ওপর। মালয়েশিয়া সরকার বিশেষ করে দেশটির শ্রমবিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো মন্ত্রী আলোচনার টেবিলে বসলেই শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এতে আরও অন্তত ৫ লাখ লোকের নতুন করে কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ড. মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে নতুন সরকার আসার পর বাংলাদেশে শ্রমিক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে। বাংলাদেশ থেকে একজন শ্রমিক পাঠাতে হলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়। এ নিয়ে মালয়েশিয়া সরকার বিস্ময় প্রকাশ করে। কারা শ্রমিকদের কাছ থেকে এত পরিমাণ টাকা নেয় তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করা হয়। একপর্যায়ে বাংলাদেশি ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দেশটি। তবে মালয়েশিয়া সরকার জানায়, নিয়ম মেনে যে কোনো এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগে আপত্তি নেই তাদের। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান লাবিব ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান রতন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, বাংলাদেশ থেকে ডিসেম্বর থেকে আমরা কোনো শ্রমিক নিয়োগ দিতে পারছি না। এর বড় কোনো কারণ নেই। শুধু বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। এ সুযোগে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান ও চীন থেকে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক আসছে। তাই আমি সরকারকে বলব, অবিলম্বে শ্রমিক নিয়োগের ছোটখাটো বাধাগুলো দূর করুন। এতে আমাদের দেশই আর্থিকভাবে লাভবান হবে। একই সঙ্গে আমি বলব, অবৈধ শ্রমিকদের আইনি সহায়তার জন্য হাইকমিশন অফিসে কিছু আইনজীবী নিয়োগ করা উচিত।’

জানা যায়, কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কয়েকটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী। তিনি জানতে চান, বাংলাদেশ থেকে একজন শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে কত খরচ পড়ে। তারা অকপটে জানান, ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। তখন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের থেকে কেন টাকা নেওয়া হবে। উল্টো শ্রমিকদের বিমানের টিকিট দিয়ে কোম্পানিগুলো নিয়ে আসবে। আইএলও বিধিতেও তো তাই আছে। এ ঘটনায় তিনি হতবাক হন। পরে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীও যান মালয়েশিয়া। তিনি সেখানে গিয়ে মালয়েশিয়ার ওই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বলেন, কত কম খরচে শ্রমিক পাঠানো যায়, এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই। তখন মালয়েশিয়া সরকারের ওই মানবসম্পদ মন্ত্রী বলেন, কম খরচের অর্থ কী? শ্রমিকের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়ারই তো প্রশ্ন আসে না। এতে অনেক কম টাকায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় একাধিক জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কম জানা অল্প শিক্ষিত শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার মতো অন্য কোনো দেশ সুবিধা দিতে পারবে না। একই সঙ্গে এ দেশে আসা শ্রমিকদের পাশে থাকতে হবে হাইকমিশনকে। অন্য দেশের কোনো শ্রমিক গ্রেফতার হলে বা অসুবিধায় পড়লে হাইকমিশন ছুটে আসে। তাদের আইনি সহায়তা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ হাইকমিশন এ ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করে। পারতপক্ষে তারা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায় না।

মালয়েশিয়ায় বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মালয়েশিয়া বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে ঝক্কিঝামেলা শুরু হয়। কর্মে নিয়োগের পরও আই ভিসা না পাওয়া পর্যন্ত কোথাও বেড়াতে গেলেও পুলিশ গ্রেফতার করে। এজন্য প্রথম দিকে কারখানা বা বাসার বাইরে কোথাও যাওয়া যায় না। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজের কোনো অভাব নেই। শুধু সরকার সদিচ্ছা দেখালে এখানে আরও অন্তত ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। তবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য হাইকমিশনে কিছু আইনজীবী নিয়োগ করা উচিত। কর্মক্ষেত্রে বা কোথাও বেরোলেই শ্রমিকদের গ্রেফতার করা হয়। আবার দেখা যায়, ছোটখাটো ভুলে কোনো শ্রমিক অবৈধ হয়ে যায়। তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ থাকে না। আবার কখনো কখনো কোম্পানিগুলো শ্রমিক নিয়োগের নিয়ম মানে না। সে ক্ষেত্রেও হাইকমিশনের নিয়োগ করা আইনজীবী পাশে দাঁড়ালে শ্রমিকরা উপকৃত হবেন। এ ছাড়া শ্রমিক ধরপাকড়ের নামে পুলিশের উৎকোচ আদায়ও বন্ধ হয়ে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

থমকে আছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

আপডেট টাইম : ০৫:৫১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডিসেম্বরের শুরু থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কোনো শ্রমিক যাচ্ছে না। কিন্তু বাধাহীনভাবে ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও চীন থেকে নিয়মিতই শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে দেশটি। বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় এ দেশটিতে ক্রমেই শ্রমবাজার হারাতে বসেছে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এরই মধ্যে বাংলাদেশি ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করেছে মালয়েশিয়া সরকার। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি হাইকমিশন অফিসের স্বেচ্ছাচারিতা ও অবহেলার কারণেই আপাতত শ্রমিক নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। তবে এটা নির্ভর করছে বাংলাদেশ সরকারের ওপর। মালয়েশিয়া সরকার বিশেষ করে দেশটির শ্রমবিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো মন্ত্রী আলোচনার টেবিলে বসলেই শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এতে আরও অন্তত ৫ লাখ লোকের নতুন করে কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ড. মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে নতুন সরকার আসার পর বাংলাদেশে শ্রমিক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে। বাংলাদেশ থেকে একজন শ্রমিক পাঠাতে হলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়। এ নিয়ে মালয়েশিয়া সরকার বিস্ময় প্রকাশ করে। কারা শ্রমিকদের কাছ থেকে এত পরিমাণ টাকা নেয় তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করা হয়। একপর্যায়ে বাংলাদেশি ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দেশটি। তবে মালয়েশিয়া সরকার জানায়, নিয়ম মেনে যে কোনো এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগে আপত্তি নেই তাদের। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান লাবিব ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান রতন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, বাংলাদেশ থেকে ডিসেম্বর থেকে আমরা কোনো শ্রমিক নিয়োগ দিতে পারছি না। এর বড় কোনো কারণ নেই। শুধু বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। এ সুযোগে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান ও চীন থেকে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক আসছে। তাই আমি সরকারকে বলব, অবিলম্বে শ্রমিক নিয়োগের ছোটখাটো বাধাগুলো দূর করুন। এতে আমাদের দেশই আর্থিকভাবে লাভবান হবে। একই সঙ্গে আমি বলব, অবৈধ শ্রমিকদের আইনি সহায়তার জন্য হাইকমিশন অফিসে কিছু আইনজীবী নিয়োগ করা উচিত।’

জানা যায়, কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কয়েকটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী। তিনি জানতে চান, বাংলাদেশ থেকে একজন শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে কত খরচ পড়ে। তারা অকপটে জানান, ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। তখন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের থেকে কেন টাকা নেওয়া হবে। উল্টো শ্রমিকদের বিমানের টিকিট দিয়ে কোম্পানিগুলো নিয়ে আসবে। আইএলও বিধিতেও তো তাই আছে। এ ঘটনায় তিনি হতবাক হন। পরে বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীও যান মালয়েশিয়া। তিনি সেখানে গিয়ে মালয়েশিয়ার ওই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বলেন, কত কম খরচে শ্রমিক পাঠানো যায়, এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই। তখন মালয়েশিয়া সরকারের ওই মানবসম্পদ মন্ত্রী বলেন, কম খরচের অর্থ কী? শ্রমিকের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়ারই তো প্রশ্ন আসে না। এতে অনেক কম টাকায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় একাধিক জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কম জানা অল্প শিক্ষিত শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার মতো অন্য কোনো দেশ সুবিধা দিতে পারবে না। একই সঙ্গে এ দেশে আসা শ্রমিকদের পাশে থাকতে হবে হাইকমিশনকে। অন্য দেশের কোনো শ্রমিক গ্রেফতার হলে বা অসুবিধায় পড়লে হাইকমিশন ছুটে আসে। তাদের আইনি সহায়তা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ হাইকমিশন এ ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করে। পারতপক্ষে তারা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায় না।

মালয়েশিয়ায় বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মালয়েশিয়া বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে ঝক্কিঝামেলা শুরু হয়। কর্মে নিয়োগের পরও আই ভিসা না পাওয়া পর্যন্ত কোথাও বেড়াতে গেলেও পুলিশ গ্রেফতার করে। এজন্য প্রথম দিকে কারখানা বা বাসার বাইরে কোথাও যাওয়া যায় না। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজের কোনো অভাব নেই। শুধু সরকার সদিচ্ছা দেখালে এখানে আরও অন্তত ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। তবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য হাইকমিশনে কিছু আইনজীবী নিয়োগ করা উচিত। কর্মক্ষেত্রে বা কোথাও বেরোলেই শ্রমিকদের গ্রেফতার করা হয়। আবার দেখা যায়, ছোটখাটো ভুলে কোনো শ্রমিক অবৈধ হয়ে যায়। তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ থাকে না। আবার কখনো কখনো কোম্পানিগুলো শ্রমিক নিয়োগের নিয়ম মানে না। সে ক্ষেত্রেও হাইকমিশনের নিয়োগ করা আইনজীবী পাশে দাঁড়ালে শ্রমিকরা উপকৃত হবেন। এ ছাড়া শ্রমিক ধরপাকড়ের নামে পুলিশের উৎকোচ আদায়ও বন্ধ হয়ে যাবে।